অনাবৃষ্টিতে পাটের ফলন কম, জাগ দেওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তা
নওগাঁয় অনাবৃষ্টিতে ব্যাহত হয়েছে পাটের আবাদ। যথাসময়ে জমিতে বীজ বপন করা হলেও ঠিকমতো চারা গজায়নি। এতে পাটের ফলন কম হয়েছে। এছাড়া ডোবায় পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়েও বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছরে জেলায় ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৫২০ হেক্টর। আর গত পাঁচ বছরে জেলায় পাটের আবাদ কমেছে প্রায় ১ হাজার ৬৩০ হেক্টর।
জেলায় এবছর প্রায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৫ মণ পাট উৎপাদন হবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮৩ কোটি ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা। পলিথিন ব্যবহারের পরিবর্তে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ানো গেলে পরিবেশ যেমন রক্ষা পারে তেমনি পাটের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, আবাদ কমলেও গত দুই বছর চাষিরা পাটের ভালো দাম পেয়েছিলেন। এতে তারা বেশ খুশি ছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের অনাবৃষ্টি পাট চাষে ব্যাঘাত ঘটায়।
কৃষকরা বলছেন, অনেক স্বপ্ন ও আশা নিয়ে চলতি মৌসুমে তারা পাটচাষ শুরু করেছিলেন। জমিতে পাটের বীজ বপন করা হলেও ঠিকমতো চারা গজায়নি। আবার যেসব জমিতে চারা গজিয়েছে সেখানে গাছ হয়েছে পাতলা। এতে ফলন কম হয়েছে। তবে খরচ হয়েছে একই।
এদিকে, চলতি মৌসুমের পাট কাটা শুরু হয়েছে। উজানের ঢলে নদীতে পানি থাকলেও বৃষ্টি না হওয়ায় ডোবা, নালা ও পুকুরে পানি নেই। এতে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
চাষিরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে পাট আবাদে হালচাষ, বীজ, সার, কীটনাশক, পানি সেচ, নিড়ানি, কাটা, জাগ দেওয়া ও শ্রমিকসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়ে প্রায় ১৪-১৬ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ফলন হয় আট থেকে ১২ মণ। পাটের আবাদ কমে যাওয়ায় গত দুই বছর থেকে বেড়েছে দাম। প্রতিমণ পাট গত বছর ২৮০০ থেকে ৩০০০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে তারা লাভবান হয়েছিলেন। কিন্তু এবছর পাটের গাছ কম হওয়ায় ফলন কমে এসেছে।
সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের কৃষক পিন্টু হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। অনাবৃষ্টিতে গাছ বড় হতে পারেনি। আবার যেটুকু হয়েছে পাতলা। গতবার ২৫০০ টাকা মণ বিক্রি করা হয়েছে। জমি ফেলে না রেখে পাট লাগানো হয়েছে। এখন দাম ভালো না পেলে লোকসানে পড়তে হবে।
বদলগাছী উপজেলার পূর্ব বালুভরা গ্রামের খোরশেদ আলম মোল্লা বলেন, জমিতে আলু ছিল। এরপর চাষাবাদ করে পাটের বীজ বপন করা হলেও চারা গজায়নি। এতে প্রায় ১২০০ টাকা ক্ষতি হয়েছে। পরে আবার ওই জমিতে মিষ্টি কুমড়া লাগানো হয়েছে।
চকগোপাল গ্রামের চাষি শাহজাহান আলী বলেন, বৃষ্টি নেই বললেই চলে। উজানের ঢলে নদীতে পানি আছে। কিন্তু খালে বা ডোবায় পানি নেই। ডোবায় পানিতে পাট জাগ দেওয়া হলে ১২-১৫ দিনের মধ্যে ধোয়া যায়। নদীর পানিতে জাগ দিলে ভেসে চলে যাওয়ার ভয় থাকে। আবার ২৫-৩০ দিনের মতো সময় লাগে। পাট জাগ দেওয়ার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা থাকলে সুবিধা হয়।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ থেকে দুই হাজার কৃষকের প্রত্যেক এক কেজি করে বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন শাকসবজিসহ অন্য আবাদ বেশি হওয়ার কারণে পাটের আবাদ কিছুটা কমেছে।
তিনি বলেন, পাটের আবাদের জন্য বেশি বৃষ্টির দরকার হয় না। তবে এবছর বৃষ্টি কম হলেও পাটের উৎপাদন ব্যাহত হবে না বলে মনে করছেন তিনি।
এমআরআর/এএসএম