প্রতিমন্ত্রী রাসেলকে নিয়ে স্ট্যাটাস
আদম তমিজিকে গ্রেফতারের দাবিতে টঙ্গী থানা ঘেরাও
‘প্রয়োজনে আজই আমি আমার ক্ষমতার আংশিক রূপ দেখাতে পারি। আমি বর্তমান সরকারের ক্ষমতাসীন মন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে নামাতেও পারি। সুতরাং আমার সম্পত্তির দিকে হাত বাড়ানোর আগে খুব বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।’ নিজের ফেসবুক আইডিতে বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে এমন কথা লেখেন হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ শরীর গঠন ফেডারেশনের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তর তাঁতি লীগের প্রধান উপদেষ্টা ব্যবসায়ী আদম তমিজি হক।
তিনি লেখেন, ‘আমি আজ মধ্যরাতে ফেসবুক লাইভে যাচ্ছি, টঙ্গীতে কাজ করা একটি বিশাল অপরাধী চক্রকে ফাঁস করতে। যারা আমাকে দেউলিয়া করেছে। দুটি বিয়ে ধ্বংস করেছে এবং আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। যাতে তারা টঙ্গীতে আমার কারখানা দখল করতে পারে। এ দলের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় এমপি জাহিদ আহসান রাসেল, তার চাচা মতিউর রহমান মতি এবং কাউন্সিলর নূরুল ইসলাম নুরু। তাদের সঙ্গে আমার দুইজন সাবেক কর্মচারী’।
তিনি আরও লেখেন, ‘প্রিয় নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী), আমি এবং আমার দ্বিতীয় স্ত্রী দুবাই থেকে ঢাকার পথে। পরিবারের বাকি সদস্যরা আজ রাতে রওয়ানা করবে এবং সকালে পৌঁছাবে। এমপি রাসেল এবং তার চাচার ভয়ানক থাবা থেকে আমাদের রিজিক বাঁচানোর লক্ষ্যে আসতেছি।’
বৃহস্পতিবার রাতে আদম তমিজি হকের ফেসবুকে এরকম কয়েকটি মন্তব্য প্রকাশের পর তিনি লাইভে এসে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং তার চাচা আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান মতি সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এ ঘটনার পর ফেসবুকে বিষয়টি ব্যাপক ভাইরাল হয়। আদম তমিজি হকের দুটি ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এর প্রতিবাদে আদম তমিজিকে গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করে টঙ্গী পূর্ব থানা ঘেরাও করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে আদম তমিজি হক সংবাদ সম্মেলন ডেকেও রহস্যজনক কারণে কারখানায় আসেননি।
তমিজি হকের অভিযোগ, গাজীপুরে টঙ্গীতে হক গ্রুপের কারখানা দখলের জন্য প্রতিমন্ত্রীর চাচা স্থানীয় মতিউর রহমান মতি এবং হক গ্রুপের বরখাস্ত হওয়া চিফ অপারেশনাল অফিসার (সিওও) মোশফাকুর রহমান রোমেল মিলে ষড়যন্ত্র করছেন। এ নিয়ে শনিবার দুপুরে টঙ্গীতে হক গ্রুপের টঙ্গীর কারখানায় তার ফেসবুকে একটি জরুরি সালিশি সভা এবং সংবাদ সম্মেলনের কথা জানিয়েছেন আদম তমিজি হক। গত কয়েকদিন ধরে হক কারখানায় কর্মকর্তাকে মারধরসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
শুক্রবার রাতে আদম তমিজি হক তার ফেসবুকে লাইভে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী রাসেলের পিতা একজন ভালো মানুষ ছিলেন। লাইভে তিনি রাসেল, তার চাচা মতি এবং স্থানীয় কাউন্সিলর নুরুর নাম নেন আদম তমিজি হক। লাইভে থাকা অবস্থায় তিনি প্রতিমন্ত্রী রাসেলকে গালিগালাজ করেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অপরদিকে, দুপুর ২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও বিকেল ৪টা পর্যন্ত আদম তমিজি হক বা তার কোনো লোক কারখানা এলাকায় আসেননি। তবে কারখানার ভেতরে যারা রয়েছেন তারা কোনো কথাই বলেননি এমনকি গেটও খোলেননি। আদম তমিজি হককে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ফেসবুক স্ট্যাটাস ও লাইভে প্রতিমন্ত্রীকে গালমন্দ করার প্রতিবাদে আদম তমিজিকে গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার বিকেলে মিছিল নিয়ে টঙ্গী পূর্ব থানা ঘেরাও করেন আওয়ামী লীগ, মহিলা লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। মিছিলটি টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে বের হয়।
এ ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রীর চাচা আওয়ামী লীগ নেতা মো. মতিউর রহমান মতি বলেন, আদম তমিজি হক একজন সাইকো। তার বাবার মৃত্যুর পর ঢাকায় কবর না দিয়ে মৃত্যুর দুদিন পর টঙ্গীতে দাফন করেন। তার আপন বোনদের জমিজমাও দেননি।
তিনি আরও বলেন, আমরা মানুষের জমি দখল করি না বরং উদ্ধার করে দিই। একজন কর্মকর্তাকে তমিজি হকের লোকজন মারধর করে আটকে রাখেন। সে কর্মকর্তার স্ত্রীর অভিযোগে পুলিশ ও স্থানীয়রা তিনদিন পর তাকে কারখানার ভেতর থেকে উদ্ধার করেন।
সিটি করপোরেশনের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, চেরাগআলী কবরস্থানে তমিজি হকের বাবার দাফনের দুদিন পর কবরটি নষ্ট করে ফেলন আদম তমিজি হক। ওয়ার্ল্ড ভিশন ও আমি চেরাগআলী মার্কেট থেকে হকের রাস্তা আবর্জনা ও ট্রাক মুক্ত করার ঘোষণা দিই। এতেই তিনি আমায় ভুল বুঝছেন বলে মনে হয়।
মো. আমিনুল ইসলাম/এমএএইচ/