দৈনিক ৮ লাখ টাকার কাঠ বিক্রি হয় যে হাটে
একসময় ঘর কিংবা আসবাবপত্র তৈরিতে পছন্দের তালিকার শীর্ষে ছিল কাঠ। তবে দিন দিন কাঠের দাম বাড়ায় মানুষ এখন বিকল্প দিকে ছুটছে। বাসাবাড়িতে পারটেক্স বোর্ড, স্টিল, থাই ও লোহার ব্যবহার বেড়েছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন ব্যবসায়ীরাও। তবে নওগাঁয় কাঠের চাহিদা এখনো কমেনি। তবে কাঠ ব্যবসায়ী বেড়ে যাওয়ায় বেচাকেনা কিছুটা কমেছে।
জানা যায়, ১৯৮০ সালে নওগাঁ পৌরশহরের লিটন ব্রিজের পাশে হাতে গোনা কয়েকটি দোকান দিয়ে শুরু হয় কাঠের ব্যবসা। এরপর পর্যায়ক্রমে চাহিদার সঙ্গে বাড়তে থাকে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও। তবে স্থান সংকুলান না হওয়ায় পরবর্তীতে কাঠের হাটটি স্থানান্তর করা হয় শহরের কালীতলা এলাকায় পুরাতন গোহাটিতে। এখানে স্থায়ীভাবে আছে ৭০টি দোকান।
জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ কিনে প্রয়োজন মতো সাইজ করে আনা হয় হাটে। সাপ্তাহিক ‘বুধবার’ হাটবার হলেও প্রতিদিন এ হাটে কাঠ বেচাকেনা চলে। যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ টাকার কাঠ বেচাকেনা হয়। এ হাটে কাঁঠাল, আম, মেহগনি, আকাশমণি, জাম, নিম, কড়ই, রেইনট্রি গাছের কাঠ পাওয়া যায়। এছাড়া ঘরের ছাউনিতে স্বল্পদামের কাঠ, রুয়া-বাটামও মিলে এ হাটে। যেখানে কাঠের মান অনুযায়ী দরদাম হয়ে থাকে।
সদর উপজেলার দুবলহাটি গ্রামের আজাদ হোসেন বলেন, ঘরে নতুন টিন লাগানো হবে। এজন্য কাঠ প্রয়োজন হওয়ায় কালিতলা হাটে কিনতে আসা। ১ হাজার ২৮০ টাকার মতো কাঠ কেনা হয়েছে। দাম কিছুটা কম পাওয়া যায়। এ কাঠ এলাকায় কিনতে হলে অন্তত দেড় হাজার টাকা লাগতো।
নওগাঁ চকপ্রাচির এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী বয়োজ্যেষ্ঠ মকলেছুর রহমান। ১৯৮০ সাল থেকে কাঠ ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, সে সময় হাতেগোনা কয়েকজন কাঠের ব্যবসা করতাম। মানুষের কাছে কাঠের আসবাবপত্র পছন্দ হওয়ায় কাঠ বেশি বিক্রি হতো এবং লাভও ভালো হতো। এখন তো অনেক ব্যবসায়ী হয়েছে। বর্তমানে কাঠের ব্যবসা মন্দা ভাব। কাঠের জায়গা দখলে নিয়েছে পারটেক্স, স্টিল ও লোহার সামগ্রী। কাঠের দাম বেশি হওয়ায় সবাই কিনতে পারে না। আমাদের বেচাকেনা কমে গেছে। দিনে প্রায় ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। আবার কোনো দিন বিক্রিও হয় না।
কাঠ ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম বলেন, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ সংগ্রহ করে আকারভেদে কাঠ করা হয়। এসব কাঠ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন এলাকায় যায়। কাঠের আসবাবপত্র সৌখিন। কাঠ তো আর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস না যে এখনই কিনতে হবে। যখন যার প্রয়োজন এসে কিনে নিয়ে যায়। এ ব্যবসা করেই জীবন জীবিকা চলে।
নওগাঁ কাঠহাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি রবিউল আলম রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, সমিতিভুক্ত আড়াইশ সদস্য থাকলেও নিয়মিত ব্যবসা করছেন ৭০ জন কাঠ ব্যবসায়ী। এর বাইরেও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কাঠ বেচাকেনা হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব কাঠ চলে যায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। যেখানে প্রতিদিন কাঠ বেচাকেনা হয় প্রায় ৮ লক্ষাধিক টাকা। সে হিসেবে বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাঠ বেচাকেনা হয়।
এসজে/এমএস