তনু হত্যাকাণ্ড : কুমিল্লা জুড়ে আন্দোলনের ঝড়
নাট্যকর্মী ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডে কুমিল্লায় আন্দোলনের ঝড় শুরু হয়েছে।
গত রোববার এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে তার সহপাঠি এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। যা এখনো চলছে।
এদিকে তনুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্ট সংগ্রহ পর্যন্তই পুলিশের তদন্ত এগিয়েছে। এছাড়া আপাতত নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই পুলিশের কাছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
জানা যায়, গত রোববার সন্ধ্যায় টিউশনি করে বাসায় ফেরার পথে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যার শিকার হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের (ভিসিটি) নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু।
রাত ১১টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংক সংলগ্ন কালভার্টের পাশের একটি ঝোপে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। সেখানে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায় তনুর মরদেহ।
এ ব্যাপারে নিহতের বাবা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে সোমবার বিকেলে কোতয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ৩ দিন অতিবাহিত হলেও এর রহস্যের কোনো কুলকিনারা খুঁজে পায়নি পুলিশ।
এদিকে ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গত ৩ দিন ধরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তনুর সহপাঠি এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বুধবার দুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেয় শিক্ষকবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত কোটবাড়ী অভিমুখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসে মহাসড়কের অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টাব্যাপী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুর রশীদ, কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী, ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম, কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী সায়েম ও সদস্য সচিব নাসিমুল হক হেলাল প্রমুখ।
একই দিন বিকেল ৪টায় নগরীর পূবালী চত্বর এলাকায় সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে পৃথক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক পাপড়ী বসু, নারী নেত্রী দিলনাশি মোহসেন, অ্যাড. ফাহমিদা জেবিন, সমাজকর্মী অ্যাডভোকেট শহীদুল হক স্বপন, অ্যাডভোকেট নাজনীন কাজলসহ নগরীর বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ময়নামতি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করতে পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, তনুর ব্যবহৃত মোবাইলের কললিস্ট ও তার ফেসবুক বন্ধুদের তালিকার সূত্র ধরে রহস্য খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
কামাল উদ্দিন/এমএএস/আরআইপি