ফেসবুক শুভেচ্ছাবার্তার জেরে দ্বন্দ্ব
এমপি সমর্থকদের রোষানলে পৌর মেয়র, পদ নিয়ে টানাটানি
ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌরসভার মেয়রের পদ নিয়ে চলছে টানাটানি। এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত মেয়র থাকলেও রাজনৈতিক কোন্দলে তিনি এলাকাছাড়া। এ সুযোগে প্যানেল মেয়র-১ শাহজাহান সাজুকে মেয়র ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন অনেকেই।
তবে গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র এস এম ইকবাল হোসেন সুমনের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের নির্দেশে যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসব কাজ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ মার্চ গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র এস এম ইকবাল হোসেন সুমনের জন্মদিন ছিল। ফ্রান্স প্রবাসী মেয়রের বন্ধু ইনসাফ সুমন ভুইয়া ফেসবুকে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। ওই পোস্টে ইনসাফ সুমন ভুইয়া লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন বন্ধু এস এম ইকবাল হোসেন। মেয়র, গফরগাঁও পৌরসভা। ভবিষ্যতে তোমাকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাই।’ ওই পোস্টে মেয়র সুমন ধন্যবাদ জানিয়ে কমেন্ট করেন।
তবে ওই শুভেচ্ছাবার্তা কাল হয়ে দাঁড়ায় মেয়র সুমনের জন্য। কারণ, বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি স্থানীয় এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের সমর্থকরা। এরপর থেকেই মেয়র ও তার অনুসারীদের ওপর হামলা শুরু হয়। এ ঘটনার পর থেকে সুমন ও তার অনুসারীরা এলাকাছাড়া। এরপর গত রোজার ঈদের দিন (২২ এপ্রিল) সুমন ও তার অনুসারীরা এলাকায় নামাজ পড়তে যান। এমপি সমর্থকরা খবর পেয়ে ফের তাদের ওপর হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করেন। গফরগাঁওয়ে এলে মেয়র সুমনকে মারধর ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর থেকে আবারও সুমন ও তার অনুসারীরা এলাকাছাড়া।
এদিকে, গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে গফরগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ শাহজাহান সাজুর জন্মদিন পালিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে গফরগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, জেলা পরিষদের সদস্য দেলোয়ার হোসেন রিপন, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সালাহ উদ্দিন পলাশ, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান সজীব, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সানীল, সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম মণ্ডলসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ফ্রান্স প্রবাসী মেয়রের বন্ধু ইনসাফ সুমন ভুইয়া ফেসবুকে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। ওই পোস্টে ইনসাফ সুমন ভুইয়া লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন বন্ধু এস এম ইকবাল হোসেন। মেয়র, গফরগাঁও পৌরসভা। ভবিষ্যতে তোমাকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাই।’ ওই পোস্টে মেয়র সুমন ধন্যবাদ জানিয়ে কমেন্ট করেন।
জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শাহজাহান সাজু কেক কাটার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগান বলা হয়, ‘শুভ শুভ শুভ দিন, মেয়র সাহেবের জন্মদিন।’
এরপর থেকে ফেসবুকে নেতাকর্মীরা শাহজাহান সাজুকে গফরগাঁও পৌর মেয়র সম্বোধন করে পোস্ট দিতে থাকেন। অনেকেই ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের সঙ্গে দাঁড়ানো একটি ছবি পোস্ট করে সাজুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
এম সালাউদ্দিন পলাশ নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, শুভ জন্মদিন, শাহজাহান সাজু ভাই। মেয়র, গফরগাঁও পৌরসভা।
শাহরীয়ার বাপ্পী নামে আরেকজন লেখেন, শুভ জন্মদিন, শাহজাহান সাজু কাকা। মেয়র, গফরগাঁও পৌরসভা। জন্মদিনে শুভেচ্ছা রইলো।
মেহরাব হোসাইন তানভীর লেখেন, শুভ জন্মদিন সাজু মামা। মেয়র, গফরগাঁও পৌরসভা। আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
