ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

খুললো দক্ষিণবঙ্গে রেল যোগাযোগের দ্বার, পদ্মাপাড়ে খুশির জোয়ার

আরাফাত রায়হান সাকিব | প্রকাশিত: ১১:২০ এএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

প্রথমবারের মতো আজ ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণবঙ্গে চলাচল করছে পরীক্ষামূলক ট্রেন। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ১০মিনিটের দিকে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়েছে পরীক্ষণমূলক ট্রেনটি। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত হয়ে ট্রেনটি পাড়ি দেবে প্রমত্তা পদ্মা।

এদিকে, সড়ক পথের পর রেলপথেও যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা। সকালে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া স্টেশনে কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। তারা জানান, রেল চলাচলের মাধ্যমে এ পথে যাতায়াত আরও সহজ হতে চলেছে।

আরও পড়ুন: ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গায় ছুটলো ট্রেন

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার শাহ আলম ইসলাম নিতুল বলেন, সড়ক পথের পর এবার পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে ট্রেন চলাচল করবে। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে খুবই আশাবাদী ছিলাম। শ্রীনগর থেকেও ট্রেনে করে আমরা ঢাকায় যেতে-আসতে পারবো। আমাদের ঝক্কি ঝামেলা কম হবে, ভাড়াও সাশ্রয় হবে।

লৌহজং এলাকার তরিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে এ রেললাইন আমরা নির্মাণ হতে দেখেছি। আশায় ছিলাম কবে নাগাদ এ রেলপথে ট্রেন চলাচল করবে। আজকে স্বপ্ন পূরণের আরও একটি দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে দেশ। সড়ক পথে গাড়ি চলবে, রেলপথে রেল। এতে সহজে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে দক্ষিণবঙ্গে যাওয়া-আসা করা যাবে। যোগাযোগব্যবস্থা সহজ থেকে সহজতর হলো।

প্রকল্পের ট্র্যাক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ শওকত আলী বলেন, সর্বোচ্চ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। উন্নত যত প্রযুক্তি রয়েছে সবগুলোই এই রেলপথে ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় রেল ভায়াডাক্ট এ পথে নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে রেললাইন হয়ে হয়েছে সুপার ট্র্যাক। ১২০ কিলোমিটার গতিতে এ রেলপথে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এ প্রকল্পে যুক্ত থাকতে পেরে খুব ভালো লাগছে। সবাই আনন্দিত।

প্রকল্পের এক শ্রমিক বলেন, গত দুই বছর ধরে এ প্রকল্পে কাজ করছি। কবে ট্রেন চলবে সেটি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। আজকে আমাদের একটি আনন্দঘন দিন।

কলেজছাত্র মোহাম্মদ রিয়াদ বলেন, আজকে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করবে। এরপর ১০ অক্টোবর পুরোপুরি ট্রেন চালু হবে। এই পথে সহজে সবাই যাতায়াত করতে পারবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন: দক্ষিণের মানুষের জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তন: রেলমন্ত্রী

স্থানীয়রা আরও জানান, মুন্সিগঞ্জে আগে কোনো রেলপথ ছিল না। স্বাধীনতার অর্ধশতবর্ষে রাজধানীর পাশের জেলা হলেও ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ ছিল না। আজ প্রথমবারের মতো ট্রেন ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জে আসছে যেটি একটি বড় আনন্দের বিষয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সফল ট্রেন চলাচল করেছে গত ৪ এপ্রিল। পাঁচ মাসের মাথা এবার পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা থেকে ভাঙ্গা অংশের ৮২ কিলোমিটারে প্রথমবারের মতো চলবে পরীক্ষামূলক ট্রেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এবং দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে কাজ শেষ হয়েছে গুণগত মান বজায় রেখে।

প্রকল্পের প্রকৌশলী সাদমান শাহরিয়ার জানান, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা অংশের ৮২ কিলোমিটার পথে মাওয়া, পদ্মা, ভাঙ্গাসহ মোট ১০টি স্টেশন রয়েছে। সবগুলোরই প্রায় ৯০ শতাংশের অধিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ অংশের নিমতলি, শ্রীনগর ও মাওয়াতে রয়েছে তিনটি আধুনিক স্টেশন। এগুলোর অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ জামিউল ইসলাম বলেন, সর্বোচ্চ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রেল চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে ভায়াডাক্ট। পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য আনা হয়েছে নতুন লোকমোটিভ।

আরও পড়ুন: ঢাকা-ভাঙ্গায় পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য প্রস্তুত ট্রেন

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ জানান, ঢাকা থেকে মাওয়ার অংশে দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার, ঢাকার কমলাপুর থেকে রওনা হয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি প্রথমে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছাবে। সেখানে রেলমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবেন। পরে মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা অংশে পৌঁছাবে ট্রেনটি। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সাংবাদিকদের রেলমন্ত্রীর ব্রিফিং করার কথা রয়েছে। পরে ভাঙ্গা থেকে সরাসরি ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে ফিরে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের ঢাকা থেকে ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হবে আগামী বছর। আর পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সফল হলে আগামী ১০ অক্টোবর থেকে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের রেলপথে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করবে। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এমআরআর/এএসএম