মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু
১৩২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) থেকে লেকে মাছ ধরা যাবে।
গত ১৯ জুলাই হ্রদে তিন মাসের মৎস্য আহরণের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলেও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দুই দফায় আরও একমাস ১২ দিন মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এখন জেলে পল্লি ও ফিসারিঘাটে চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। জেলে ও ব্যবসায়ীদের আশা, এবার দীর্ঘ সময় হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ ধরা পড়বে।
৭২৫ বর্গকিলোমিটারের কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করা, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ১-৩১ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়। তবে এবার হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ১ মের পরিবর্তে আরও এগিয়ে এনে ২০ এপ্রিল থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত তিন মাসের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু এরমধ্যেও কাপ্তাই হ্রদে পরিমাণ পানি না থাকায় দুই দফায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়। ১ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হচ্ছে হ্রদে মৎস্য আহরণ।
আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে বিপাকে সরকার
বিএফডিসির সূত্র অনুযায়ী, হ্রদে ১০৫ এমএসএল (মিনস সি লেভেল) পানি থাকলেই অবমুক্ত করা পোনা বেড়ে উঠতে ও মা মাছগুলো প্রাকৃতিক প্রজননের পর্যাপ্ত সুযোগ পায়। তবে এবার কাপ্তাই হ্রদে কম বৃষ্টিপাত ও ভারতের মিজোরাম থেকে পানি না আসায় হ্রদের পানি প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি। স্বাভাবিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং বর্ষার শেষ মুহূর্তে বৃষ্টিপাত হওয়ায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও অবমুক্ত করা পোনা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি। এ কারণে হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছগুলো বেড়ে উঠার যথেষ্ট পানি না পাওয়ায় জেলা প্রশাসন কাপ্তাই হ্রদে আরও দুই মেয়াদে এক মাস ১২দিন মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ায়।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবরে এখন জেলে পল্লিগুলোতে চলতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। শহরের অদূরেই নতুন জেলেপল্লি ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে জেলেরা নৌকার আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে রেখেছে হ্রদের পাড়ে। কেউবা মাছ পরিবহনের বোটে রং লাগানোর কাজে ব্যস্ত দিন পার করছেন। বসে নেই নারীরাও, পুরুষের পাশাপাশি ঘরে বাইরে চলছে জাল সেলাইয়ের কাজ। পুরাতন জাল সংস্কার বা নতুন জাল সেলাইয়ে ব্যস্ত তারা।
জেলে মতিলাল দাস বলেন, তিন মাসের জায়গায় প্রায় সাড়ে চার মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি হ্রদে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য। আশা করছি এবার আশানুরূপ মাছ পাওয়া যাবে।
পুরান জেলে পাড়ার বাসিন্দা সজল দাস বলেন, তিন মাসের ভিজিএফ ২০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র দুই মাসে পেয়েছি। আমাদের চলতে কষ্ট হচ্ছে। তবে খুলে দেওয়ার খবরে আমরা খুবই খুশি।
রাঙ্গামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বলেন, এবার প্রায় সাড়ে চার মাস হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ ছিল। তাই আশা করছি এবার মাছের আহরণ ভালো হবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছে। বর্ষার শেষদিকে বৃষ্টিপাতের পর মাছ বৃদ্ধিতে কিছুটা সময় পাওয়ার আশা করছি মাছের সাইজও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছর মাছ আহরণ শুরুর প্রথম কয়েকদিন মাছের প্রচুর চাপ থাকে, কিন্তু এত মাছের জন্য পর্যাপ্ত বরফ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় মাছ ঘাটেই পচে যায়। আমাদের দাবি ছিল, প্রথমদিকে কয়েকদিন একবেলা করে মাছ অবতরণ করা হোক। সেটাও এবার প্রশাসন নির্ধারণ করে দিয়েছে, অর্থাৎ সকাল ১২টা পর্যন্ত আসা বোটগুলো থেকে ঘাটে মাছ অবতরণ করা হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের প্রস্তুতি সেরে নেওয়া হয়েছে। পল্টুন মেরামত, মাছের অবতরণ ঘাটগুলো পুনঃসংস্কারসহ নানান কার্যক্রম শেষ হয়েছে। মাছের অবতরণ সময় নির্ধারণসহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করে আমাদের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছি। যেহেতু এবার দীর্ঘ সময় হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ ছিল আশা করছি ভালো পরিমাণ মাছ আহরণ হবে।
সাইফুল উদ্দীন/আরএইচ/জেআইএম