ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঝিনাইদহে পানির অভাবে নষ্ট হচ্ছে পাট

জেলা প্রতিনিধি | ঝিনাইদহ | প্রকাশিত: ১২:৫১ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বর্ষা মৌসুমেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে আছে জলাশয়। নদী, খাল, পুকুর কোথাও পানি নেই। তবু নদী ও খালের ভেতর-বাইরে গাদা করে এবং জাগ আকারে রেখে দেওয়া হয়েছে সোনালী আঁশ পাট। এখনো বৃষ্টির অপেক্ষায় দিন গুনছেন পাটচাষিরা।

কৃষকের ভরসা হয়তো বৃষ্টি হলে পানি জমবে আর তখন জাগ দেওয়ার পর পাটের যে অংশ ভালো থাকবে সেটি ঘরে তুলতে পারবে। ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার দরিবিন্নি গ্রামের খালে দেখা গেছে এমনই চিত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদরের খাজুরা, গোপালপুর, শৈলকুপার কচুয়া, মলমলি, হরিনাকুন্ডু উপজেলার দরিবিন্নি, কালীগঞ্জের বুজিডাঙ্গা, বহিরগাছীসহ অন্যান্য উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা পানির অভাবে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন পাট নিয়ে। নদী, খাল, ডোবা, পুকুরসহ অধিকাংশ জলাশয়ে নেই পানি।

আরও পড়ুন: ‘কষ্ট করে পাট চাষ করে কী লাভ’

যে জায়গাগুলোতে অল্প পানি আছে সেখানেই পাট কাটার পর একে একে জাগ দিচ্ছেন কৃষকরা। কোথাও ডোবা, খালে গর্ত করে ইঞ্জিনচালিত মেশিনের সাহায্যে সেচ দিয়ে পানি ধরে রেখে পাট জাগ দেওয়ার চেষ্টাও করছেন অনেকে। কোথাও পানির অভাবে ক্ষেতে পড়েই শুকিয়ে যাচ্ছে পাট। কোথাও আবার খালের ধারে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। একই জায়গা গাদাগাদি করে জাগ দেওয়াতেও পানি পচে নষ্ট হচ্ছে পাটের মান। এতে করে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসানে পড়ছেন কৃষকরা।

jagonews24

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ২২ হাজার ৫২৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে কাটা হয়েছে ২০ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমির পাট।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত প্রতি বিঘা জমিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাট চাষে খরচ হয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমান সময়ে স্যার, কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি, পানি সংকটসহ অন্যান্য কারণে খরচের বোঝা বাড়ছেই। ২০ থেকে ২২ হাজার টাকাতেও শেষ হচ্ছে না পাট ঘরে তোলার কাজ।

আরও পড়ুন: পানির অভাব, পাট নিয়ে বিপাকে কৃষক

চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় বৃষ্টিপাত কম হওয়াসহ পোকার কারণে স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়নি পাটের। ফলে ফলন কমে দাঁড়িয়েছে বিঘায় গড়ে ৮ থেকে ১২ মন। এদিকে এক আটি পাট কাটা থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ হয় ১৫ থেকে ১৬ টাকা। এদিকে বাজারেও মিলছে না পাটের ন্যায্য দাম। বর্তমানে প্রতি মণ পাট মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৮০০ টাকা দরে।

হরিনাকুন্ডু উপজেলার রাধানগর গ্রামের কৃষক মশিয়ার রহমান বলেন, ক্যানেলে পানি নেই। তবুও শুকনায় জাগ দিয়ে বসে আছি, যদি পানি হয় তখন পাটগুলো জাগ হবে আর সেটি ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে ঘরে তুলতে পারবো। শত শত মণ পাট এভাবে পড়ে আছে পানির অভাবে।

ঝিনাইদহ সদরের খাজুরা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, খাল, পুকুর, নদী কোথাও পানি নেই। নবগঙ্গা নদীর খাজুরার এই জায়গা কোথাও এক হাত, কোথাও দেড় হাত পানি। এরই মধ্যে জাগ দিতে হচ্ছে। পাট পানিতেও ডুবছে না, অনেক সময় কাদার উপরেই থাকছে। এতে পাটের কালার কালো হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ যদি বৃষ্টি দেয় তাহলে হয়তো শেষ মুহূর্তে আমরা কিছুটা রক্ষা পাবো।

আরও পড়ুন: সোনালী আঁশের রাজত্ব ফিরছে টাঙ্গাইলে

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী জানান, পাট কাটার পর জাগ দেওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এর কারণ এবছর বৃষ্টিপাত কম, পানিও জমেনি জলাশয়গুলোতে। এমন অবস্থায় কৃষকদের নিজস্ব ও স্থানীয় ডোবা, পুকুর বা যেকোনো জলাশয়ে মোটরচালিত মেশিন কিংবা টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি জমিয়ে সেখানে পাট জাগ দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে তিনফিট গর্ত করে পলিথিন বিছিয়ে সেখানেও পাট জাগ দেওয়া যেতে পারে।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/জেএস/জিকেএস