ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘নদীতে সব বিলীন হয়ে গেছে, খয়রাতির খাতায় নাম লেখাইছি’

জেলা প্রতিনিধি | বরিশাল | প্রকাশিত: ১১:৪৮ এএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

‘পাঁচ-ছয় কানি জমি, ঘরবাড়িসহ সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন খয়রাতির খাতায় নাম লেখাইছি। আগে এলাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে আমরাই একটু ভালো ছিলাম। এখন আমরাও ভিখারি।’

আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সিংহেরকাঠী গ্রামের ভাঙনে নিঃস্ব পঁচাত্তরোর্ধ্ব সোহরাব হোসেন। তিনি আরও বলেন, সেই ছোটবেলা থেকে এই নদী ভাঙন দেখতে দেখতে বড় হইছি। এখন নদী আমার সবটুকু নিয়ে গেছে। এখন সরকার যদি একটু থাকার ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে বাঁচতে পারতাম।

শুধু সোহরাব হোসেন নয়, আড়িয়াল খাঁ নদীর অব্যাহত ভাঙনে ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ সব হারানো ছয় গ্ৰামের মানুষের এখন এই একই আর্তনাদ।

‘নদীতে সব বিলীন হয়ে গেছে, খয়রাতির খাতায় নাম লেখাইছি’

সরেজমিনে বাবুগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফেরিঘাট সংলগ্ন ছোট মীরগঞ্জের সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় দুটি ইউনিয়নের (রহমতপুর ও চাঁদপাশা) যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ছয়টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে দুই ইউনিয়নের মধ্যবর্তী বড় মীরগঞ্জ ও ছোট মীরগঞ্জ বাজার সংলগ্ন খানকায়ে সুলতানিয়া নামে মসজিদ সড়কসহ অন্তত ৩০০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে বড় মীরগঞ্জের সঙ্গে সড়ক পথে চাঁদপাশা ইউনিয়নের ভাবানিপুর, রফিয়াদি, আরজিকালিকাপুরের একাংশ ও রহমতপুর ইউনিয়নের লোহালিয়া, ওলানকাঠী, সিংহেরকাঠী গ্রামের পূর্বাংশের কয়েক হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।

‘নদীতে সব বিলীন হয়ে গেছে, খয়রাতির খাতায় নাম লেখাইছি’

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙনের পরও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সড়ক যোগাযোগের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা ট্রলারে যাতায়াত করছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে ওই এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ ও স্কুল শিক্ষার্থীরা।

চাঁদপাশা ইউনিয়নের রফিয়াদি গ্ৰামের সাইফুর রহমান বলেন, প্রতিদিন এই সড়কটি দিয়ে রহমতপুর ইউনিয়ন ও পাশের চাঁদপাশা ইউনিয়নের অন্তত ছয় গ্রামের মানুষ চলাচল করতো। সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখন তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এখন হয় তাদের ট্রলারে পারাপার হতে হচ্ছে, না হয় কয়েক কিলোমিটার পথ ঘুরে উপজেলা সদর কিংবা বাবুগঞ্জ বাজার এবং থানা সদর এলাকায় যেতে হচ্ছে। এতে সময় যেমন বেশি লাগছে, তেমনি অতিরিক্ত অর্থও খরচ হচ্ছে।

‘নদীতে সব বিলীন হয়ে গেছে, খয়রাতির খাতায় নাম লেখাইছি’

লোহালিয়া গ্ৰামের দুলাল হোসেন বলেন, ভাঙন রোধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। সবাই শুধু আশ্বাস দিয়ে যায়। আমরা আর আশ্বাস চাই না, ভাঙন রোধে টেকসই বাঁধ চাই। চলাচলের জন্য রাস্তা চাই। আমাদের জীবন তো ভাঙতে ভাঙতে গেছে, ছেলেমেয়েদের জীবন যেন ভাঙন থেকে রক্ষা পায়।

এদিকে, ভাঙন রোধে ওইসব এলাকায় গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ এবং টিউব ফেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এক বছর পার হতে না হতে জিও ব্যাগ ও টিউব নদীতে হারিয়ে গেছে।

‘নদীতে সব বিলীন হয়ে গেছে, খয়রাতির খাতায় নাম লেখাইছি’

ভাঙনের বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিলা রহমান বলেন, বিষয়টি বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসককেও বিষয়টি জানানোর পর তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদীর অব্যাহত ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। শিগগির অনুমোদন পেলে ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শাওন খান/এমআরআর/জেআইএম