মুন্সিগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যা
‘ভাত খাইতে আহনের আগে আমার পোলারে মাইরালাইলো’
‘আমার বুকের মানিক সকালে না খাইয়া বের হইছে, দুপুরে আইয়া খাইবো। আমি আশায় আছিলাম, কিন্তু খাইতে আহনের আগেই আমার পোলারে মাইরালাইলো। পোলা আর খাইতে আইতে পারলো না।’ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ছুরিকাঘাতে নিহত ফজল হক দেওয়ানের মা মধুমালা বেগম। সন্তান হারিয়ে পাগল হয়ে পড়েন ষাটোর্ধ্ব এ নারী।
ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিহত ফজলের মরদেহ চরমুক্তারপুর এলাকায় আনা হয়। বিকেলেই স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে দাফন হয় তার। এ সময় মা মধুমালাসহ ফজলের স্ত্রী-সন্তান স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে নিহতের পরিবার।
সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে মধুমালা বেগম বলেন, আমার পোলার চার পোলা-মাইয়া। এখন ওগো কে দেখবো। মনে করছিলাম দুপুরে আইসা ভাত খাইবো। শুনি মোশারফে ওর বুকের মধ্যে চাক্কু ঢুকায় দিছে। ক্যামনে মাইরা ফেললো। আমি ওগো বিচার চাই, ওগো ফাঁসি চাই।
নিহতের বোন মাহমুদা বলেন, আমাদের একটাই দাবি ভাই হত্যার বিচার চাই। একদিন হইয়া গেলো পুলিশ এখনো আসামি ধরে নাই। যত দ্রুত সম্ভব আসামিকে গ্রেফতার করতে হইবো। এটাই আমাগো দাবি।
আরও পড়ুন: মুন্সিগঞ্জে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
জানা যায়, স্থানীয় নুরুল হক দেওয়ানের ছেলে ফজল গরু পালন ও আলুর ব্যবসা করতেন। তবে এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ মোশারফের সঙ্গে তার পূর্ব থেকেই দ্বন্দ্ব চলছিল। এছাড়া সোমবার ভগ্নিপতির দোকানে চাঁদা চাওয়ার প্রতিবাদ করাই কাল হয় তার।
ফজল ও মোশারফের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে মোশারফের সঙ্গে থাকা ধারালো ছুরি বের করে ফজল হকের পেটে ঢুকিয়ে দেন। গুরুতর আহত অবস্থায় ফজলকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরতর চিকিৎসক ঢাকায় রেফার করেন। বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে যায় অভিযুক্ত মোশারফ। এদিকে মৃত্যুর খবর পেয়ে এদিন নিহতের স্বজন ও স্থানীয় ক্ষুব্ধ জনতা মোশারফের বাড়িতে ও দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, সোমবার দুপুরে মারামারি ঘটনার পর ফজল পক্ষ মামলা করে। এদিন বিকেলে ফজলের মৃত্যুতে সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। আসামি মোশারফকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
আরফাত রায়হান সাকিব/এসজে/এমএস