ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ইলিশ তাড়াচ্ছে ডুবোচর

জুয়েল সাহা বিকাশ | ভোলা | প্রকাশিত: ০৮:০০ এএম, ২৯ জুলাই ২০২৩

ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন উপকূলের জেলেরা। অনেক জেলে পেশা বদল করছেন। এতে দিন দিন কমছে জেলের সংখ্যা। তবে ইলিশ গবেষকরা বলছেন নদীতে ডুবোচরের কারণে ইলিশের বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ।

ভোলা সদর, দৌলতখান, তজুমদ্দিন ও মনপুরার মেঘনার তীরে সরেজমিনে দেখা গেছে, মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে ভরা মৌসুমে ইলিশ শিকারের জন্য কাক ডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জাল ফেলছেন জেলেরা। কিন্তু মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। যা পাচ্ছেন তা বিক্রি করে ট্রলারের তেলের দাম পরিশোধের পর প্রায় ২০০-৩০০ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। আবার কোনো কোনো জেলের ভাগ্যে তাও জুটছে না। ফলে জেলেদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

Bhola-Elish1

সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের জেলে হাসান মাঝি, দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের মো. আলী আজগর মাঝি, মানিক মাঝি ও দৌলতখান পৌর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মনির হোসেন জানান, প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত দল বেঁধে মেঘনায় জাল ফেলছি কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। আর ৩-৪ জন মিলে পাই ছোট আকারের ৩-৪টি ইলিশ। ঘাটে বিক্রি করে তেলের টাকা পরিশোধ করে ভাগে সর্বোচ্চ একশ থেকে তিনশ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা যায়। এ দিয়ে সংসার চালে না।

দৌলতখান উপজেলার চর খলিফা ইউনিয়নের জাকির মাঝি, সৈয়দপুর ইউনিয়নের মাজেদ মাঝি ও তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের হানিফ মাঝি জানান, কয়েক বছর আগেও ভরা মৌসুমে মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তো। কিন্তু গত ২-৩ বছর ধরে ভরা মৌসুমেও নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।

Bhola-Elish1

আরও পড়ুন: বছরে দু’বার নিষেধাজ্ঞায় অস্তিত্ব সংকটে সমুদ্রের জেলেরা

তারা আরও জানান, নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশা না পাওয়ায় অনেক জেলে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে রিকশাচালাক ও শ্রমিকের কাজ করছেন। এতে জেলেদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

দৌলতখান উপজেলার চর খলিফা ইউনিয়নের মো. মমিন মাঝি, চরপাতা ইউনিয়নের রতন মাঝি ও মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের জেলে মিজান মাঝি জানান, নদীতে অসংখ্য ডুবোচর থাকায় সাগর থেকে উঠে আসার সময় ইলিশ বাধা পাচ্ছে। যদি নদীতে ডুবোচর না থাকতো তাহলে সারা বছরই ভালো মাছ পাওয়া যেত।

Bhola-Elish1

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, গত ২-৩ বছর ধরে ডুবোচর আরও বেড়েছে। অথচ এগুলো খনন করা হয় না। সরকারের প্রতি আবেদন দ্রুত এসব ডুবোচর খনন করা হোক। খনন না করলে ভাবিষ্যতে নদীতে ইলিশ না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জেলেদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের শীর্ষ মৎস্য বিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিসুল রহমানও।

Bhola-Elish1

তিনি জানান, ইলিশ মাছ গভীর সাগর থেকে ভোলার মেঘনা নদী দিয়ে প্রবেশ করে তেতুলিয়া ও পদ্মাসহ বিভিন্ন নদীতে যায়। আর দেশের প্রায় ৩৫ ভাগ ইলিশ উৎপাদন হয়ে থাকে ভোলায়। ইলিশ যখন সাগর থেকে ভোলা উপকূলের মেঘনা নদীতে প্রবেশ করতে গিয়ে ডুবোচরে বাধাগ্রস্ত হয় তখন দিক পরিবর্তন করে ফের সাগরের দিকে চলে যায়।

Bhola-Elish1

আরও পড়ুন: ৪০ বরফকলের টিকে আছে আটটি, দুর্দিনে মালিক-শ্রমিক

তিনি আরও জানান, নদীর ওই ডুবোচর চিহ্নিত করে ড্রেজিং করলে যেমন জীববৈচিত্র্য ঠিক থাকবে তেমনি মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে গভীরতা বেশি থাকবে। পাশাপাশি ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিলবে।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, ডুবোচর খননে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি খনন কাজ দ্রুত শুরু হবে। খনন হলে নদীতে ইলিশ সঙ্কট থাকবে না। তবে দ্রুত খনন করা না হলে ডুবোচর আরও বাড়বে। তখন ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী ইলিশ-শূন্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এএইচ/এমএস