টাঙ্গাইল পৌরসভা
বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই শুরু হয়নি ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম
টাঙ্গাইলে দিনদিন ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০২ জন। দৈনিকই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ডেঙ্গুর ব্যাপক সংক্রমণ নিয়ে পৌরবাসী শঙ্কিত হলেও বেশিরভাগ ওয়ার্ডে এখনো পৌঁছায়নি কর্তৃপক্ষের ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম।
শহরে নামমাত্র ওষুধ ছিটানো, লিফলেট বিতরণ আর মাইকিংয়ে সীমাবদ্ধ বলে অভিযোগ তুলেছেন পৌরবাসী। ডেঙ্গু সংক্রমণরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
পৌরসভার মেয়রের বসবাসরত ১৫ নম্বর ওয়ার্ড ও প্যানেল মেয়রের ১ নম্বর ওয়ার্ডসহ অধিকাংশ বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে ডেঙ্গু প্রতিরোধের কোনো উদ্যোগ বা মশক নিধনের ওষুধ ছিটানো হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পৌরসভার দায়িত্বরতদের দাবি সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করাসহ ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
জানা যায়, ১৮৮৭ সালের ১ জুলাই স্থাপিত হয় টাঙ্গাইল পৌরসভা। বর্তমান আয়তন ২৯.৪৩ বর্গ কিলোমিটার। ১৮টি ওয়ার্ডের প্রথম শ্রেণীর এ পৌরসভার ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী এ পৌরসভার জনসংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪১২ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৬৪৪ জন।
সরেজমিনে শহরের পুরাতন কোর্ট মসজিদ, সবুর খান টাওয়ার সংলগ্ন মসজিদ, বেবিস্ট্যান্ড কবরস্থান মসজিদসহ একাধিক মসজিদ ঘুরে দেখা গেছে, মশার উপদ্রবে অজু করাসহ নামাজ পড়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে মসজিদগুলোর ভেতরে ব্যবহার করা হচ্ছে কয়েল। এছাড়া পাড়ামহল্লার প্রতিটি বাড়িতেই মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে ব্যবহার করা হচ্ছে কয়েল, মশা মারার ব্যাট, অ্যারোসলসহ নানা পদ্ধতি। এমনকি পৌরসভা নির্ধারিত পৌর উদ্যানের টিকাদান কেন্দ্রেও আছে মশার চরম উপদ্রব বলে অভিযোগ করেছেন দায়িত্বরতসহ টিকা নিতে আশা শিশুদের অভিভাবকরা।
অভিযোগ আছে, নাম মাত্র র্যালি, শহরে কিছু লিফলেট বিতরণ আর কিছু কিছু ড্রেনে ফগার মেশিন দিয়ে কেরোসিন ছিটানো ব্যতীত আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি পৌর কর্তৃপক্ষের। ডেঙ্গুর লার্ভা তদারকিতেও নেই কোনো উদ্যোগ। বাসা বাড়িতে যাচ্ছে না পৌরসভার নিয়োজিত পরিচ্ছন্নতা বিভাগে দায়িত্বরতরা।
এদিকে টাঙ্গাইল জেলায় ভয়াবহভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, জেলায় ডেঙ্গুতে সর্বমোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩০২ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৩৮ জন। বিভিন্ন হাসপাতাল চিকিৎসাধীন আছেন ৬৪ জন। এছাড়া একজন মারা যান।
পৌরসভার নির্ধারিত পৌর উদ্যানের টিকাদান কেন্দ্রে আশা অভিভাবক নাছিমা বলেন, পর্যাপ্ত মশা এখানে। এ টিকাদান কেন্দ্রটি অপরিষ্কার। জঙ্গল ভরপুর এর চারপাশ। এরই মধ্যে ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে টিকা নিতে আসছেন অভিভাবকরা। দ্রুত টিকাদান কেন্দ্রটি পরিষ্কার করাসহ মশা মারার ওষুধ ছিটানোর দাবি জানাচ্ছি।
১৫ নম্বর ওয়ার্ডের আশেকপুর এলাকার গৃহিণী নার্গিস বলেন, ডেঙ্গুর উপদ্রব বাড়লেও এ এলাকায় কোনো ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। এমনকি লিফলেট বা মাইকিং করে স্থানীয়দের সচেতনও করা হয়নি। দুবছর আগে কিছু কিছু মশা মরার ওষুধ ছিটানো হলেও এখন আর দেখা যায় না এ ধরনের কার্যক্রম।
