রংপুরে নৌকা বাইচে মানুষের ঢল
রংপুরের ঘাঘট নদীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আনন্দঘন পরিবেশে নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের হোসেন নগরে ঘাঘটপাড়ে অনুষ্ঠিত হয় এ নৌকা বাইচ।
হোসেন নগর যুব সমাজের আয়োজনে দুপুর ২টায় নৌকা বাইচ উৎসব শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যায়। ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচ উৎসবে রংপুর, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহসহ আশপাশের জেলা থেকে আগত মাঝি মাল্লাদের ১৬টি দল নৌকা নিয়ে অংশ নেয়।
এদিন নৌকা বাইচ কেন্দ্র করে জমে ওঠে মেলা। এতে হাজারও মানুষের সমাগম হয়। রঙ-বেরঙে সাজানো দৃষ্টিনন্দন নৌকা আর মাঝি-মাল্লাদের সুর নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। আগামীতে আরও বড় পরিসরে নৌকা বাইচ উৎসবের দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থীসহ স্থানীয়রা।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে ঘাঘটের দুইপাড়ে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রংপুর নগরী ছাড়াও আশপাশের উপজেলা এবং অন্য জেলা থেকে আসতে থাকেন বিভিন্ন বয়সী মানুষজন। বিকেলের আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে ঘাঘটের দুই তীর। নদীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা সড়ক সেতুতেও ছিল মানুষের ঢল।
সর্বনাশা ঘাঘটপাড়ের দুঃখ ভুলে খনিকের আনন্দে ফুটে ওঠে নদীমাতৃক বাংলার অন্যতম ঐতিহ্য নৌকা বাইচের মনোরম দৃশ্য। প্রতিযোগীরা বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ তালে তালে কণ্ঠে তোলেন গান। সেতুর ওপরসহ নদীর দুপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকরা মাঝি-মাল্লাদের উৎসাহিত করতে কখনো হাত উঁচিয়ে নয়তো করতালিতে জানান অভিবাদন।
নৌকাবাইচ দেখতে দুপুর থেকে নদীর পাড়ে ভিড় করতে থাকা শিশু-কিশোর ও নারী-পুরুষরা প্রতি বছর নৌকা বাইচ উৎসবের আয়োজনের পাশাপাশি ঘাঘটের ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান।
স্থানীয় সংগঠক এ কে এম সুমন বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডটি আগে তামপাট ইউনিয়ন ছিল। এটি বর্তমানে সিটির বর্ধিত এলাকা। এই ওয়ার্ডসহ আশপাশের ওয়ার্ডগুলোতে বিনোদনের তেমন কোনো জায়গা নেই। প্রতি বছর নৌকা বাইচ বিনোদনপ্রেমীদের মনের খোরাক যোগায়। হাজারও মানুষের ভিড়ে এমন ঐহিত্যবাহী উৎসব দেখতে পেয়ে আমরা সবাই আনন্দিত।
এদিকে আয়োজকরা বলছেন, আগে নদীকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নদী না বাঁচলে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ হারিয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে নদীকেন্দ্রীক ঐতিহ্য, পেশা, জীবন ও প্রকৃতি। দ্রুত তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, আখিরা, করতোয়া ও শ্যামাসুন্দরীসহ সব নদ-নদী ও খালের খনন এবং নদী শাসন ও সঠিক পরিচর্চার দাবি জানিয়েছেন তারা।
গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে তৃতীয়বারের মতো হোসেন নগর যুব সমাজ এই নৌকা বাইচের আয়োজন করে। আয়োজক কমিটির সভাপতি আবু সাঈদ মোহাম্মদ মাসুদ রানা জানান, ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছর ঘাঘটে নৌকা বাইচ হয়ে আসছে। এবার বড় পরিসরে আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নদীতে খুব বেশি পানি না থাকায় সাড়া মেলেনি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এতে স্থানীয় ছাড়াও বাইরের তিন জেলার মাঝি-মাল্লাদের নিয়ে ১৬টি নৌকা বাইচ দল অংশ নেয়।
তিনি আরও জানান, উৎসবে প্রথম স্থান অর্জনকারী বালাসি তুফান নৌকাবাইচ দলকে একটি মোটরসাইকেল, দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনার তরী নৌকাবাইচ দলকে একটি ফ্রিজ এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী দলকে একটি এলইডি টেলিভিশন উপহার দেওয়া হয়। এছাড়া চতুর্থ স্থানে থাকা দলকে একটি স্মার্ট ফোন দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ খেলার বেশি বেশি আয়োজন করা প্রয়োজন। এতে মানুষের মন ভালো থাকবে। আমরা আগামীতে আরও বড় পরিসরে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করব। গত বছরের মতো এবছরও সিটি করপোরেশন থেকে এই আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি, নদীকে বাঁচানোর সঙ্গে নদীকেন্দ্রিক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হোক।
জিতু কবীর/এমআরআর/জিকেএস