ঠিকানাবিহীন নারায়ণগঞ্জ বিএনপি
দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর ধরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির স্থায়ী কোনো ঠিকানা তথা কার্যালয় নেই। অস্থায়ী কিংবা নামকাওয়াস্তে ব্যক্তিগত কার্যালয় দিয়েই চলছে তাদের কার্যক্রম। সেইসঙ্গে মূল দলের কার্যালয় না থাকায় অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোও অস্থায়ী অবস্থায়ই সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আসলেও নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কোনো স্থায়ী কার্যালয় করতে পারেননি দলের সেই সময়ের এমপি-মন্ত্রীরা। ২০০৯ সালে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতৃত্বে আসার পর তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থেকে দোকান হিসেবে ইজারা নিয়ে ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় বিএনপির একটি কার্যালয় করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ওই কার্যালয়েই বিএনপির কার্যক্রম চলে। তৎকালীন দায়িত্বে থাকা নেতারা সেই কার্যালয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। সেইসঙ্গে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকতো কার্যালয়টি।
আরও পড়ুন: খালেদাকে বিদেশে নিতে নতুন করে আবেদন চাওয়া অমানবিক
দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কোনো কার্যালয় নেই। এর ফলে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এসব বিবেচনা করে সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকায় অস্থায়ীভাবে জেলা বিএনপির কার্যালয় করা হয়েছে। তবে স্থায়ীভাবে কার্যালয় করার জন্য আমরা নারায়ণগঞ্জে জায়গা দেখছি। কিন্তু এই মুহূর্তে জেলা বিএনপির স্থায়ী কার্যালয় করা অনেকটাই অসম্ভব বিষয়।
পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কার্যালয় নিয়ে মামলায় হেরে যাওয়ার পর ২০১৭ সালের ১০ মার্চ বিএনপির কার্যালয় ভবন ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নতুন করে আর কার্যালয় নিতে পারেনি। এরইমধ্যে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বিদায় নেন। জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্বে আসেন সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। একইভাবে মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আসেন সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম এবং সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল।
আরও পড়ুন: বিএনপির অনেকেই পালানোর তালিকায় আছে: তথ্যমন্ত্রী
তাদের এই কমিটির মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কার্যালয়ের বিষয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা পরিলক্ষিত হয়নি। মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শহরের চারারগোপ এলাকার ফ্রেন্ডস মার্কেটে তার নিজ বাসার একটি ফ্লোরকে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। তবে জেলা বিএনপির শহরে বসার মতো কোনো কার্যালয় ছিল না।
এদিকে, কার্যালয় না থাকায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরমুখী হয়ে পড়েন। দলীয় কোনো কর্মসূচিতেই তাদের রাজপথে দেখা মিলতো না। এরপর নেতাকর্মীদের রাজপথে ফেরাতে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেন। আর এতে আহ্বায়ক করা হয় অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে এবং সদস্য সচিব করা হয় অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে।
অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘর থেকে বের হয়ে রাজপথে ফেরেন। কিন্তু অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের নেতৃত্ব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আরও পড়ুন: যারা মিটমাটের কথা বলে তারা দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়: ইনু
পরে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর ওই কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সদস্য সচিব করা হয় গোলাম ফারুক খোকনকে। সেইসঙ্গে চলতি বছরের ১৭ জুন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি পদে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম ফারুক খোকনের নাম ঘোষণা করা হয়।
এর আগে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট মো. শাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব হিসেবে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ পদে থাকা নেতারা কেউই দলীয় স্থায়ী কার্যালয় নিয়ে কোনো কথা বলেন না। সবাই যার যার মতো করে নিজেদের অফিস কিংবা চেম্বারকেই দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। তাই তাদের স্থায়ী কোনো ঠিকানার আর দেখা মিলছে না।
আরও পড়ুন: ভোটাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোয় গণতন্ত্রকামী বিশ্বকে ধন্যবাদ: দুদু
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেন না। সেখানে কার্যালয়ে কীভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করবো? আপাতত আমরা একটি অস্থায়ী কার্যালয় করেছি। সেখান থেকে দলীয় কর্মসূচি পরিচালিত হয়। আমরা চেষ্টা করছি স্থায়ী কার্যালয় করার জন্য।
নারায়ণগঞ্জের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। এখানে সরকারের অনেক চাপ। যার কারণে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কার্যালয়ের জন্য জায়গা দিতে কিংবা ভাড়া দিতে মালিকপক্ষ সরকারি দলকে ভয় পায়। সরকারের তোপের মুখে পড়তে চায় না কেউ।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান জাগো নিউজকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। এখানে সরকারের অনেক চাপ। যার কারণে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কার্যালয়ের জন্য জায়গা দিতে কিংবা ভাড়া দিতে মালিকপক্ষ সরকারি দলকে ভয় পায়। সরকারের তোপের মুখে পড়তে চায় না কেউ।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশে নিতে হুঁশিয়ারি ফখরুলের
তিনি আরও বলেন, আমাদের চেষ্টা করছি কিন্তু কার্যালয়ের জন্য জায়গা পাচ্ছি না। তবে আগে যারা বিএনপির এমপি-মন্ত্রী ছিলেন তারা নারায়ণগঞ্জে স্থায়ী কার্যালয় করতে পারেননি। আমরা যে সময় দায়িত্ব পেয়েছি তখন বিএনপি ১৪ বছর ধরে বিরোধী দল। অনেক সময় অনুষ্ঠান করার জন্য আমরা কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিতে গেলে আমাদের কেউ দিতে চায় না। তারপরেও এখন আমরা অস্থায়ীভাবে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মার্কেটের তৃতীয় তলায় দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কোনো কার্যালয় নেই। এর ফলে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এসব বিবেচনা করে সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকায় অস্থায়ীভাবে জেলা বিএনপির কার্যালয় করা হয়েছে। তবে স্থায়ীভাবে কার্যালয় করার জন্য আমরা নারায়ণগঞ্জে জায়গা দেখছি। কিন্তু এই মুহূর্তে জেলা বিএনপির স্থায়ী কার্যালয় করা অনেকটাই অসম্ভব বিষয়। তাই আগামী নির্বাচনের পর আমরা স্থায়ীভাবে জেলা বিএনপির কার্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নেবো।
এমআরআর/এসএইচএস/জিকেএস