শ্রমিককে মারধর
লৌহজং-ঢাকা সড়কে ৪ দিন ধরে বন্ধ বাস চলাচল
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং খেতেরপাড়া-মাওয়া রুটে চার দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ রুটে চলাচলকারী হাজারো যাত্রী ও চালক। বাধ্য হয়ে ভেঙে ভেঙে যাতায়াতে গুনতে হচ্ছে দেড়-দুগুণ বেশি ভাড়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার দুপুরে উপজেলার খেতেরপাড়া স্ট্যান্ড থেকে গাঙচিল পরিবহনের একটি বাসকে আগে যেতে বাধা দেয় ইলিশ পরিবহনের অন্য একটি বাস। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে ইলিশ পরিবহনের সুপারভাইজার দেলোয়ার হোসেন গাঙচিল পরিবহনের সহকারী শিপনকে মারধর করেন।
সন্ধ্যায় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দুই পক্ষের শ্রমিকরা। এর জেরে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন দুটির মালিকপক্ষ। ইলিশ পরিবহন বন্ধ ও তাদের শ্রমিককে মারধরের ঘটনার বিচার চেয়ে বুধবার লৌহজং-বালিগাঁও সড়কের হলপট্টি এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন গাঙচিল পরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল ব্যাপারী জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে উপজেলার হাজারো মানুষ এ রুটের বাসে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। ফলে অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে যেতে হচ্ছে। কিছু মানুষ পদ্মা সেতু উত্তর থানার মোড় গিয়ে দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসা বাসে চড়ে ঢাকায় যাচ্ছে। তবে সেখানে সিট পাওয়া যায় না সবসময়।
যাত্রী আকবর মৃধা বলেন, ভেঙে ভেঙে যাতায়াত করায় আমাদের অনেক সময় লাগছে। একই সঙ্গে ভাড়াও বেশি লাগছে। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এদিকে এ পথের যাত্রীদের অভিযোগ দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই। যাত্রীরা জানা, একসময় গাঙচিল পরিবহনই ছিল এ রুটে। এ সময় বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করতো প্রতিষ্ঠানটি। ইলিশ এ রুটে বাস চলাচল শুরু করায় একচেটিয়া ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। তবে ইলিশ পরিবহনের বাসগুলো বড় হওয়ায় উপজেলার অভ্যন্তরীণ সরু সড়কে চলাচলে অন্য সব যানবাহনকেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে ও বাজারে যানজট তৈরি হচ্ছে ৭০আসনের বাসটির জন্য। দুটি প্রতিষ্ঠানের বাসের দৌড়ঝাঁপে এ ভোগান্তি আরও প্রকট হয়েছে। গাঙচিল পরিবহনের বাস সড় প্রায় সময়ই কোন্দলে জড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা।
গাঙচিল পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম ঢালী বলেন, ইলিশ পরিবহনের সুপারভাইজার বিনা কারণে আমাদের বাসের শ্রমিককে মারধর করেছে। আমরা ৩৫ বছর ধরে এ রুটে বাস চালিয়ে আসছি, যখন রাস্তা কাঁচা ছিল তখন থেকে। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে ইলিশ পরিবহন এ সড়কে আসায় আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, আমাদের বাসের আসন সংখ্যা ৪০ জনের আর ইলিশ পরিবহনের বাসের সংখ্যা ৭০ জনের। দূরপাল্লার এসব বাস এত সরু সড়কে চলাচল করায় অনেক স্থানে যানজট লেগে থাকে। তাছাড়া ইলিশ পরিবহনের বাস এ সড়কে চলাচলের অনুমতি নেই। অদৃশ্য শক্তির বলে তারা বাস চালাচ্ছে।
ইলিশ পরিবহনের সভাপতি মো. আলী আকবর হাওলাদার বলেন, এ পথে আমাদের গাড়ি চলাচলের অনুমতি রয়েছে আমাদের কাগজপত্র প্রত্যেকটি গাড়িতে আছে বরং গাঙচিলেরই গাড়ির কোনো অনুমতি নেই। আমাদের গাড়িতে যাত্রী বেশি ওঠে, তাই আমাদের গাড়ি বন্ধ করে দিতে চায় তারা। আমাদের গাড়িতে তারা ভাঙচুর করতে পারে, তাই আমরা গাড়ি বন্ধ রেখেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল আউয়াল জাগো নিউজকে বলেন, বাস বন্ধের বিষয়টি জানতে পেরে দুপক্ষকেই ডাকা হয়েছে। শুক্রবার থেকেই আবারো এ রুটে বাস চলাচল করবে। গাঙচিলের অনুমতি আগে থেকে আছে এটা জানি, একইসঙ্গে ইলিশ পরিবহন লৌহজংয়ের মাওয়া থেকে ঢাকায় বাস চলাচল করছে ১৫বছর ধরে। বিআরটিসি যেহেতু একজেলা থেকে অন্য জেলার রুট পারমিট দিয়ে থাকে।
ইউএনও আরও বলেন, মাওয়া থেকে ঢাকা যাওয়ার পারমিট আছে তাই তারা (ইলিশ পরিবহন) উপজেলা সড়কে চলতে পারবে। এরপরও আমরা কাগজপত্র যাচাই করবো। আর কোনো পরিবহনই যত্রতত্র সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখতে পারবে না। উপজেলার ক্ষেতেরপাড়ায় বাস রাখার স্ট্যান্ড আছে।
আরাফাত রায়হান সাকিব/এসজে/জেআইএম