ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জীর্ণ কক্ষে চলে ৩২০ শিক্ষার্থীর পাঠদান, বৃষ্টি হলে পড়ে পানি

উপজেলা প্রতিনিধি | মিরসরাই (চট্টগ্রাম) | প্রকাশিত: ০৯:১৮ এএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাই উচ্চ বিদ্যালয়ের বেহাল দশা। জরাজীর্ণ চারটি কক্ষে চলে প্রতিষ্ঠানটির ৩২০ শিক্ষার্থীর পাঠদান। বৃষ্টি হলেই শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির সীমা থাকে না।

করেরহাট ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত কয়লা গ্রাম। ওই গ্রামে বাঙালির পাশাপাশি বাস করেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরাও। ওই গ্রামের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় নেই। এ অবস্থায় প্রায় তিন দশক আগে পশ্চিম সোনাই উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। সম্প্রতি বিদ্যালয়টি সরকারিভাবে পাঠদানের অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু অনুমোদন পেলেও পাঠদান হয় জরাজীর্ণ কক্ষে।

জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন এলাকার শিক্ষানুরাগীদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামের নামের সঙ্গে মিল রেখে কয়লা পশ্চিম সোনাই উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্থানীয়দের মাঝে শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ বাড়তে থাকে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার আগে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে করেরহাট কে এম উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে হত। এতে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের যে খরচ হতো তা অভিভাবকদের পক্ষে বহন করা সম্ভব হতো না।

এদিকে, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হলেও পাঠদানের অনুমোদন না থাকায় জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা অন্য বিদ্যালয় থেকে অংশগ্রহণ করতো। অবশেষে প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পর সম্প্রতি বিদ্যালয়টি সরকারিভাবে পাঠদানের অনুমোদন পেয়েছে। এতে এলাকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কয়লা পশ্চিম সোনাই উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক আছেন ১০ জন। বিগত ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষায় এই বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করে। বিদ্যালয়টিতে করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা, ইসলামাবাদ, রহমতপুর, পশ্চিম সোনাই, মঘপাথর, জিলতলী, শহীদপুর, সুবলছড়ি, গুজা, মরা গুজা, ওক্কাভাঙাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। ভাঙা বেড়া ও টিনশেড়ের ছাউনির জরাজীর্ণ চারটি কক্ষে চলে পাঠদান। ভবনের পাশাপাশি রয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও ওয়াশরুমের সংকট।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কয়লা পশ্চিম সোনাই উচ্চ বিদ্যালয়টি সম্প্রতি সরকারিভাবে পাঠদানের অনুমোদন পাওয়ায় এলাকার মানুষের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। তবে জরুরিভাবে একটি ভবন প্রয়োজন। ভাঙা বেড়া দেওয়া টিনশেডের চার কক্ষে অনেক কষ্টে পাঠদান করাতে হয়। বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে। তাই নতুন একটি ভবন সময়ের দাবি।

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তাদের একজন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন বলেন, এলাকার গরিব দুঃখী ও বিশেষ করে মেয়েদের কথা চিন্তা করে আমরা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিই। যাতে করে মেয়েদের বাল্যবিয়ে রোধ করা যায়। বিদ্যালয়টি সরকারিভাবে পাঠদানের অনুমোদন পাওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ফজলুল করিম জানান, কয়লা পশ্চিম সোনাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ কিলোমিটারে মধ্যে আর কোনো উচ্চ বিদ্যালয় নেই। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পর অবশেষে সরকারিভাবে পাঠদানের অনুমোদন পাওয়া গেলো। তবে একটি ভবন পেলে পাঠদানের পরিবেশ আরও বেগবান হবে।

করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমাদের অভিভাবক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সার্বিক সহযোগিতায় কয়লা পশ্চিম সোনাই উচ্চ বিদ্যালয়টি সরকারিভাবে পাঠদানের অনুমোদন পেয়েছে। এতে করে ওই এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে আরও বেশি অবদান রাখবে বিদ্যালয়টি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির খান বলেন, কয়লা পশ্চিম সোনাই উচ্চ বিদ্যালয়টি অজপাড়া গায়ে অবস্থিত। ওই এলাকায় একটি উচ্চ বিদ্যালয় খুবই প্রয়োজন। তাই উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। আশা করি, ক্রমান্বয়ে ভবনসহ সব ধরনের সংকট দূর হবে।

এমআরআর/এএসএম