ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘ক্ষয়ে’ শেষ খোয়াই নদী

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন | হবিগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৭:২০ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

চার বছর ধরে থমকে আছে হবিগঞ্জের পুরোনো খোয়াই নদীর দখল উচ্ছেদ অভিযান। ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষণ করা হচ্ছে নদীর বিভিন্ন অংশ। এতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদীটি।

ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরকে অকাল বন্যার ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে ১৯৭৬ সাল থেকে দুদফায় খোয়াই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। মাছুলিয়া থেকে রামপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকা নদী কেটে শহরের বাইরে দিয়ে নেওয়া হয়। স্বেচ্ছাশ্রমে নদী কাটায় অংশ নেন কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তখন থেকে শহরের ভেতরের অংশের নদীর পাঁচ কিলোমিটার (প্রায় ৭১ একর জায়গা) এলাকা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। বিগত কয়েক বছর ধরে এ পরিত্যক্ত অংশটুকু মাটি ভরাট করে দখলে নিতে থাকে প্রভাবশালীরা। ধীরে ধীরে তা খালে রূপ নেয়। এখন নদীটির শেষ চিহ্নটুকুও বিলীন হয়ে নালায় পরিণত হয়েছে।

jagonews24

কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে দালান। নদীর একটি অংশে গড়ে তোলা হয়েছে সরকারি একাধিক ভবন। এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকারের আমলে ডায়াবেটিস হাসপাতালের জন্য ৬০ এবং জেলা পরিষদ ভবনের জন্য ৩০ শতাংশসহ মোট ১১০ শতাংশ জমি লিজ দেওয়া হয়। বাকি ৭০ একর জমির বেশিরভাগ অংশই বেদখল হয়ে গেছে।

সিনেমাহল বাজার থেকে নাতিরাবাদ পর্যন্ত এলাকায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে নদীটি। বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। দূষিত করা হচ্ছে পরিবেশ।

jagonews24

সিনেমাহল বাজার থেকে নাতিরাবাদ পর্যন্ত এলাকায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে নদীটি। বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। দূষিত করা হচ্ছে পরিবেশ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক নদীটি উদ্ধারের উদ্যোগ নেন। তিনি ম্যাপ দেখে নদীর জমি চিহ্নিত করে উচ্ছেদ শুরু করেন। মাছুলিয়া থেকে সদর হাসপাতাল পর্যন্ত অভিযান চলে। ভেঙে দেওয়া হয় বিশাল বিশাল দালান। তখন দখলদাররা নিজেদের দখলে থাকা জমি টিকিয়ে রাখতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। একপর্যায়ে বদলি হয়ে যান জেলা প্রশাসক। আর তখন থেকেই থমকে যায় খোয়াই নদীর উচ্ছেদ অভিযান।

jagonews24

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, শহর রক্ষার জন্য সত্তর দশকের শেষে মাছুলিয়া-রামপুর ও খোয়াই মুখ-গরুর বাজার পর্যন্ত দুই দফায় পাঁচ কিলোমিটার লুপ কাটিংয়ের মাধ্যমে খোয়াই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত করে দেওয়া হয়। এ পাঁচ কিলোমিটার অংশ লুপ কাটিং করার আগে নদীর প্রস্থ ছিল স্থানভেদে ২৫০-৩০০ ফুট এবং গভীরতা ছিল ২৫-৪০ ফুট। কিন্তু এখন অনেক অংশেই নদীর চিহ্নও নেই। নদীর বিভিন্ন অংশ দখল হয়েছে, পরিকল্পিত-অপরিকল্পিতভাবে ভরাটের শিকার হয়েছে, দূষণের শিকার হয়েছে। সবমিলিয়ে নদী সংশ্লিষ্ট হবিগঞ্জের মানুষের জন্য ব্যাপক দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীটি।

jagonews24

শহরের পুরানমুন্সেফি এলাকার বাসিন্দা ও খোয়াই নদী রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সদস্য আহসানুল হক সুজা। তিনি বলেন, একসময় জেলা শহরের অর্ধেক অংশেরই পানি নিষ্কাশন হতো পুরোনো খোয়াই নদীতে। এখন নদীটি দখল হয়ে যাওয়ায় শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই নদীটি দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছি।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় ছিটেফোঁটা ভাঙচুর করেই অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের দাবি, অবিলম্বে নদীটি দখলমুক্ত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক।

jagonews24

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ জানান, পুরোনো খোয়াই নদীকে ঘিরে একটি প্রকল্প তৈররি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেটি এখনো পাস হয়নি। এটি পাস হলে নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে দৃষ্টিনন্দন করা হবে।

এসআর/এমএস