ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন
‘আর কতবার ভাঙলে স্থায়ী সমাধান পামু?’
‘আমার ঘরের অর্ধেক নিয়া গেছে নদী। বাকি অর্ধেক ভাইঙ্গা সরাইয়া রাখলাম। গোয়াল ঘর আর গরু কোনোমতে বাঁচাইছি। আমার পুলাডাও এই নদীতে পইড়া মারা গেছে। আর কতবার ভাঙলে, স্থায়ী সমাধান পামু?’
এই আক্ষেপ শেরপুরের নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা গ্রামের নদী তীরবর্তী মিনারা বেগমের। ব্রহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে নতুন নতুন আবাদি জমি। নদীগর্ভে যাচ্ছে বসতভিটা, রাস্তাঘাট আর স্থাপনা। গত এক বছরে বিলীন হয়েছে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহুতল ভবন, কবরস্থান, মসজিদ আর রাস্তাঘাট।
শুধু মিনারা বেগম নয়, এক দশকের ব্রহ্মপুত্রের টানা ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছেন এখানকার দেড় হাজার পরিবার। এবারের ভাঙনের পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেখাও মেলেনি এলাকায়। অস্থায়ী আপদকালীন কাজ নয়, স্থায়ী সমাধান চান এলাকাবাসী।
স্থানীয় নদী তীরবর্তী মানুষ বলছেন, প্রতি বছরই ভাঙনের সময় অস্থায়ী কাজ করে যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙন মৌসুমের পর তাদের দেখা মেলে না। আমরা চাই স্থায়ী সমাধান। এই এলাকায় ব্লক দিয়ে বেঁধে দিলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব বলেও জানান তারা।
কৃষক মজিবর মিয়া বলেন, যা জমি ছিল বেশিরভাগই নদীর মধ্যে। দুই কিলোমিটার দূরের নদী আইসা আমগোর সব শেষ করে দিতেছে।
ব্যবসায়ী রমিজ মিয়া বলেন, ভাঙনের সময় এখন পর্যন্ত কোনো মেম্বার-চেয়ারম্যানের দেখা পাইলাম না। এবার যদিও দ্রুত কাজ শুরু হইছে, এই কাজ টেকসই হবে না। এই জিওব্যাগ দিয়ে বাঁধ আমাদের কোনো স্থায়ী সমাধান না।
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন মোকাবিলায় দুইটি দরপত্রে প্রায় ৮৫ লাখ টাকার ৩৩০ মিটার জরুরি আপদকালীন অস্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দ্রুত এ কাজ সম্পন্ন হলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে বলে জানিয়েছেন শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক।
তিনি বলেন, আমরা ১৩০ মিটার ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুইটি আপদকালীন জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এলাকাবাসী এর সুফল ভোগ করতে পারবেন।
এফএ/এএসএম