ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘সুদখোররা জানাজায় টাকা চাইতে এলে আমার শরীরটা কেটে দিয়ে দেবেন’

জেলা প্রতিনিধি | ঝিনাইদহ | প্রকাশিত: ০২:২১ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সুদখোরদের অত্যাচারে বাঁচতে পারলাম না। আমার জানাজা হবে কিনা জানি না। যদি হয় তখন সুদখোররা টাকা চাইতে এলে আমার শরীরটা কেটে ওদের দিয়ে দিবেন। এমনই এক চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন সিরাজুল ইসলাম (৫৫) নামের এক ব্যবসায়ী।

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী এলাকার এ ঘটনা ঘটে। সিরাজুল ইসলাম ওই এলাকার শহীদুল ইসলামের ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, সিরাজুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে শ্রমিকের কাজ করতেন। কয়েকবছর আগে দেশে ফিরে হলিধানী এলাকায় একটি কনফেকশনারির দোকান দিয়েছেন। সেই দোকানের আয় দিয়েই তার সংসার চলতো। হঠাৎ তার দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে গিয়ে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তবে তাকে সব সময় আমরা চিন্তায় থাকতে দেখতাম। এমনকি তার দোকানে টাকার জন্য প্রায় সময় বিভিন্ন লোক আসতো এবং খুব খারাপ ব্যবহার করতো। পরে শুনলাম তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার দুই ছেলে বিদেশে থাকে আর মেয়ে শিক্ষকতা করেন।

আরও পড়ুন: রড বহনের সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ গেলো শ্রমিকের



সিরাজুল ইসলামের পকেটে একটি চিঠি পাওয়া যায়। সেখানে লেখা রয়েছে, সুদখোরদের অত্যাচারে বাঁচতে পারলাম না। আমার জায়গা-জমি বাড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি। একেক জনের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া তার প্রায় দশগুণ পরিমাণ টাকা দিয়েও রেহাই দিলো না তারা। কেউ কেস করেছে কেউ কেউ অপমান অপদস্থ করেছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তাই বিদায় নিলাম। আমার জানাজা হবে কিনা জানি না। যদি হয় তখন সব সুদখোররা টাকা চাইতে এলে আমার শরীরটা কেটে ওদের দিয়ে দিবেন। এই সুদখোরদের বিচার আল্লাহ করবে। সুদখোরদের নাম বললাম না কিন্তু তারা সবাই টাকার জন্য আসবে। তখন বুঝতে পারবেন তারা কারা। আমি ক্ষমার অযোগ্য তবু ক্ষমা করে দিবেন।

সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ছফুরা বেগম জানান, আমার দুই ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে গিয়ে অনেকের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়েছিল। সেসব ঋণের টাকা এখন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আমার স্বামী এ টাকা পরিশোধ নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকতেন। এর মধ্যে যাদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল তারা আমার স্বামীকে বিভিন্নভাবে অপমান অপদস্থ করে আসছিলেন। মাঝেমধ্যে অনেকে ফোন দিয়েও গালিগালাজ করতেন। সবশেষ শুক্রবার সকালেও এ টাকার জন্য তারা গালিগালাজ করেছিলেন। পরে আমার স্বামী সবার অজান্তে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আমি সব সুদখোরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে পানির অভাবে নষ্ট হচ্ছে পাট

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. সোহেল রানা জানান, সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সুদখোরদের চাপে আত্মহত্যা করেছে এমন একটি চিঠি সিরাজুল ইসলামের পকেটে পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/জেএস/এএসএম