ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কুষ্টিয়া

দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরীর জন্য আর কত অপেক্ষা

আল মামুন সাগর | কুষ্টিয়া | প্রকাশিত: ০৮:২৩ এএম, ২৫ জুলাই ২০২৩

তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত কুষ্টিয়ার কুমারখালী। দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে এ উপজেলায়। তবে জমি অধিগ্রহণসহ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আলোর মুখ দেখছে না এ উদ্যোগ। এতে শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

কুষ্টিয়া শহরের অদূরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংলগ্ন কুমারগাড়া এলাকায় ১৮ দশমিক ৪৯ একর জমির ওপর কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগর স্থাপন করা হয় ১৯৬৩ সালে। সেখানে ৮৭টি প্লটের মধ্যে তিনটি বিসিকের প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য রেখে বাকি ৮৪টি প্লট উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে সেখানে ছোট-বড় একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতা আর প্রতিকূলতার কারণে ব্যবসায় টিকে থাকতে না পেরে বিআরবি গ্রুপ ছাড়া অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন।

কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় ১০ দশমিক ২২ একর জায়গায় এরই মধ্যে বিআরবি গ্রুপের পাঁচটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের।

আরও পড়ুন: এক যুগ ধরেই শুধু তৎপরতা, বাস্তবায়নে নেই অগ্রগতি

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্পনগরীতে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য বরাদ্দযোগ্য কোনো জায়গা না থাকায় সেখানে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। নব্বইয়ের দশক থেকে কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে বিগত কয়েক দশকেও বিসিক শিল্পনগরীর পরিধি বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ফলে জায়গার অভাবে যেমন স্থাপন করা কলকারখানা সম্প্রসারণ হচ্ছে না, তেমনি নতুন নতুন কলকারখানাও গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কুমারখালীর জিলাপিতলায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য জায়গা নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরবর্তীসময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশের ডোবায় ১০০ দশমিক ৫৬ একর জায়গায় শিল্পনগরী করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: কৃষিনির্ভর নীলফামারীতে শিল্পায়নের ছোঁয়া

দেড় বছর আগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিসিকের এমডি জায়গা নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কুমারখালীতে আসেন। ফায়ার সার্ভিসের পেছনে প্রস্তাবিত জায়গাসহ আরও কয়েকটি জায়গা তাকে দেখানো হয়। বিসিকের পক্ষ থেকে বৃহৎ পরিসরে শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য প্রায় ৫০০ একর জায়গার প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়। তবে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশের ডোবায় ১০০ দশমিক ৫৬ একর জায়গায় দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার প্রস্তাবনাটি ভেস্তে যায়। কেননা ওই স্থানে ৫০০ একর জায়গাও নেই।

দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরীর জন্য আর কত অপেক্ষা

এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা ছাড়াও নানা কারণে প্রসিদ্ধ কুমারখালী উপজেলায় প্রথম দিকে দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য ১০০ দশমিক ৫৬ একর জায়গা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে বিসিকের নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী জায়গা নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়ায় বিষয়টি ঝুলে রয়েছে।

আরও পড়ুন: বন্ধ লাখো তাঁত কারখানা, শ্রমিকদের মানবেতর জীবন

কুষ্টিয়া বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশানুজ্জামান বলেন, কুষ্টিয়ায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনেক উদ্যোক্তা নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য তাদের কাছে জায়গা চেয়ে আবেদনও করেছেন। কিন্তু কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় কোনো জায়গা না থাকায় তাদের জায়গা বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বিসিকের কাছ থেকে নির্ধারিত জায়গা না পেয়ে অনেকেই অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র কলকারখানা গড়ে তুলছেন। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প কল-কারখানা গড়ে ওঠা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।

কুষ্টিয়া বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক বলেন, পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছরের ডিসেম্বরে কুমারখালীতে প্রায় ৫০০ একর জায়গার ওপরে মাল্টি সেক্টরিয়াল বিসিক শিল্পপার্ক গড়ে তোলার একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এ প্রস্তাবনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: কর্মসংস্থান কমলেও জিডিপিতে বেড়েছে শিল্পের অবদান, কৃষিতে উল্টো

কুমারখালী পৌরসভার মেয়র সামছুজ্জামান অরুণ জাগো নিউজকে বলেন, কুমারখালীতে আধুনিক বিসিক শিল্পনগরী গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। অর্থনৈতিক শক্তি দারুণভাবে চাঙা হবে। কুমারখালীসহ এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি, জটিলতা কাটিয়ে অবিলম্বে এখানে বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হোক।

দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরীর জন্য আর কত অপেক্ষা

কুমারখালী রানা টেক্সটাইলের পরিচালক ও ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, কুমারখালীতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা এখানকার ব্যবসায়ীদের প্রাণের দাবি। এখানে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে উঠলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। পাশাপাশি ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, কুমারখালী তাঁতশিল্পের জন্য জগদ্বিখ্যাত। সেই ধারাবাহিকতায় এখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল খোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রীয় পাটকল ইজারা নিয়ে টেক্সটাইল করার সুযোগ

তিনি বলেন, বিসিকের এমডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কুমারখালীতে এসে কয়েকটি জায়গা দেখে গেছেন। আশা করছি শিগগির কুমারখালীতে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের কাজ শুরু হবে।

১৯৭৮ সালে কুমারখালীতে শুধু তাঁতশিল্প নিয়ে বিসিক সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৮ সাল থেকে এটি বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের একটি শাখা হিসেবে টিকে রয়েছে।

এসআর/জেআইএম