শেষ হচ্ছে গুটি জাতের আম, আসছে ফজলি
দেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার বসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে। এই বাজারে কিছুদিন আমের দাম কম থাকলেও এখন আবার হু হু করে বড়ছে। বর্তমানে এখানকার সবচেয়ে সুস্বাদু ও জিআই স্বীকৃতিপ্রপ্ত খিরসাপাত ৫-৭ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সেটাও পরিমাণে অনেক কম। করণ এই সুস্বাদু জাতের আমের মৌসুম প্রায় শেষ। আমের পরিমাণ যত কমছে দাম ততোই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন দেশের বৃহত্তম কানসাট আম বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সারি সারি ভ্যান ও বাইসাইকেলে ডালিতে আম সাজিয়ে বসে আছেন চাষিরা। ক্রেতারা দরদাম করে আম কিনছেন। দেশসেরা খিরসাপাত, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, আম্রপালি ও নানা জাতের গুটি আম বিক্রি হচ্ছে এখানে। তবে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) খিরসাপাত আম।
একটি ভ্যানে দুই ডালি খিরসাপাত আম নিয়ে কানসাট বাজারে বিক্রি করতে এসেছেন উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের মুসলিমপুর গ্রামের রবিন আলী।
তিনি বলেন, প্রথম দিকে আমের দাম তেমন ছিল না। তাই গাছ থেকে আম নামাইনি। এখন আমের দাম বেড়েছে তাই আম পেড়ে বিক্রি করতে এসেছি। দাম বলছে ৭ হাজার টাকা মণ। তবে আমি দাম হাঁকাচ্ছি ৮ হাজার টাকা মণ। এজন্য এখনো বিক্রি হয়নি। এমন আমের দাম থাকলে লাভবান হবো এবার।
শ্যামপুর ইউনিয়নের আমচাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বাগানে এখনো প্রায় ৫ মণ খিরসাপাত আম রয়েছে। তবে সেগুলো আঁকারে ছোট। আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে এই আম। এরপর ফজলি আম পাড়া শুরু করবো। আর ল্যাংড়া আম গতকাল বিক্রি করে শেষ করেছি। আমার বাগানে আশ্বিনা জাতেরও আম রয়েছে। সেগুলো বাজারে আসবে আরও ১৫ দিন পর।
আব্বাস বাজার এলাকার আমচাষি সাদ্দাম বলেন, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, লক্ষভোগ, আম্রপালিসহ যে গুটি জাতের আম ছিল সেগুলো প্রায় শেষ। এখন বাজারে এসেছে ফজলি। আমার আজকে লক্ষণভোগ আম শেষ হলো। আর আগেই শেষ করেছি খিরসাপাত ও ল্যাংড়া।
হাজারবিঘী গ্রামের আমচাষি রহমান আলী বলেন, বর্তমানে খিরসাপাত আম বাজারে খুবই কম। কিন্তু দাম ভালো। ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এই সুস্বাদু আম। তবে সমস্যা হচ্ছে ৫৪ কেজিতে মণ ধরে আম কিনছেন আড়তদাররা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা।
কানসাট আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, বর্তমানে আমের দাম খুব ভালো। কারণ বাজারে আম কম। খিরসাপাত-ল্যাংড়া নেই বললেই চলে। তাই দাম বেশি। দ্রুতই শেষ হবে গুটি জাতের আমের মৌসুম। এখন বাজারে এসেছে ফজলি আম। বর্তমানে মান অনুযায়ী খিরসাপাত আম ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায়, ল্যাংড়া ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার, লক্ষণভোগ ১ থেকে ১৭০০ টাকা এবং নানা জাতের গুটি আম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এখন দৈনিক এই বাজারে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার আম বিক্রি হয়।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, অনেক আগে থেকেই আম উৎপাদনে শিবগঞ্জ সেরা। এবারও প্রচুর আম হয়েছে এ উপজেলায়। আর কানসাট আম বাজার এ উপজেলাতেই অবস্থিত। আম বাজার এখন জমজমাট। তবে শেষ হতে চলেছে গুটি জাতের সব সুস্বাদু আম।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, কানসাট আম বাজারের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের সবার সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। বাজারের আশপাশের এলাকা যানজটমুক্ত রাখতে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চাষিরা এখন শান্তিতে আম বিক্রি করতে পারছেন। আর দামও ভালো পাচ্ছেন।
এফএ/এমএস