অন্যদিকে, নির্বাচিত একজন মেয়র থাকতে আরেকজনকে মেয়র ঘোষণার সমালোচনাও করেন অনেকে। তাজমুন নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, শেখ হাসিনার আশীর্বাদ নিয়ে দুবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত মেয়র পদে বহাল রয়েছেন এস এম ইকবাল হোসেন সুমন। তিনি ২০১৬ থেকে ২০২১ এবং ২০২১ সাল থেকে এখনো মেয়র।
তিনি আরও লেখেন, দুঃখজনক হলেও সত্যিটা বলতে হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখতে পেলাম, কিছু দায়িত্বশীল পাগল বর্তমান ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহজাহান সাজুকে মেয়র উল্লেখ করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট দিয়ে সয়লাব করেছেন। ক্ষমা করবেন পাগল বলায়, কারণ পাগল বা উন্মাদ ছাড়া কেউ একটা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধির পদ পাল্টে দিতে পারে না।
ওই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে থাকা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সানীলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘আমার নম্বরে আরেকটি কল আসছে’ বলে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার কল দিলে সেটি বন্ধ দেখায়। এছাড়া জন্মদিনে উপস্থিত উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সালাহ উদ্দিন পলাশের নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা পরিষদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন রিপন জাগো নিউজকে বলেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর শাহজাহান সাজুর জন্মদিন পালন করা হয়েছে। সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম। তবে, তিনি মেয়র না, প্যানেল মেয়র-১। মেয়র ইকবাল হোসেন সুমন আসে না বলেই তাকে সবাই মেয়র বলে সম্বোধন করে। ওই রাতে যা হয়েছে, পরে আমরা আলোচনা করে বুঝতে পেরেছি সেটি ভুল ছিল। আমি আজই আপনার সঙ্গে দেখা করবো বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
দুঃখজনক হলেও সত্যিটা বলতেই হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখতে পেলাম, কিছু দায়িত্বশীল পাগল বর্তমান ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহজাহান সাজুকে মেয়র উল্লেখ করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট দিয়ে সয়লাব করেছেন। ক্ষমা করবেন পাগল বলায়, কারণ পাগল বা উন্মাদ ছাড়া কেউ একটা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধির পদ পাল্টে দিতে পারে না।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জাগো নিউজকে বলেন, ওইদিন মেয়র শাহজাহান সাজুর জন্মদিন পালন করেছি। কিন্তু তিনি মেয়র কীভাবে হলেন জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার তার নম্বরে কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে গফরগাঁও পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ শাহজাহান সাজু জাগো নিউজকে বলেন, ওইদিন আমার জন্মদিন ছিল। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা আমাকে খবর দিয়ে আওয়ামী লীগের অফিসে নিয়ে জন্মদিন পালন করেছে। সেখানে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারা আমাকে মেয়র বলে স্লোগান দিয়েছে। আমাকে মেয়র বলে ঘোষণা দিয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু জানা নেই।
এ বিষয়ে গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র এস এম ইকবাল হোসেন সুমন বলেন, একটি ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করার জন্য এমপি সাহেব ও তার সমর্থকদের নির্যাতনের কারণে এপ্রিল মাস থেকে আমি গফরগাঁও আসতে পারি না। জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীক নিয়ে দুবার মেয়র হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে এমপি সাহেবের নির্দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একজনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি প্রাণভয়ে গফরগাঁও যেতে পারি না। এমনকি আমার অনেক সমর্থকও বাড়িছাড়া। গফরগাঁও এলে আমাকে মারধর এমনকি হত্যার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে আমি ঢাকায় ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিসিয়াল কাজ করছি।
এ বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেনি। এছাড়া তার নম্বরে একাধিকবার এসএমএস করার পরেও তিনি সাড়া দেননি।
এমআরআর/এসএইচএস/জিকেএস