‘কেউ উঠতে চান না প্যাডেলচালিত রিকশায়’
‘১৯৮৫ সাল থেকে রিকশা চালাচ্ছি। বহু বছর ধরে রিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ জোগাড় করলেও এখন আর পারছি না। এখন আর কেউ প্যাডেলচালিত রিকশায় উঠতে চান না। ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মতো ভাড়া পাই। তা দিয়ে খাবার জোগাড় করতেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কী করবো, অন্য পেশায়ও যেতে পারি না। বয়স হয়েছে। তাই কোনোভাবে বেঁচে আছি।’ কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের মোবারককান্দি এলাকার মৃত লালচান ব্যাপারীর ছেলে পঞ্চাশোর্ধ্ব বাবুল ব্যাপারী।
শহরজুড়ে এরকম ১০ থেকে ১২টি রিকশা চলতে দেখা যায়। তাও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যারা চালাচ্ছেন তারা সবাই পঞ্চাশোর্ধ্ব এবং বহু কষ্টে জীবনধারণ করছেন। পেশা বদলের কোনো উপায় না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা এ পেশায় রয়েছেন। ফলে টুং টাং বেলের শব্দ আর পায়ের চাপে ছুটে চলা রিকশা (প্যাডেল রিকশা) এখন মাদারীপুর থেকে বিলুপ্তির পথে।
জানা যায়, কয়েক বছর আগেও শহরজুড়ে প্যাডেলচালিত রিকশার দাপট ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। হাতেগোনা ১০-১২টির মতো রিকশা থাকলেও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ভিড়ে তা এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যে কয়টা প্যাডেলচালিত রিকশা চলছে সেগুলোও চালাচ্ছেন বৃদ্ধরা। টাকার অভাবে অটোরিকশা কিনতে না পারা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে সাহস না পাওয়ায় তারা প্যাডেলচালিত রিকশা চালাচ্ছেন। তবে প্যাডেলচালিত রিকশার জায়গা পুরোটাই দখল করেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
আরও পড়ুন: ১৬ মাসে ৬৬ সেচ পাম্পের ট্রান্সফরমার চুরি
চালক মকবুল ব্যাপারী বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে রিকশা চালাই। টাকার জন্য ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনতে পারি না। তাই বাধ্য হয়েই এই রিকশা চালাই। প্রতিদিন দুইশো থেকে চারশো টাকার মতো আয় হয়। তা দিয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়।
একইভাবে হোসেন চোকদার, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. মকুল ও বাদল ব্যাপারী বলেন, বর্তমানে যাত্রীরা প্যাডেলচালিত রিকশায় চড়তে চান না। মাত্র ১০-১২ জন এই রিকশা চালাচ্ছি। সবার বয়স হয়ে গেছে। অটোরিকশা চালানোর মতো সাহস নেই। এছাড়া অটোরিকশা কেনার মতো টাকাও নেই। তাই বাধ্য হয়েই এই রিকশা চালাচ্ছি। খুব তাড়াতাড়িই এই রিকশা মাদারীপুর থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: সেতু নির্মাণের ৬ বছরেও হয়নি সংযোগ সড়ক
রিকশার যাত্রী শহরের শকুনি লেকপাড় এলাকার হিরা আক্তার বলেন, এখন আর প্যাডেলচালিত রিকশা চোখেই পড়ে না। তবে আমার এ রিকশায় চড়তে অনেক ভালো লাগে।
আরেক যাত্রী মাহমুদ হাসান বলেন, দ্রুত যাতায়াতের জন্য অটোরিকশায় চড়ি। এতে সময় বাঁচে।
রাজন মাহমুদ নামে একজন বলেন, প্যাডেলচালিত রিকশা এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তাছাড়া এই রিকশায় কেউ চড়তেও চান না। খুব ধীরগতির কারণে এ রিকশা এখন আর তেমন কেউ পছন্দ করে না। একটা সময় এই রিকশা আর মাদারীপুরে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক ও সাংবাদিক সুবল বিশ্বাস বলেন, যান্ত্রিক ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক জিনিসই জাদুঘরে চলে যাচ্ছে। এই প্যাডেলচালিত রিকশাও জাদুঘরে চলে যাওয়ার অপেক্ষায়।
আরও পড়ুন: বিদ্যালয়ের চারপাশে কচুরিপানা-মেঝেতে পানি, বন্ধ পাঠদান
মাদারীপুর রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, মাদারীপুর শহরে হাতেগোনা ১০ থেকে ১২টির মতো প্যাডেলচালিত রিকশা আছে। যারা এ রিকশা চালান তাদের সবার বয়স হয়ে গেছে। তারা কেউ ভালো নেই। কারণ আগের মতো এ রিকশায় কেউ চড়তে চান না। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যে টাকা পান তা দিয়ে তাদের সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। এই ১০-১২টি রিকশা বন্ধ হয়ে গেলে মাদারীপুরে আর নতুন করে কেউ এই রিকশা চালাবে না। তাই শিগগির এই রিকশা মাদারীপুর শহর থেকে হারিয়ে যাবে।
এফএ/এএইচ/এমএস