ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কবিরহাটে আওয়ামী লীগের ‘মামা-ভাগনে’ কমিটি, বঞ্চিত ত্যাগীরা

ইকবাল হোসেন মজনু | প্রকাশিত: ০৯:৩৮ এএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহীম এবং সাধারণ সম্পাদক তার ভাগনে পৌরসভার মেয়র জহিরুল হক রায়হান। তাদের কমিটিতে এক পরিবারের ছয়জনকে স্থান দিলেও ত্যাগীদের বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। ওই ছয়জনের একজন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলেন।

জানা গেছে, হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহীম নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর বড়ভাই এবং জহিরুল হক রায়হান তাদের ভাগনে। এ দুজনকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করে আগেই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। গত শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) মামা-ভাগনের সই করা ৫১ সদস্যের কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচন।

প্রকাশিত কমিটিতে সহ-সভাপতি রাখা হয়েছে সভাপতি হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহীমের ভাই হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছকে। তিনি সুন্দলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে তিনি জয়লাভ করেন। হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ এক সময় সুন্দলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন।

একই কমিটিতে ২ নম্বর সদস্য রাখা হয়েছে হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহীমের ছোটভাই নোয়াখালী-৪ (সদর-সূবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে কটূক্তি করে তিনি ওই পদ হারান।

কমিটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহীমের ভাগনি ও সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক রায়হানের বোন খাদেমা আক্তার রোজীকে। আর হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহীমের মামা বীর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন চৌধুরীকে কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে। এছাড়া অপর সদস্যরা ওই মামা-ভাগনের আজ্ঞাবহ বলে জানিয়েছেন বঞ্চিত নেতারা।

তবে কমিটিতে দুজন সহ-সভাপতি, একজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক, একজন কোষাধ্যক্ষ, সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদকসহ নয়টি সম্পাদকীয় এবং ১১টি সদস্য পদসহ ২০ জনের নাম পরে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এদিকে, কমিটিতে স্থান পাননি কবিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন রুমি, উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক সহ-সভাপতি কামরুন নাহার শিউলী, কবিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আলাবক্স তাহের টিটু, সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক শাহীন, সাবেক সদস্য ডা. এ কে এম জাফর উল্যাহ, ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম সিরাজ উল্যাহ, সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রমুখ।

এরমধ্যে সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন রুমি সুন্দলপুর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। তাকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছকে জেতানো হয়েছে।

কবিরহাটে আওয়ামী লীগের ‘মামা-ভাগনে’ কমিটি, বঞ্চিত ত্যাগীরা

অন্যদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক লাইন ডিরেক্টর ডা. এ কে এম জাফর উল্যাহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বেয়াই (কাদের মির্জার স্ত্রীর বড় ভাই)। তিনি বিগত তিন সংসদ নির্বাচনের কবিরহাট উপজেলায় ওবায়দুল কাদেরের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন।

স্থানীয় নেতাদের অভিমত, কমিটির সভাপতি হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহিম আগামীতে উপজেলা চেয়ারম্যানের ভোট করবেন তাই বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলি (একরাম চৌধুরীর স্ত্রী), উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাবেক মেয়র আলাবক্স তাহের টিটুসহ নির্বাচন করেছেন বা করার মতো কাউকে তিনি কমিটিতে স্থান দেননি।

জানতে চাইলে কমিটির সহ-সভাপতি সুন্দলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ জাগো নিউজকে বলেন, আমি এক সময় বিভিন্ন কারণে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। বৃহত্তর সুন্দলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। বিগত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি জয়লাভ করি। এখন আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

উপজেলা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের যোদ্ধা খ্যাত সাবেক পৌর মেয়র আলাবক্স তাহের টিটু জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ এক পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিগত ১৫ বছরের উন্নয়ন প্রচার বাদ দিয়ে ওই পরিবারের বন্দনা করতে না পারলেই বাদ। দুঃসময়ে যারা দলের বৈঠা ধরেছেন ব্যক্তিস্বার্থে আজ তাদের অনেক দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আবার দলের দুঃসময় আসলে তখন সবকিছুর টের পাওয়া যাবে।

এসব বিষয়ে সভাপতি হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পরিবারের ছয় সদস্য কমিটিতে আছে। আমি ছাড়া সবাই আগেও ছিল। আমার ভাই মোহাম্মদ ইলিয়াছ এক সময় বিএনপি করলেও এখন আওয়ামী লীগ করে। আমি অনেককে ফোনে জিজ্ঞাসা করেছি, তারা এ কমিটিতে যুক্ত হতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। বাকিটা আমাদের নেতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা হবে।

এমআরআর/জেআইএম