ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

১০ বছরেও শেষ হয়নি ভবন নির্মাণ, পড়ে আছে বিদেশ থেকে আনা সরঞ্জাম

আল মামুন সাগর | কুষ্টিয়া | প্রকাশিত: ০৫:৪০ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে। প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭৫ কোটি টাকা। দফায় দফায় বেড়েছে সময়। ব্যয় গিয়ে ঠেকেছে ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। তবুও শেষ হয়নি ভবনের নির্মাণকাজ। এরমধ্যেই বিদেশ থেকে আনা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম। সেসব সরঞ্জাম দিনের পর দিন পড়ে রয়েছে হাসপাতাল ভবনে।

এদিকে দফায় দফায় নবনির্মিত এ হাসপাতাল ভবনে বহির্বিভাগ চালু করার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হলেও তা এখন অনিশ্চিত। সবশেষ গত ৩০ জুন হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্বপ্নের মেডিকেল কলেজ নিয়ে হতাশ কুষ্টিয়াবাসী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে শুরু হয় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণ। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ৩০ জুন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম ও জটিলতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে একাধিকবার। সবশেষ এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। যদিও এসময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি।

Hos-(1).jpg

আরও পড়ুন: চার দফা দাবিতে কুষ্টিয়া ম্যাটসের প্রশাসনিক ভবনে তালা

২০০৮ সালে অনুমোদনের পর ২০১১ সালে কুষ্টিয়া মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) ভবনে অস্থায়ীভাবে মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয়। অস্থায়ী ভবন থেকে স্থানান্তরের পর ২০২২ সালের ৩ মার্চ মূল ক্যাম্পাসে চালু হয় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। তবে শেষ হয়নি হাসপাতাল ভবনের কাজ।

কাজ শুরুর পর প্রথম দফায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে, দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বাড়ানো হয় মেয়াদ। এরপর ২০১৯ সালে নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনের ছাদ ধসে এক শ্রমিক নিহত হলে আবার বাধাগ্রস্ত হয় কাজ।

ছাদ ধসে মৃত্যুর ঘটনায় সে সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়। বরখাস্ত করা হয় তিন কর্মকর্তাকে। এরপর ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর একনেক সভায় এ প্রকল্পের সংশোধিত ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) অনুমোদন হয়। তখন এ প্রকল্পের ব্যয় ২০৬ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৬৮২ কোটি টাকা। সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

Hos-(1).jpg

এরই মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ না হতেই গত জানুয়ারি মাসে প্রায় ৬৫ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম অমদানি করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে মূল্যবান এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম পড়ে রয়েছে নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলা ও দোতলায়। দ্রুত এগুলো স্থাপন ও ব্যবহার শুরু না হলে যন্ত্রপাতি অচল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘আমার সাজানো সংসার ডেঙ্গুতে তছনছ’

নির্মাণকাজের বিষয়ে হাসপাতাল ভবনে নিযুক্ত ভান্ডার কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান বলেন, হাসপাতাল ভবনে এখনো অনেক কাজই বাকি রয়ে গেছে। কবে শেষ হবে তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রকল্প পরিচালক এবং গণপূর্ত বিভাগ দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত বিভাগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একাধিকবার পত্র দিয়েছে। নির্মাণবিধি লঙ্ঘন ও অবহেলার অভিযোগে একাধিকবার জরিমানাও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নানান জটিলতা থাকলেও এরই মধ্যে ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজগুলো চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

Hos-(1).jpg

অন্যদিকে ‘ঝিমিয়ে পড়া নির্মাণকাজ’ গতিশীল করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রকল্প পরিচালক ডা. সরয়ার জাহান।

আরও পড়ুন: সরকারি ৬ শতাধিক গাছ কেটে সাবাড়, ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্প সম্পন্ন করছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ কাজ করছে মেসার্স জহিরুল লিমিটেড।

কাজের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি ২০০৮ সালে অনুমোদন পেলেও নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। তবে সময় মতো অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় নির্মাণকাজে গতি কমেছে।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নির্মাণকাজের ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তবে খুব দ্রুতই নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী।

এদিকে হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ শেষ না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও।

২৫০ শয্যা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি রোগী বহির্বিভাগ ও আট শতাধিক ভর্তি রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। অত্যাধিক এ চাপ সামলাতে গিয়ে আমাদের চিকিৎসকসহ স্টাফদেরও নানান ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে দ্রুত ৫০০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চালু হলে রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

Hos-(1).jpg

আরও পড়ুন: আমার আশা ছাড়ো, মেয়েটাকে বাঁচাও: স্বামীকে ডেঙ্গু আক্রান্ত স্ত্রী

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণে ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি হাজি গোলাম মহসিন বলেন, শুরু থেকে নানান অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে নির্মাণকাজে প্রায় একযুগ সময় পার হয়েছে। দ্রুত বিদ্যমান এ পরিস্থিতির নিরসন করতে হবে। দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও অবহেলায় নির্মাণাধীন ছাদ ধসে শ্রমিকের মৃত্যু হলো, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গণপূর্ত বিভাগে কালো তালিকাভুক্ত হলো, সেই একই প্রতিষ্ঠান এখনো সেখানে বহাল আছে। কোন অদৃশ্য শক্তির মদদে? এটা খুঁজে বের করতে হবে।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের স্টোর অফিসার মুসফিকুর রহমান বলেন, আমদানি করা মূল্যবান যন্ত্রপাতি এভাবে যদি দিনের পর দিন ফেলে রাখা হয় তাহলে মেশিনগুলোর কার্যক্ষমতা হ্রাস পাবে। এমনকি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

এসআর/এমএইচআর/এমএস