ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

যশোরে দেড়মাসে ৮ হত্যাকাণ্ড, জনমনে উদ্বেগ

মিলন রহমান | প্রকাশিত: ০৮:০৭ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২৩

যশোরে গত দেড়মাসে আটটি হত্যাকাণ্ড ও মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ছয়টিই গুপ্তহত্যা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। কয়েকটি হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতার সম্ভব হলেও বাকিগুলোতে জড়িতদের চিহ্নিত করা যায়নি। তবে ছোট স্বার্থ বা লোভের বশে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে।

সমাজবিদদের মতে, এ ধরনের ঘটনা মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। যদিও পুলিশ বলছে, ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন। পারিবারিক ও জমির বিরোধ, পরকীয়াসহ বিভিন্ন কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি ঘটনার রহস্য পুলিশ উদঘাটন করেছে। বাকিগুলোর তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সূত্র জানায়, গত দেড় মাসের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে ২৬ জুন যশোর শহরের বকচর কোল্ড স্টোর মোড় এলাকায়। এখানে ছুরিকাঘাতে খুন হন মণিরামপুরের বিসমিল্লাহ মাছের আড়তের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন। ঘটনার পরপরই পুলিশ তৎপর হয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করে। পরকীয়া প্রেমের কারণে প্রতিশোধ নিতে এ হত্যাকাণ্ড বলে স্বীকার করেছেন আটকরা।

এছাড়া গত ১০ জুলাই যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের নতুনহাট পাবলিক কলেজের পেছনের একটি পাটক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয় ইজিবাইক চালক বুলবুল হোসেনের মরদেহ। এ ঘটনায়ও পুলিশ তৎপর হয়ে সাতজনকে গ্রেফতার ও ইজিবাইক উদ্ধারে সক্ষম হয়। ইজিবাইক লুটের উদ্দেশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

গ্রেফতাররা এ ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। এ দু’টি ঘটনায় পুলিশ দ্রুত রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে।

তবে গত ১৭ জুলাই যশোর-মণিরামপুর মহাসড়কের বাজুয়াডাঙ্গা গ্রামের একটি বাঁশ বাগান থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ। গলাকাটা এ মরদেহের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। পুলিশ এখনো হত্যারহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।

এর আগে গত ১৩ জুলাই সকালে মণিরামপুর উপজেলার ঝাপা ইউনিয়নের কোমলপুর গ্রামের দোদাড়িয়ায় রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার হয় আক্তারুল ইসলাম নামে এক যুবকের মরদেহ। তিনি ঝিকরগাছার বাকড়া ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা-খোশালনগর গ্রামের মৃত চাঁদ আলীর ছেলে। স্ত্রীর করা মামলায় ১২ জুলাই পিবিআই অফিসে হাজির হয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করে সন্ধ্যায় বাড়ির উদ্দেশে মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রা করেন। যশোর ছাড়লেও বাড়িতে আর পৌঁছানো হয়নি তার। রাতেই রাস্তার পাশে মাঠের মধ্যে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করলেও আক্তারুলের মৃত্যু রহস্যও উদঘাটন হয়নি।

আরও পড়ুন: ‘ভাত খাইতে আহনের আগে আমার পোলারে মাইরালাইলো’

পরিবারের দাবি, আক্তারুলকে হত্যা করে মরদেহ ফেলে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে না পেরে আক্তারুলের মা রোকেয়া খাতুন বাদী হয়ে স্ত্রী শামীমা নাসরিনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২৬ জুলাই আদালতে মামলা করেন।

৭ জুলাই সন্ধ্যায় যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়ায় পরিবারের সদস্যদের লাঠির আঘাতে রুস্তুম আলী নামে এক ব্যক্তি নিহত হন বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশ সেই সময় ‘হৃদরোগে’ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে দাবি করে। যদিও পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন এটি ‘হত্যাকাণ্ড’। রুস্তম আলী মৃত্যুর রহস্যও উদঘাটন হয়নি।

একইদিন (৭ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে যশোর সদর উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের বাওড় থেকে পুলিশ নৈশপ্রহরী আব্দুর রহিম লস্করের মরদেহ উদ্ধার করে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও ঘটনাটি নিয়ে ‘জলঘোলা’র অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে ৯ জুলাই নিহতের স্ত্রী রাসেল, হাসেন, আনোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান ইসলাম, হাবিল ওরফে বার্মিজ, মামুন, মুছা, সুমন হোসেন, রাসেল, নুর ইসলাম আলো, আয়ূব আলী, মাসুমসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ঘটনায়ও আসামিদের আটক বা হত্যার রহস্য জানা যায়নি।

এছাড়াও গত ১৭ জুন যশোর সদর উপজেলার মোমিননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হাইপার মোল্যার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে প্রচার হলেও মৃত্যুরহস্য এখনও জানা যায়নি।

সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই যশোর সদর উপজেলার কিসমত রাজাপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মজনু খাঁর মেয়ে আমেনা খাতুনের (৮) রহস্যজনক মৃত্যু হয়। বাড়ির জ্বালানি রাখা ঘরের আঁড়ায় আমেনার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলায় আমেনার মা রোজিনা বেগমকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদও করে। শিশু আমেনার মৃত্যুরহস্যও জানা যায়নি।

আরও পড়ুন: বস্তায় মিললো মানুষের খুলি-হাড়, ৬ মাস পর রহস্য উদঘাটন

এসব হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, এভাবে জ্ঞাত ও অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধারের ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপনে সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। যা সংঘবদ্ধ চক্রগুলোকে উৎসাহিত করে। এগুলো সমাজের জন্য খারাপ ‘ইন্ডিকেটর’ হিসেবে কাজ করে। যারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চান তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটতে পারে। তিনি সমাজের সাধারণ মানুষের উদ্বেগ-আতংক দূর করতে ও আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।

অবশ্য পুলিশ প্রশাসন এসব হত্যাকাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছে। এগুলো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও দাবি তাদের।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) বেলাল হোসাইন বলেন, প্রতিটি ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে পুলিশ। কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটন ও আসামিদের আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। বাকি ঘটনার তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন। পারিবারিক ও জমির বিরোধ, পরকীয়াসহ বিভিন্ন কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে। তাই এগুলো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। বরং চাঞ্চল্যকর কয়েকটি ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করতে সক্ষম হওয়ায় অপরাধীরা দুর্বল হয়ে পড়বে।

এফএ/এএইচ/এমএস