‘উচ্ছে গ্রামে’ প্রতিদিন বিক্রি হয় ৫ লাখ টাকার উচ্ছে
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় ভুরুলিয়া ইউনিয়নের হাটছালা গ্রামে গেলেই দেখা মিলবে ফসলের মাঠভরা উচ্ছে গাছের মাচা। এই একটি মাত্র সবজি চাষ করে বদলে গেছে পুরো গ্রামের চিত্র। গ্রামজুড়ে উচ্ছে চাষের কারণে হাটছালা গ্রাম পরিচিতি পেয়েছে ‘উচ্ছের গ্রাম’ নামে। এই উচ্ছেচাষে স্বচ্ছলতা ফিরেছে গ্রামের শতাধিক পরিবারের।
গ্রামটি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ মণ উচ্ছে বাজারজাত করা হচ্ছে। প্রতিকেজি উচ্ছে বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেন চাষিরা। সেই হিসাবে এই এক গ্রাম থেকেই দিনে চার লাখ ৮০ হাজার টাকার উচ্ছে বিক্রি করেন চাষিরা।
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে হাটছালা গ্রামে ২৫ হেক্টর জমিতে উচ্ছের চাষ হয়েছে। থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ মণ উচ্ছে বাজারজাত করা হচ্ছে। তাদের দেখাদেখি পার্শ্ববর্তী কাশিমাড়ি ইউনিয়নের গোবিন্দপুর ও শংকরকাটিসহ কয়েকটি গ্রামেও বেড়েছে উচ্ছের আবাদ।
হাটছালা গ্রামের কৃষক বিশ্বজিৎ গায়েন জাগো নিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৩ বিঘা জমিতে উচ্ছে চাষ করেছেন। বর্তমানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি উচ্ছে বিক্রি করছেন। এই মৌসুমে উচ্ছে বিক্রি করে তার আয় হবে প্রায় এক লাখ টাকা।
একই গ্রামের কৃষক পতিরাম মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, উচ্ছে চাষ করতে প্রথমে ভয় পাচ্ছিলাম। উপকূলীয় এলাকায় কী হবে তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। তবে উচ্ছে চাষ আমার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। আমার আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে। বর্তমানে আমাদের গ্রামের একশোর বেশি পরিবার এই উচ্ছে চাষ করছে।
তিনি বলেন, বাগান থেকেই ব্যাপারীরা এসে উচ্ছে পাইকারি কিনে নিয়ে যান। এখানকার আবহাওয়া লবণাক্ত হলেও আমাদের গ্রামের পানি মিষ্টি। এছাড়া বেলে-দোঁআশ মাটি হওয়ায় ফসলের আবাদ ভালো হয়েছে।
কৃষক অনুপ মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে উচ্ছের আবাদ রয়েছে। শুরুতে ব্যাপারীরা প্রতি কেজি উচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কিনেছেন। বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এখান থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন ব্যাপারী গাড়িভরে উচ্ছে কিনে নিয়ে যান। ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এখানে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহাজান জাগো নিউজকে জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে হাটছালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে উচ্ছে বেচাকেনার হাট বসে। বাইরের ব্যাপারীরা এখান থেকেই পাইকারি দরে উচ্ছে কিনে নিয়ে যান। আমাদের গ্রামের উচ্ছে সারাদেশে চলে যায়।
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা জাগো নিউজকে বলেন, উচ্ছে কাঁচা তরকারি হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। পাশাপাশি এর ঔষধী গুণও রয়েছে। উচ্ছেচাষে অধিক লাভ হয়। মাটি ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ভুরুলিয়া ইউনিয়নের হাটছালা গ্রামের কৃষকেরা উচ্ছে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সব ধরনের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে শ্যামনগর উপজেলার ৫০ হেক্টর জমিতে উচ্ছের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ভুরুলিয়া ইউনিয়নের হাটছালা গ্রামেই উচ্ছের আবাদ হয়েছে ২৫ হেক্টর জমিতে। আগামীতে এই উপজেলায় উচ্ছে চাষ সম্প্রসারিত হবে।
এফএ/এএসএম