ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ছেলে-নাতি মিলে করেন বাড়ি ছাড়া, বৃদ্ধকে ঘরে তুলে দিলেন ইউএনও

জেলা প্রতিনিধি | যশোর | প্রকাশিত: ০৪:৩৮ এএম, ১৮ আগস্ট ২০২৩

যশোরের চৌগাছায় ছেলে ও নাতির অত্যাচারে বাড়ি ছাড়ার আড়াই মাস পর এক বৃদ্ধকে তার নিজ বাড়িতে তুলে দিয়েছেন ইউএনও। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের দেবিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বৃদ্ধ মতিয়ার রহমান (৭০) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সুগার মিলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী।

মতিয়ার রহমান চাকরি করে যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়ক লাগোয়া দেবীপুর গ্রামে পাঁচ বিঘা জমি কেনেন। তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ছেলে শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় ১৯৯১ সালে নাবালক ছেলে আব্দুল হামিদের নামে জমির সিংহভাগ তিনি দানসত্ত্ব দলিল করে দেন। পরে পৈত্রিক জমিরও বেশিরভাগ ছেলের নামে লিখে দেন মতিয়ার। বাড়িসহ মাত্র পাঁচ শতক জমি রাখেন নিজের নামে। তার স্ত্রী মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে।

সম্প্রতি লিখে দেওয়া সেই জমি ছেলে আব্দুল হামিদের নামে নামজারিও সম্পন্ন হয়। এরইমধ্যে ছেলে আব্দুল হামিদ বাবাকে বলেন, আমি শ্বশুর বাড়ি এলাকায় জমি বর্গা চাষ করবো। তোমার জমি বন্ধক রেখে টাকা দাও। বৃদ্ধ মতিয়ার রহমান কয়েক বিঘা জমি বন্ধক রেখে, গাছ বিক্রি করে এবং নিজের কাছে থাকা টাকা মিলিয়ে নগদ ছেলেকে জমি চাষাবাদ করার জন্য ৫ লাখ ১২ হাজার টাকা দেন। এরপরই বাবার ওপর নেমে আসে ছেলে আব্দুল হামিদ এবং নাতি আমির হামজার অত্যাচার। ছেলে ও নাতির অত্যাচারে বৃদ্ধ মতিয়ার মাঝে মাঝেই মেয়েদের বাড়িতে গিয়ে থাকেন। ছেলে আব্দুল হামিদ স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ির গ্রামে চলে যান এবং সেখানে জমির চাষ করতে থাকেন।

অন্যদিকে, বাড়িতে নাতি আমির হামজা এবং বৃদ্ধ থাকেন। প্রায় আড়াই মাস আগে বৃদ্ধের নাতি তাকে মারধর করে বাড়ি ছাড়া করেন। তাকে হুমকি দেওয়া হয় এবার বাড়িতে আসলে মেরে ফেলা হবে। বৃদ্ধ ভয়ে আশ্রয় নেন পাশের গ্রামে মেয়ের বাড়িতে। সেখানে খাওয়া-দাওয়া করেন আর দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান মসজিদে। বাড়িতে ফেরার জন্য বৃদ্ধ নানা জনকে ধরেন। কোনো কাজ হয় না। ওয়ার্ডের মেম্বার, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, ইউপি চেয়ারম্যান এমনকি থানা-পুলিশের স্মরণাপন্ন হন বৃদ্ধ। তবে ছেলে ও নাতি কোনোমতেই সে ফায়সালা মানতে রাজি হন না।

একপর্যায়ে বৃদ্ধ মতিয়ার রহমান চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে ইউএনও উপজেলার সার্ভেয়ার এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন ওই জমি পরিমাপ করে বৃদ্ধের জমি বৃদ্ধের কাছে বুঝিয়ে দিতে। সেখানে সার্ভেয়ার জহির উদ্দিন ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার সঙ্গেও বৃদ্ধের নাতি আমির হামজা খারাপ ব্যবহার করেন। পরে বুধবার (১৬ আগস্ট) ইউএনও বৃদ্ধের ছেলে ও নাতির কাছে নির্দেশনা পাঠান বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার মধ্যে বৃদ্ধের কাছে জমি ও বাড়ি বুঝিয়ে দিতে।

তাতেও কাজ না হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউএনও ইরুফা সুলতানা পাতিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান লাল, হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান, পাতিবিলা ইউপির কয়েকজন মেম্বার এবং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে নিয়ে বৃদ্ধ মতিয়ার রহমানের বাড়িতে যান। সেখানে বৃদ্ধের ছেলে আব্দুল হামিদ, পুত্রবধূ এবং নাতি আমির হামজাকে নিয়ে বসে বৃদ্ধ মতিয়ার রহমানকে তার বাড়ি বুঝিয়ে দেন। প্রথমে রাজি না হলেও ছেলে আব্দুল হামিদ একপর্যায়ে বাবার কাছ থেকে নেয়া পাঁচ লাখ ১২ হাজার টাকার মধ্যে তিন লাখ টাকা দিতে সম্মত হন। পরে ইউএনও বৃদ্ধ বাবা, তার ছেলে, পুত্রবধূ এবং নাতিকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেন।

বৃদ্ধ মতিয়ার রহমান বলেন, আমি এখন খুশি। ইউএনও ম্যাডাম বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, অনেকদিন ধরেই তাদের পারিবারিক এই দ্বন্দ্ব চলছিল। কোনোভাবেই বিষয়টি মিটছিল না। অবশেষে ইউএনওর হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হলো।

পাতিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান লাল বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমার ইউপি মেম্বাররা কয়েকবার বসলেও সমাধান হয়নি। অবশেষে বিষয়টির সমাধান হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, বৃদ্ধের অভিযোগের ভিত্তিতে সার্ভেয়ার ও নায়েবকে জমিটি মেপে সমাধান করে দিতে পাঠানো হয়। সেখানে তার নাতি সার্ভেয়ারের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে। তিনি আমাকে জানান। ভাই-বোনদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে আব্দুল হামিদ বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করেন। বিষয়টি তাদের বাড়িতে গিয়ে সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।

মিলন রহমান/এমআরআর