আইভি রহমান ‘বেঁচে আছেন’ ভৈরববাসীর হৃদয়ে
মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভানেত্রী আইভি রহমানের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২৪ আগস্ট মারা যান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী।
মেঘনাপাড়ের মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীকে আজও ভুলতে পারেনি। তিনি বেঁচে আছেন ভৈরববাসীর হৃদয়ে। সুযোগ পেলেই তিনি ভৈরবে ছুটে আসতেন। রাজনৈতিক কর্মসূচি ছাড়াও বিভিন্ন দুর্যোগে জনগণের পাশে দাঁড়াতেন এই মহীয়সী নারী।
আরও পড়ুন: আইভি রহমানের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
২৪ আগস্ট দিনটিকে ভৈরববাসী অত্যন্ত বেদনাময় দিন হিসেবে পালন করে। আইভি রহমান ভৈরবের সর্বস্তরের মানুষের কাছে ছিলেন ‘আইভি ভাবি’। তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী। বর্তমান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মা।
আইভি রহমানের পুরো নাম জেবুন নাহার আইভি। তিনি ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে আওয়ামী লীগ নেতা (পরে রাষ্ট্রপতি) জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় রহমান। ১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই ভৈরবের চন্ডিবের গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। তার বাবা জালাল উদ্দিন আহমেদ ছিলেন তৎকালীন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ। মা হাসিনা বেগম ছিলেন একজন গৃহিণী। আট বোন, চার ভাইয়ের মধ্য আইভি ছিলেন পঞ্চম।
রাজনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াও আইভি রহমানের বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। তার বড় বোন শামসুন্নাহার সিদ্দিক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার শাশুড়ি। সেই সূত্রে আইভি রহমান শেখ রেহানার খালা শাশুড়ি। এক ছেলে, দুই মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে তার ছিল সুখের সংসার।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ সেই দিনের কথা মনে পড়লে শিউরে ওঠেন কাশেম
দেশ স্বাধীনের আগে আইভি রহমান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে পা রাখেন। ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শোষিত বাংলা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সদালাপী আইভি রহমান ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেন। তারপর ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সালে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় মহিলা সংস্থা ও জাতীয় মহিলা সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন। নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ও অবহেলিত শিশু, প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে তার গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল।
গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানের আহতের খবরে ভৈরববাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। হরতাল, মিছিল, সমাবেশ ও সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দিয়ে শহর উত্তপ্ত করে ভৈরবের সর্বস্তরের মানুষ। তার কথা ১৯ বছরেও ভুলতে পারেনি মেঘনাপাড়ের মানুষ। তার কথা মনে পড়লে ভৈরবের সর্বস্তরের মানুষ আজও অশ্রুসজল হয়। প্রিয় নেত্রীর কথা স্মরণ করে কাঁদে ভৈরববাসী।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সাবেক একান্ত সচিব সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা বলেন, আইভি ভাবি ছিলেন জিল্লুর রহমানের চালিকাশক্তি। তিনি সারাজীবন ভৈরব-কুলিয়ারচরের মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি সবসময় মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। আইভি ভাবিকে হারিয়ে আমরা একজন অভিভাবকশূন্য হয়েছি। তিনি ছিলেন ভৈরববাসীর প্রিয় নেত্রী। আজও ভৈরববাসী প্রিয় আইভি ভাবির জন্য নীরবে কাঁদে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সায়দুল্লাহ মিয়া বলেন, জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ছাড়াও তিনি ছিলেন তার রাজনীতির পথধারক। তার মৃত্যু আজও আমরা ভুলতে পারি না। তবে তিনি এখনো ভৈরববাসীর হৃদয়ে বেঁচে আছেন।
আরও পড়ুন: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় দ্রুত কার্যকর করা উচিত: প্রধানমন্ত্রী
মা আইভি রহমানের বিষয়ে একমাত্র ছেলে বিসিবি সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ১৯ বছর মা হারা জীবনযাপন করছি। মাকে শুধু আমি হারাইনি, দেশবাসীও হারিয়েছে। এই নারকীয় ঘটনার বিচারে অপরাধীদের সাজার রায় হলেও কার্যকর হয়নি। রায় কার্যকর হলে আমরা শান্তি পাব।
আইভি রহমানের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) তার জন্মস্থান ভৈরবে কোরআন খতম, স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধাঞ্জলি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
রাজীবুল হাসান/এমআরআর/এএসএম