ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সম্পত্তি লিখে বাবা-মাকে বাড়িছাড়া করলো ছেলেরা

জেলা প্রতিনিধি | নেত্রকোনা | প্রকাশিত: ১২:২৫ এএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

‘তারার ঘরো রাইখা আমারে কয়েকদিন ভাতও দিছে না। তারা রান্না কইরা খাইয়া গেছে। পরে আমি নিজে নিজে খাইছি। কয়েকদিন পরে ঝগড়া লাইগা ছেলের বউ আমারে লাত্তিয়া ঘরতে বাইর করে দিছে। আর আমারে কইছে আমি না কি তারার ঘরের এইটা-ওইটা চুরি কইরা লাই। তারার ঘরো টাকা রাখলে টাকা থাহে না। পরে আমি কইছি এহন তো কইছে ২০০ টাকা নাই, আরেকদিন কইবো পাঁচ লাখ টাকা নাই, আমি চুরি করছি। তাই লজ্জায় বাড়ি ছাইরা এইনে এই ঘরো থাকতাছি, বৃষ্টি আইলে ঘরের ভেতরে পানি পড়ে।’

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধা বেলি রাণী দাস। এখন তিনি তার বৃদ্ধ স্বামী সুরেশ চন্দ্র দাসকে (৭০) নিয়ে ছেলেদের ঘর ছেড়ে ছোট্ট কুঁড়েঘরে কোনোমতে বসবাস করছেন। অথচ তাদের এক সময় ছিল সম্পত্তি। কিন্তু সেই সম্পত্তি কৌশলে নিজেদের নামে লিখে নিয়েছেন তিন ছেলে।

আরও পড়ুন: বাবা-মা সন্তানের কাছে কী চায়?

অভিযোগ রয়েছে, ছেলের স্ত্রী এখন তার শ্বশুরকে টাকা চুরির অপবাদ দেন। ফলে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তাদের ছাড়তে হয়েছে বাড়ি। শুধু তাই নয়, পেটের তাগিদে ভিক্ষাও করেছেন তারা।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধুপাড়া এলাকার বাসিন্দা তারা।

বেলি রাণী দাস জাগো নিউজকে জানান, চার ছেলে সন্তান নিয়ে ছিল তাদের সংসার। স্বামী ছিলেন সহজ-সরল। সেই সরলতার সুযোগ নিয়ে কৌশলে শেষ সম্বলের ২০ শতাংশ জায়গার ১৮ শতাংশ তিন ছেলে শ্যামল, সাগর ও সজল তাদের নামে লিখে নেন। সবার বড় ছেলে পরিমল সরল হওয়ায় তাকেও সম্পত্তি দেয়নি। সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর ছেলেদের সঙ্গেই তাদের ঘরে থাকতে হয়েছে।

কিন্তু যখন তারা ছেলেদের ঘরে থাকতেন, তখন তাদের প্রায়ই না খেয়ে থাকতে হতো। ফলে পেটের তাগিদে দুজনে রাস্তায় ভিক্ষা করে খেয়েছেন। এরপর একদিন ঘরের টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে ছেলের বউ ঘর থেকে মারধর করে বের করে দেন এই বাবা-মাকে। এসব কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে এখন নদীর পাড়ে কাপড় আর বস্তার তৈরি ছোট্ট ঘরে বসবাস করছেন তারা।

আরও পড়ুন: বৃদ্ধ বাবা-মাকে রাস্তায় ফেলে যাওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ: তথ্যমন্ত্রী

বাবা সুরেশ চন্দ্র দাস জাগো নিউজকে জানান, তিন ছেলে তার টিপসই চাইলে তিনি টিপসই দিয়ে দেন। এরপর ছেলেরা যা শিখিয়েছে তাই বলেছেন। এভাবে যে সম্পত্তি তারা নিজেদের নামে লিখে নিয়েছেন তিনি বুঝতে পারেননি।

বড় ছেলে পরিমল চন্দ্র দাস জানান, তিন ভাই বাবার সব জায়গা তাদের নামে লিখে নেওয়ার এক বছর পর জানতে পেরেছেন। পরবর্তীতে দরবারে তিন ভাই মিলে জায়গা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তারা ফেরত দেননি।

অভিযুক্ত ছেলেদের মধ্যে দ্বিতীয় ছেলে শ্যামল চন্দ্র দাসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, বাবা-মায়ের সব অভিযোগই মিথ্যা। বাবা নিজের ইচ্ছায় আমাদের নামে জায়গা লিখে দিয়েছেন। আর বাড়ি ছাড়া আমরা করিনি। তারাই সেখানে গিয়ে থাকছেন। আমি প্রতিমাসে টাকাও দিচ্ছি।

টাকা চুরির অপবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে এ কথা এড়িয়ে যান তিনি।

আরও পড়ুন: ছেলের নির্যাতনে ঘরছাড়া মা-বাবা

এ প্রসঙ্গে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নুরুল আকরাম খান বলেন, তিন ছেলে মিলে তাদের বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নেওয়ার ঘটনা সত্য। আমি তাদের অনেকবার বলেছি, কিন্তু তারা শুনেনি। ছোট দুই ছেলে খুবই খারাপ। যদিও বড় ছেলে বাবা-মাকে দেখাশোনার কিছুটা চেষ্টা করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এইচ এম কামাল/জেডএইচ/