ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ভাঙন আতঙ্ক

নির্ঘুম রাত কাটছে মধুমতি পাড়ের বাসিন্দাদের

জেলা প্রতিনিধি | ফরিদপুর | প্রকাশিত: ১০:১৫ এএম, ২০ আগস্ট ২০২৩

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় চোখের পলকেই মধুমতি নদীর গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে মাথাগোঁজার একমাত্র ঠিকানা। বেঁচে থাকার জন্য ছাড়তে হচ্ছে বাপ-দাদার ভিটে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদীতীরের প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবারের। এছাড়াও ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঁশতলা বাজার, একাধিক পাকা সড়ক, দুটি মসজিদ, মাদরাসা, ঈদগাহ ও কবরস্থানসহ শত শত বিঘা ফসলি-জমি, গাছপালাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পাঁচুরিয়া ও উত্তর চরনারানদিয়া গ্রামে মধুমতি নদী তীরবর্তী প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে মধুমতিতে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গা। এতে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০টি বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। অনেকেই সব হারিয়ে দিন কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে। অনেকে শেষ সম্বল ঘরবাড়ি, গাছপালা নিরাপদস্থানে সরিয়ে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুন: ‘হামাক তিস্তার ভাঙন থাকি বাঁচান’

অন্যদিকে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন পয়েন্টে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলানোর কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে সেগুলো প্রয়োজনের চেয়ে একেবারেই কম বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

নির্ঘুম রাত কাটছে মধুমতি পাড়ের বাসিন্দাদের

পাঁচুরিয়া এলাকার বাসিন্দা রাহেলা বেগম (৬২) জাগো নিউজকে বলেন, সারাদিন নদীর তীরে বসে থাকি। কখন সবকিছু ভেঙে নিয়ে যায়। রাতেও ঘুম আসে না। কোনোমতে ঘুম এলেও ঘুমের মধ্যে হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি, এই বুঝি ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে যায়।

উত্তর চরনারানদিয়ার মজিবুর মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকদিন আগে নদীতে আমার বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। এখন আর কিছুই নেই। একেবারে নিঃস্ব। আমার মায়ের বয়স ৯০ বছরের মতো। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে নদী তীরে অন্যের জমিতে একটি ছাপরা তুলে কোনোরকম বেঁচে আছি। এখন সেই ছাপরা ঘরও যেকোনো সময় নদীতে বিলীন হতে পারে। এরপর যে কোথায় যাবো সে চিন্তায় আছি।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জোলেখা বেগম বলেন, ২০ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। স্বামীর রেখে যাওয়া সম্বল বলতে এই ভিটে। তাও যেকোনো মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এরপর কোথায় যাবো, কী করবো ভেবে পাই না। সারারাত ঘুম তো দূরে থাক, সবসময় ভয়ে থাকি এই বুঝি ভিটে-বাড়ি নদীর পেটে চলে যায়।

আরও পড়ুন: ব্রহ্মপুত্র-তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

চরনারানদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ইয়াছিন মোল্লা বলেন, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও বেড়েছে। ভাঙন ঠেকাতে পাউবো জিওব্যাগ ফেলেছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সন্তোষ কর্মকার বলেন, মধুমতির ভাঙন এলাকায় বরাদ্দ অনুযায়ী আপদকালীন জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। অক্টোবর থেকে নদীভাঙন এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।

এন কে বি নয়ন/জেএস/জেআইএম