‘অনেক বছর পর শান্তিতে ঘুমাইতে পারবো’
আশ্রয়ণ ২ প্রকল্পের আওতায় শেরপুরে মাথার গোঁজার ঠাঁই পেলো ১৮৭০টি প্রান্তিক পরিবার। এর আগে নকলা, নালিতাবাড়ি ও ঝিনাইগাতী উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হলেও সদর ও শ্রীবরদী উপজেলা মুক্ত হলো আজ।
বুধবার (৯ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরপুর জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেন। উপকারভোগীদের মাঝে কবুলিয়ত রেজিস্ট্রেশন ও ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই পেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এসব মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থা। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে চায় উপকারভোগী এসব ছিন্নমূল মানুষ। এদিকে উপকারভোগীদের জন্য কর্মসংস্থানসহ জীবনমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
শেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্যমতে, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গঠনসহ দেশের প্রতিটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তৃণমূল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য একক গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে শেরপুরে।
এ কার্যক্রমের আওতায় শেরপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পর আর্থিক সহযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ৭৯৭টি এবং চতুর্থ পর্যায়ে ৯১৯টিসহ সর্বমোট ১৭১৬টি একক গৃহের বরাদ্দ পাওয়া যায় এবং গুচ্ছগ্রাম ও অন্য উপায়ে ১৫৪টিসহ মোট ১৮৭০টি ভূমিহীন, গৃহহীন ও আশ্রয়হীন তৃণমূল ও প্রান্তিক পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
এরইমাধ্যমে জেলায় ভূমিহীন, গৃহহীন ও আশ্রয়হীন না থাকায় আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হলো শেরপুর।
জেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি আশ্রয়ণে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছেন উপকারভোগীরা। স্বামী সন্তান হারা হনুফা বেওয়া। ঢাকায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাওয়ার এক পর্যায়ে পড়ে গিয়ে কোমর ভাঙার পর ঠাঁই হয়নি কোথাও। তারও ঠাঁই হয়েছে নালিতাবাড়ির বেলতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে।
হনুফা বলেন, ‘অনেক বছর পর আজকে শান্তিতে ঘুমাইতে পারবো। কোমরের ব্যথায় উঠতেই পারতাম না, এখন মাথার ওপর চাল হইছে। নিজের একটা ঘর হইছে। শেখ হাসিনা মায়েরে ধন্যবাদ জানাই।’
মৌমিতা হাজংয়েরও নেই নিজের জমি। এক সময় স্বামী সন্তান নিয়ে কষ্টের দিন কেটেছে অন্যের বাড়িতে। সেও ঠাঁই পেয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে। তিনি বলেন, ‘আমগরে তো মানুষ সংখ্যালঘু মনে করে। স্বামী সন্তান নিয়া কি কষ্টে থাকছি, তা বলার মত না। হাসিনা আপা একটা ঘর দিছে, এখন অন্তত সন্তানগুলারে চোখের সামনে শান্তিতে দেখতে পারমু। আপারে ভগবান ভালো রাখুক।’
শেরপুরে আশ্রয় পাওয়া সবার গল্প একই রকম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাস্তবায়নে শেরপুর জেলায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসিত হচ্ছে ১৮৭০টি ভূমিহীন, গৃহহীন ও আশ্রয়হীন তৃণমূল ও প্রান্তিক পরিবার। হরিজন ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্যও হয়েছে নিজ আবাস। দুই শতাংশ জমিসহ ঘর পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছিন্নমূল এসব মানুষ। আশ্রয় পাওয়া এসব পরিবারের মাঝে ফিরেছে আনন্দ। পরিবার নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটছে সবারই। ঘুরে দাঁড়িয়েছে এসব মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থা। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে চায় উপকারভোগী এসব ছিন্নমূল মানুষ।
রমিছা খাতুন বলেন, ‘স্বামী সন্তান নিয়া এক সময় মাইনসের বাড়িতে থাকতাম। কষ্টের শেষ ছিল না। এখন একটা ঘর পাইছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আমগোর একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে, আমরা খুব সুখে শান্তিতে থাকতে পারমু। নিজের আয় রোজগার নিজেরাই করতে পারমু। আর কোনো কষ্ট দুঃখ থাকবো না।’
এদিকে কর্মসংস্থানের জন্য স্থানীয়ভাবে সকল ব্যবস্থা রাখার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। নালিতাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খ্রিষ্টফার হিমেল রিসিল বলেন, আমরা আশ্রয়ণের জন্য যেসব জমি নির্বাচন করেছি, তা সড়ক ও বাজারের কাছাকাছি। আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া প্রতিটা বাড়ির আঙিনায় বাড়তি জমি রয়েছে। তারা চাইলে সবজি চাষ ও ফল গাছ লাগিয়েও নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে পারবে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, এ পর্যায়ে সকল পরিবারকে পুনর্বাসনের পর আর কোনো পুনর্বাসনযোগ্য পরিবার না থাকায় টাস্কফোর্স কমিটি ও যৌথ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে যদি পুনর্বাসনযোগ্য ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়, তাদেরও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতায় গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।
এসজে/জেআইএম