বিদ্যালয়ের ভবন বিক্রি, প্রধানসহ দুই শিক্ষককে শোকজ
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো একটি ভবনের অর্ধেক অংশ বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ের বাকি অংশ খাড়া থাকলেও এর দরজা, জানালা, আসবাবপত্র, গ্রিলও বিক্রি করে দিয়েছেন ওই দুই শিক্ষক। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তাদের শোকজ করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার ও সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস।
তদন্ত কমিটি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল দুপুরে নিকলী উপজেলার দামপাড়া এলাকায় এক টন রডসহ একটি টমটম গাড়ি আটক করেন এলাকাবাসী। তবে এসব রড কার কাছ থেকে এনেছেন তার নাম বলতে পারেননি গাড়ির চালক। এলাকাবাসীর সন্দেহ হয় রডগুলো ইউনিয়নের ৫৩ নম্বর পূর্বহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযয়ের পুরোনো ভবনের। পরে ওই রড এলাকার মেম্বার ও চৌকিদাররা মিলে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে এনে তালাবদ্ধ করে রাখেন। এরপরই এলাকাবাসীর সামনে আসে বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবন বিক্রির বিষয়টি।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৩০ এপ্রিল শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসীর পক্ষে পূর্বহাটি গ্রামের আবু বাক্কার ছিদ্দিক নামের এক ব্যক্তি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুর দিকে বিদ্যালয়টি রেজিস্টার্ড বেসরকারি বিদ্যালয় ছিল। তখন সরকারি অর্থায়নে চার কক্ষের একটি ভবন নির্মিত হয়। ২০১৩ সালে এটি রেজিস্টার্ড বিদ্যালয় থেকে জাতীয়করণ করা হয়। তখন নতুন আরেকটি ভবন নির্মিত হয়। পরে নতুন ভবনে চলে শিক্ষা কার্যক্রম।
অভিযোগকারী আবু বাক্কার ছিদ্দিক জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার ও সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস সম্পর্কে আত্মীয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই তারা এ বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। আব্দুল জব্বার জান্নাতুল ফেরদৌসের মামাতো ভাই এবং ছোট বোন জামাই। তাদের দুজনেরই বাড়ি বিদ্যালয়ের ১০০ গজের মধ্যে। এ সুবাদে দীর্ঘদিন ধরেই তারা বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবনের রড, ইট, দরজা জানালা টেন্ডার ছাড়াই রাতের আঁধারে বিক্রি করে আসছিলেন। বিক্রি করা পুরোনো এসব মালামালের বাজার মূল্য ১০ লাখ টাকার মতো হবে। গত ২৫ এপ্রিল বিদ্যালয়ের পুরোনো এক টন রড বিক্রি করতে গেলে ভবন বিক্রির বিষয়টি সামনে আসে।
দামপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ও পূর্বহাটি গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবুল কালাম জানান, গত ২৫ এপ্রিল দুপুরে নিকলী উপজেলার দামপাড়া এলাকায় এক টন রডসহ একটি টমটম গাড়ি আটক করেন এলাকাবাসী। তবে গাড়ির চালক কার কাছ থেকে রড এনেছেন তার নাম বলতে পারেনি। তবে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয় রডগুলো ৫৩ নম্বর পূর্বহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযয়ের পুরোনো ভবনের। পরে তাকে খবর দিলে তিনিও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। রডগুলো আটকে দেন। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানান। পরে গ্রামপুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন ও তামিজ উদ্দিনের সহযোগিতায় রডগুলো ইউনিয়ন পরিষদের জিম্মায় বিদ্যালয় নিয়ে রাখা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার বলেন, ১৯৯৮ সালে বন্যায় এক রাতে বিদ্যালয়ের অর্ধেকটা ভেঙে যায়। তবে আমি ভবন বিক্রি করেছি এটা ঠিক না। রড চুরির বিষয়েও আমি কিছু জানি না।
সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘যে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত শত্রুতা আছে। বিদ্যালয়ে আসার পুরোনো রাস্তাটি সে জোরপূর্বক বন্ধ করে দিয়েছে। তার একটা মার্ডার মামলার সাক্ষী আমি। তার বিরুদ্ধে একটা নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে। পুকুরের মাছ চুরির মামলাও হয়েছে তার নামে। এ কারণে সে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। আমি রড বিক্রি করিনি।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অনুপম মাহমুদ রুবেল বলেন, বিদ্যালয়টি আমার বাবা প্রতিষ্ঠা করেছেন। জায়গা-জমিও আমরা দিয়েছি। আমি চাই না কারও কারণে বা কোনো পক্ষের কারণে বিদ্যালয়টির ক্ষতি হোক।
নিকলী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেন, গত ২৩ মে বিষয়টি তদন্ত করতে আমি বিদ্যালয়ে গিয়ে দুই পক্ষের কথা শুনেছি। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার বণিক বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের শোকজ করা হয়েছে। এখন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসকে রাসেল/এসআর/জেআইএম