একই এলাকার গৃহিণী ফাতেমা বলেন, এটা মেয়র সাহেবের এলাকা। মেয়র ও কাউন্সিলর হুমায়ুন সাহেব এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর কোনো খবর নেননি। এমনকি মশা মারার কোনো ওষুধও দেননি। দ্রুত মশার ওষুধ ছিটানোর দাবি জানাচ্ছি।
১ নম্বর ওয়ার্ডের হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী ছানোয়ার হোসেন বলেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকান করি। আমারসহ এ মার্কেটে আছে ৮৩টি দোকান। মার্কেটে শিশু, যুবক, তরুণী, নারী, পুরুষের বিভিন্ন ধরনের পোশাক বিক্রি হয় বলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে ক্রেতা সমাগম থাকে সব সময়ই। ডেঙ্গুর উপদ্রব বাড়লেও এ মার্কেটে এখন পর্যন্ত ছিটানো হয়নি কোনো ওষুধ।
মার্কেটের অপর ব্যবসায়ী হাবিব উল্লাহ বলেন, দিনে মশা কম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে দোকানে বসে থাকা যায় না। বাধ্য হয়ে কয়েল জ্বালিয়ে দোকান করতে হয়। দু-এক বছর আগে মার্কেটের আশপাশ দিয়ে মশা মরার ওষুধ ছিটানো হলেও ডেঙ্গুর উপদ্রব দেখা দেওয়ার পরও মার্কেটের ভেতর অথবা বাইরে কোনো ওষুধ ছিটানো হয়নি।
টাঙ্গাইল পৌরসভার সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা শুভাশীষ দাস জাগো নিউজকে বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণসহ চলছে মাইকিং। এছাড়া চলছে মশক নিধন ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম। সাধারণ মানুষ অভিযোগ করলেও সকাল-বিকেল পরিচালিত আমাদের কার্যক্রমের ছবিসহ নানা ধরনের প্রমাণ সংগ্রহে আছে।
তিনি আরও বলেন, এ কার্যক্রমে ৯টি ফগার আর ২৮টি স্প্রে মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। ৩ গ্রুপে ১৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছেন। মশক নিধনে ডিজিস ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি ড্রেন গুলোতে ছিটানো হচ্ছে কেরোসিন।
১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহেল ওয়ারেছ হুমায়ুন জাগো নিউজকে বলেন, ওয়ার্ডে জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ ওষুধ ছিটানো হয়েছে। এরপরও সে সব স্থানে ওষুধ ছিটানো হয়নি পর্যায়ক্রমে সেখানেও যাওয়া হবে।
প্যানেল মেয়র ও ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তানভীর হাসান ফেরদৌস নোমান জাগো নিউজকে বলেন, জন সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে হকার্স মার্কেটসহ যেসব স্থানে এখনো ওষুধ ছিটানো হয়নি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিভিল সার্জন ডা. মো. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, দেশব্যাপী ডেঙ্গুর ব্যাপকতা দেখা দিয়েছে। টাঙ্গাইলেও পড়েছে এর প্রভাব। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন সর্বোচ্চ প্রয়োজন সতর্কতা। দিনে ও রাতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোসহ ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি বাসা বাড়ির পরিত্যক্ত কোনো পাত্রে ৪৮ ঘণ্টার বেশি পানি জমে না থাকে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই মশারির ভেতর রেখে চিকিৎসা দিতে হবে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর জাগো নিউজকে বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জন সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণসহ শহরজুড়ে চলছে মাইকিং। ঢাকা থেকে ওষুধ এনে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্প্রে করা হচ্ছে। আশেকপুর পৌরসভার অংশ হলেও সেটি গ্রামাঞ্চল বলে সেখানে এখনো ডেঙ্গু প্রতিরোধের কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।
এসজে/জিকেএস