লাম্পি স্কিন
সংক্রমণ বাড়লেও আক্রান্ত-মৃত্যুর তথ্য জানে না প্রাণিসম্পদ অফিস
নওগাঁয় বিভিন্ন এলাকায় লাম্পি স্কিন রোগের (এলএসডি) প্রকোপ বেড়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গরু মারা যাচ্ছে। এতে চরম আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা। তবে আতঙ্কিত না হয়ে খামারিদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, লাম্পি স্কিন রোগ আক্রান্ত হয়ে জেলার ১১টি উপজেলায় গত ১০দিনে ৭৭৯টি গরু চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়া টিকা দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার। খামারিদের সচেতন করতে ৫৮টি সভা হয়েছে। এছাড়া তিন হাজার লিফলেট বিতরণ হয়েছে। জেলায় প্রায় ২২ লাখ গবাদিপশু আছে।
আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার জন্য পশু হাসপাতালে নেওয়া হলে তার তথ্য প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে থাকে। তবে স্থানীয় পশু চিকিৎসক বা ভেটেরিনারি ওষুধের দোকানে চিকিৎসা নেওয়া হলে তার তথ্য প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে থাকে না। তবে জেলায় কী পরিমাণ গরু আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে তার কোনো তথ্য নেই এ দপ্তরে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাম্পি স্কিন ভাইরাসজনিত রোগ। এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। প্রথমে গরুর চামড়ার ওপরে টিউমার জাতীয় উপসর্গ ও বসন্তের মতো গুটি গুটি উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর দু-একদিনের মধ্যেই গরুর শরীর জুড়েই গুটি গুটি হয়ে ঘায়ে পরিণত হচ্ছে। এ সময় গরুর শরীরে ১০৪-১০৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার জ্বর দেখা দেয় এবং খাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে এবং ক্ষতস্থান পচন ধরে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পশু দুর্বল হয়ে ওজন কমে যায়, দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়।
সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের ঝিকরা গ্রামের আব্দুল হান্নান তার চার মাসের বাছুর লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার সদরে ভেটেরিনারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। আব্দুল হান্নান বলেন, হঠাৎ গত এক সপ্তাহ আগে শরীরে কয়েকটি গুটি (ফোলা) দেখা যায়। এরপর গ্রাম্য চিকিৎসকে দেখানোর পর কিছু ইনজেকশনসহ ওষুধ দেয়। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পশু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এপর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এলাকায় পাঁচ-ছয়টি গরু আক্রান্ত হয়েছে।
সদরের তিলোকপুর ইউনিয়নের ইকড়তাড়া গ্রামের দিবস মজুমদার বলেন, বাড়িতে ছয়টি গরু। এরমধ্যে তিনমাস ও চারমাস বয়সের দুটি বাছুর। দুই বাছুর আক্রান্ত হওয়ার পরই চিকিৎসা দিয়ে একটা সহজেই সুস্থ হয়ে গেছে। আরেকটি সুস্থ হওয়ার পথে। শুরুতে শরীরে গুটি গুটি ফোলা হয়ে যায়। এরপর চারদিন কোনো খাবার খেতে পারেনি। শুধু শুয়ে ছিল। খুবই কষ্ট পাচ্ছে। এ পর্যন্ত একটি গরুতে প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
একই গ্রামের গৃহবধূ আদরি বলেন, আশপাশের কয়েকটি গরুতে এসব অজানা রোগ হচ্ছে। অনেক কষ্ট পাচ্ছে গরুগুলো। অনেক টাকাও খরচ হচ্ছে। আমাদের গরুতেও যদি এ রোগ হয় এ নিয়ে আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। কিছু হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের বজলুর রশিদ বাবলু বলেন, আমার চারটি গরু। এরমধ্যে দেড়মাস বয়সের বাছুর আক্রান্ত হয়। সারা শরীর গুটি গুটি ছিল। কোনো কিছু খেতে পারতো না। ১২ দিনের মতো অসুস্থ পড়েছিল। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ হয়নি। শেষ সময়ে মুখ হা করে থাকত। শ্বাস নিতে পারতো না। নাক দিয়ে সর্দি (পানি) বের হতো। চারদিন আগে বাছুরটি মারা যায়। প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। আবার দ্বিতীয় বাছুরও আক্রান্ত হয়েছে দুদিন হলো। উপজেলা পশু হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। এখন আল্লাহ ভরসা।
বদলগাছী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নাজমুল হক জাগো নিউজকে বলেন, বসন্তের (পক্স) একটি জাত ভাইরাসের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াচ্ছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে অনেকেই স্থানীয়ভাবে গরুর চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে সুস্থ না হওয়ায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে আসছে। চিকিৎসা নিয়ে আক্রান্ত গরুগুলো সুস্থ হচ্ছে। যারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছে সেসব হয়তো মারাও যাচ্ছে। যা আমাদের জানা নেই।
নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মহির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় ব্যাপক হারে বিক্ষিপ্তভাবে লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পাওয়া গেছে ৭৭৯টি। যেখানে টিকা দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার। খামারিদের সচেতন করতে ৫৮টি সভা হয়েছে। এছাড়া তিন হাজার লিফলেট বিতরণ হয়েছে। যেকোনো বয়সের গরুতে এ রোগ হতে পারে। এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। চিকিৎসা দিলে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে যায়। আক্রান্ত গরুকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসকরা সচেতনতায় কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত গরু মারা যাওয়ার কোনো তথ্য নাই। বাছুর বেশি আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে সব বয়সী গরুতে হয়ে থাকে। বড় গরুর সহ্য ক্ষমতা বেশি থাকে।
এসজে/এএসএম