ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

এরশাদ শিকদারের সেই মৃত্যুপুরীতেই আজ প্রাণ জুড়ান নগরবাসী

আলমগীর হান্নান | খুলনা | প্রকাশিত: ০৫:০৫ পিএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এক দশক আগেও খুলনা মহানগরীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এলাকা ছিল নগরীর ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এলাকা। এই এলাকাূই ছিল খুলনার শীর্ষ খুনি এরশাদ শিকদারের রাজত্ব। সেখানে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল এরশাদ শিকদার ও তার সহযোগীদের। তাদের ভয়ে খুব জরুরি কাজ না থাকলে দিনের বেলায়ও কেউ যেতে চাইতো না ওই এলাকায়।

কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সেই ঘাট এলাকাই আজ খুলনার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নগরের অভ্যন্তরে এমন একটি স্থান পেয়ে সেখানে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিনোদনপ্রেমীরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর নদের বিশুদ্ধ বাতাসে সময় কাটাচ্ছেন তারা।

বিনোদনকে কেন্দ্র করেই সেখানে গড়ে উঠেছে কয়েকশ হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান। কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের।

jagonews24

নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এলাকা। এর চারপাশে রয়েছে খুলনা নিউমার্কেট, রুজভেল্ট জেটি, বড় বাজার, আধুনিক ও পুরাতন দুটি রেলওয়ে স্টেশন ও লোক কলোনি, ফেরিঘাট, জোড়া শিবমন্দির, বিআইডব্লিউটিএ ঘাট ও সরকারি খাদ্য গুদাম।

এ ঘাট কেন্দ্র করেই খুনি এরশাদ শিকদার গড়ে তোলেন তার ত্রাসের রাজত্ব। ঘাট এলাকায় তার বরফ কলই ছিল টর্চার সেল। ওই বরফ কলের মধ্যেই নির্মম নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছেন জানা অজানা অনেকে। পরিস্থিতি এমন ছিল যে দিনের বেলাতেও ওই এলাকায় যেতে ভয় পেতো মানুষ।

দীর্ঘ চার দশক ধরে এরশাদ শিকদার এখানে তার রাজত্ব চালিয়েছে। শুধু ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট নয়, ডাব ঘাট, মাছ ঘাট, ডেল্টা ঘাট, স্কীডঘাটসহ পুরো ২১ নম্বর ওয়ার্ড জুড়েই ছিলো রাত রাজত্বের আওতায়।

jagonews24

তবে ২০০৪ সালের পর থেকে পাল্টাতে শুরু করে পরিস্থিতি। ২০০৪ সালের ১০ মে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু কার্যকর করা হয় খুলনার তথা দেশের কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের।

তবুও আতঙ্ক থেকে যায় খুলনাবাসীর মধ্যে। কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের আস্তানা হিসেবে পরিচিত ঘাটগুলোতে ভুলেও পা রাখতো না সাধারণ মানুষ। এমনকি এরশাদ শিকদারের ফাঁসির পরও মাদক বিক্রেতা ও অসামাজিক কাজের জায়গা হিসেবে পরিচিত ছিল এই ঘাট এলাকা।

২০১৩ সালে জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভৈরব পাড়ের সড়ক সংস্কার করা হয়। খুলনা সিটি করপোরেশন এই কাজ বাস্তবায়ন করে। সেসময় ভৈরব তীরে বসানো হয় প্রতিরক্ষা ব্লক, টাইলস বসানো হয় ফুটপাতে, দর্শনার্থীদের বসার জন্য স্থাপন করা হয় চেয়ার ও ছাতা, নদীর তীরে তিনটি গ্যালারি, লাইটিং ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়। আর তাতেই পাল্টে যায় ভৈরব পাড়ের চিত্র। ভৈরব নদের তীরে এমনভাবে সড়ক নির্মাণ করা হয় যা খুলনার সবচেয়ে বড় বিনোদন কেন্দ্রের তকমা এনে দেয় স্থানটিকে।

jagonews24

বর্তমানে জোড়াগেট থেকে বড়বাজার পর্যন্ত ভৈরবের পাড় দিয়ে হাঁটলে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব হয়। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা যাই হোক খোলা আকাশের নিচে ভৈরবের নির্মল বাতাস উপভোগ করতে ছুটে আসে মানুষ। শীতল বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে যায় দর্শনার্থীদের। সন্ধ্যার পর ভৈরবের এ দুই ঘাট এলাকায় জ্বলে ওঠে বৈদ্যুতিক আলোর ঝলকানি। যে কারণে রাত ১০-১২টা পর্যন্ত জটলা লেগে থাকে ঘাট এলাকায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকায় এখানে গড়ে উঠেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী খাবারের হোটেল ও দোকান। রয়েছে ভ্রাম্যমাণ চা, কফি, চটপটি, ফুচকা বিক্রেতার দোকান।

এখানকার চা দোকানি রহিমা বেগম (৬৭) বলেন, সকাল থেকেই এখানে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। দিনের অর্ধেক অংশ থাকে শ্রমিকদের দখলে আর বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থাকে ঘুরতে আসা মানুষের দখলে।

jagonews24

ফুচকা বিক্রেতা সজল বলেন, আগে তিনি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ফুচকা বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন এখানেই বিক্রি করেন।

শুধু সজল নন, তার মতো আরও অনেকেই এখানে ফুচকা ও চটপটি বিক্রি করে সংসার চালান।

ভৈরবপাড়ে ঘুরতে আসা নগরীর নিরালা এলাকার বাসিন্দা রাশেদা করিম বলেন, খুলনায় ঘুরতে যাওয়ার মতো স্থান খুব বেশি নেই। ধারেকাছে এমন একটা স্পট হওয়ায় এখানে মাসে ২-১ বার পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন তিনি।

খুলনা সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন বলেন, অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে ঘাট এলাকাকে এই পরিস্থিতিতে নিয়ে আসার জন্য। সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এ ঘাট এলাকার উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। তার প্রচেষ্টায় জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থসহায়তা মিলেছে। এক সময়ের মৃত্যুপুরী আজ নগরীর সবচেয়ে বড় বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

এফএ/এমএস