ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মুরগির বিষ্ঠায় মাছচাষ, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

এসকে রাসেল | প্রকাশিত: ০৩:৪৯ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২৩

মৎস্য খামারের ওপর মুরগির শেড। জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি ক্ষতিকর হওয়ায় মৎস্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের নিষেধ সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করে কিশোরগঞ্জে মৎস্য খামারের ওপর এভাবেই তৈরি করা হয়েছে মুরগির শেড। আর সেই মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি খাবার হিসেবে খাচ্ছে মাছ। এছাড়াও পানিতে পড়ে দূষিত হচ্ছে পানি। মাছে মিশছে অ্যামোনিয়া গ্যাসের মতো বিষাক্ত উপাদান। এসব ক্ষতিকর মাছ স্থানীয় বাজারসহ চলে যাচ্ছে ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায়। এসব মাছ খেয়ে দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

এভাবেই বিপজ্জনক মাছচাষ হচ্ছে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের মাথিয়া এলাকার ফুরুল বন্দে। কৃষিজমি খনন করে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক মৎস্য খামার। প্রতিটি মৎস্য খামারের উপর রয়েছে মুরগির শেড। বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি মাছ এখানেই উৎপাদন হয় বলে জানা গেছে। মুরগির জন্য অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য উপাদান ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে এখানে, যা বিষ্ঠা হয়ে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢোকে।

যদিও সংশ্লিষ্টদের দাবি, এখন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শে নিরাপদ ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগে মৎস্য খামারের জন্য গাজীপুর থেকে ট্রাকে করে মুরগির বিষ্ঠা আনা হতো মাছের খাবার হিসেবে। রাস্তার পাশে এগুলো ফেলে রাখায় ভোগান্তি পোহাতে হতো পথচারীদের। এসব বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও চালানো হয়। এরপর বিষ্ঠা আনা কমলেও জনস্বাস্থ্যের বিপদ কাটেনি। কারণ খামারিরাই মৎস্য খামারের ওপর মুরগির শেড বসিয়েছেন। ফলে বিষ্ঠা সরাসরি পানিতে পড়ছে। রাসায়নিকযুক্ত বিষ্ঠা খেয়ে বড় হচ্ছে মাছ। এসব মাছ খেয়ে ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।

তবে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির বিষয়টি মানতে নারাজ খামারিরা। চারজনের শেয়ারে মিজান পোল্ট্রি ফার্মের এক মালিক আব্দুর রাহিম জানান, তাদের ফার্মে দুই হাজার মুরগি রয়েছে। তার নিচেই মৎস্য খামারে ১০ হাজার পাঙ্গাশ ও অন্যান্য মাছ মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ মাছ চাষ করা হচ্ছে। এভাবে মুরগির শেডের নিচে মাছ চাষ করতে কেউ নিষেধ করেনি। মুরগির বিষ্ঠা খেয়ে মাছ দ্রুতই বড় হয়, তাই মাছ চাষ করছি।

মৎস্য খামার ও মুরগির শেডে কাজ করেন শ্রমিক রাব্বি। তিনি জানান, তার মালিকের মৎস্য খামারের ওপর দুইটি মুরগির শেড রয়েছে। এভাবে মৎস্য খামারের ওপর মুরগির শেড দিয়ে চাষ করলে কম খরচের বেশি মাছ উৎপাদন হয় তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এই এলাকাতে এভাবেই মুরগির শেডের নিচে মাছচাষ করা হচ্ছে। এই এলাকাতে প্রায় ৭০টি মুরগির শেড রয়েছে। প্রতিটি মুরগির শেডের নিচেই মাছচাষ করা হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম জানান, মাছের খামারের জন্য আলাদা খাবার তৈরি হচ্ছে। সেই খাবার মাছকে খাওয়ানো উচিত। মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ক্যানসারসহ নানা রকম দূরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে। এসব ব্যাধি সহসা প্রকাশ না পেলেও দীর্ঘদিন পর লক্ষণ দেখা দেয়।

দানাপাটুলি ইউনিয়নের মাথিয়া এলাকার ফুরুল বন্দে গিয়ে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জ-নিকলী সড়কের দুইপাশে সারি সারি মাস্য খামার। এর ওপর লম্বা মুরগির শেড তৈরি করা হয়েছে। অনেক মৎস্য খামারের ওপর একাধিক মুরগির শেড রয়েছে। কয়েকটি ফাঁকা থাকলেও অধিকাংশতেই ডিম পাড়া লেয়ার মুরগি পালন করা হচ্ছে।

এই এলাকার লোকজনের তথ্যমতে, মৎস্য খামারের ওপর ৭০টি মতো মুরগির শেড রয়েছে। এসব মৎস্য খামারের মাছ উপরের শেডের মুরগির বিষ্ঠা খেয়ে বড় হচ্ছে। এছাড়াও বাইরে থেকে আনা হচ্ছে মুরগির বিষ্ঠা।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, মৎস্য খামারিরা নিষেধ শুনতে চান না। হস্তক্ষেপ করলে বলেন, ব্যবসার ক্ষতি করা হচ্ছে। তারা গাজীপুর, ভালুকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে বিষ্ঠা আনেন। নিজেরাও ফিসারির উপরে মুরগির খামার করেছেন। মুরগির বিষ্ঠা পানিতে মিশে পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি করছে। এতে মাছের দেহ দূষিত হয়ে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে ফেলছে। পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হলে মাছ মারা যায়। এতে পরিবেশেও বিরূপ প্রভাব পড়ে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল বলেন, মৎস্য বিভাগ পরিদর্শন করলে এগুলো কিছুদিন নিয়ন্ত্রণে থাকে। পরে আগের জায়গায় ফিরে যায়। এ বিষয়ে মৎস্য এলাকায় মাইকিং করা হয়। তারপরও খামারিরা বিষয়টি মানছে না।

এফএ/এএসএম