রাজশাহীতে তারে আটকে আছে অত্যাধুনিক আগুন নেভানোর গাড়ি
রাজশাহীতে দিন দিন বাড়ছে বহুতল ভবন। নগরীতে বর্তমানে সর্বোচ্চ ভবনটি ২২তলা। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহীর সক্ষমতা ছিল মাত্র সাড়ে তিনতলা পর্যন্ত। ফলে আগুন ঝুঁকি নিয়ে চলতো রাজশাহীর বহুতল ভবনগুলো। সেই ঝুঁকি কমাতে গত ১৫ জুন ৬৮ মিটার টার্ন টেবল ল্যাডার (টিটিএল) গাড়ি সংযুক্ত হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরে। এর ফলে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ২৪তলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর সক্ষমতা অর্জন করে।
কিন্তু এই গাড়ি চলাচলের প্রধান বাধা এখন ডিস ও ইন্টারনেটের তার। এসব তারে আটকে যাচ্ছে অত্যাধুনিক এই অগুন নেভানোর গাড়িটি। এতে করে বহুতল ভবনগুলো আগুন ঝুঁকিতেই থেকে যাচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গত ১৬ অক্টোবর জার্মানির সর্বাধুনিক প্রযুক্তির দুটি (৬৮ মিটার) টিটিএল গাড়ি ফায়ার সার্ভিসে যোগ হয় দেশে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এদিন ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে গাড়ি দুটির উদ্বোধন করেন। এর একটি রাজশাহীতে দেওয়া হয়েছে। গাড়িটির উচ্চতা ১৪ ফুট। এছাড়ও গাড়িটি চলতে ২০ ফুটের রাস্তা দরকার। গাড়িতে ২০-২৩টি সেন্সর আছে। এর একটি নষ্ট হলে পুরো গাড়িটিই অচল হয়ে যাবে।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, আমাদের জন্য বড় পাওয়া এই গাড়ি। তবে এটির ব্যবহার নিশ্চিত করতে তার অপসারণ জরুরি। তা না হলে কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটলে এটি দ্রুত পৌঁছাতে পারবে না। তখন বড় ধরনের ক্ষতি হবে। তাই এখনই এটিকে চলাচলের জন্য উপযোগী করা উচিৎ।
রাজশাহী রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশনের (রেডার) সভাপতি তৌফিকুর রহমান লাভলু বলেন, আমরা বহুতল ভবন তৈরির সঙ্গে আছি। যখনই কোনো বহুতল ভবন হয় আমাদের আগে ফায়ার সর্ভিসের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু আমাদের বহুতল ভবনের আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ও পানির ব্যবস্থার জন্য মিটিংয়ে বার বার তাদের ও সিটি করপোরেশনকে বলেছি। বার বার দাবিও জানানো হয়েছে। আমরা শুধু বলতে পারি। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে এগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক ওহিদুল ইসলাম বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরের অধীনে বহুতল ভবন থাকা সত্ত্বেও ছিল না বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর মতো সক্ষমতা। এই টিটিএল গাড়ি রাজশাহীতে আসার মধ্য দিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তর ২৪তলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে।
তবে রাজশাহীতে দুটি সমস্যা রয়েছে, সেটি হলো এখনও অনেক রাস্তা সরু। এসব রাস্তায় গাড়ি প্রবেশ করা ও গাড়ি ঘোরানোর ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হবে। আবার অনেক রাস্তায় ডিসলাইন ও বৈদ্যুতিক তার অত্যন্ত নিচে রয়েছে। এ কারণে এসব রাস্তায়ও গাড়িটি চালাতে সমস্যা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে এই গাড়ি আসার পর থেকে ব্যবহার হয়নি। তবে আমরা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করেছি। এরইমধ্যে শহরের কিছু জায়গায় আমরা গিয়েছি। তবে রাস্তার তারের বাধায় অনেক কষ্ট করে আমাদের যেতে হয়েছে। এছাড়াও গাছ ও অন্যান্য কিছু নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রকে এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছি।
তিনি বলেন, রাতে এই গাড়ি চলাচল একবারেই অসম্ভব। এর প্রধান কারণ তার। এই গাড়িতে যে সেন্সরগুলো আছে এগুলো যদি কোনোটা নষ্ট হয় তাহলে এই গাড়ি আর চলবে না। তাই এটির জন্য তার অপসারণ দরকার। এছাড়াও গাড়িটি রাখার জন্য আমাদের কোনো শেড নেই। তাই বর্তমানে এটিকে বাইরেই ঢেকে রাখছি। একটি শেডও নির্মাণের জন্য পিডাব্লিউডিকে বলেছি।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর-ইসলাম বলেন, এটি আমাদের দপ্তরের কাজ না। এটি রাজস্ব শাখা দেখে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. নূর-ঈ-সাইদ বলেন, আমরা বার বার তার সরানোর জন্য বলেছি। এছাড়াও নোটিশ করেছি কর্তৃপক্ষকে। অভিযানও চালিয়েছি। তারের জন্য যে অগুন নেভাতে পারছে না এটি জানা ছিল না। আমরা একদিকে তার সরালে তারা অন্যদিকে তার লাগায়। এখনতো মেয়র নেই। আগামী মাসে মেয়র দায়িত্ব নেবে। তখন এই বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এফএ/জেআইএম