ছড়িয়ে পড়ছে গরুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ, আতঙ্কে খামারি-কৃষক
কুড়িগ্রামে হঠাৎ করে বেড়েছে গবাদিপশুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি)। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের খামারি ও প্রান্তিক কৃষকেরা। পল্লী পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েও মিলছে না তেমন কোনো সমাধান। এদিকে গত বছরের তুলনায় এবার গরুর ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ফুলবাড়ি প্রাণিসম্পদ অফিস।
ফুলবাড়ি উপজেলার বড় ভিটা, নাওডাঙা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় কৃষকের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। এ রোগের প্রতিষেধক না থাকায় অনেকেই স্থানীয় কবিরাজ ও পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন।
কৃষক ও খামারিরা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। রোগাক্রান্ত গরু মারা যাচ্ছে। আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চললেও হচ্ছে না কোন উন্নতি। একই সঙ্গে এ রোগের চিকিৎসায় খরচ হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ি প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এবারে ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা অনেকটাই বেশি। তবে এখনো আক্রান্ত গরুর সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। উপজেলায় এক হাজার ৫৫৫টি খামারে সব মিলিয়ে গরুর সংখ্যা ৭৫ হাজার। এরমধ্যে মহিষ রয়েছে ৬৭৮টি। উপজেলার কয়েকটি ছোট খামারি ও কৃষকদের বাড়িতে কিছুসংখ্যক গরুর ল্যাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে রয়েছে।
আরও পড়ুন: ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২
ফুলবাড়ি উপজেলার বড়ভিটা গ্রামের যোগেন্দ্রনাথ বলেন, আমার তিনটি গরু আছে। সপ্তাহ খানেক আগে দুটি গরুর গায়ে ফোস্কা দেখা দেয়। এলার্জি হয়েছে ভেবে ডাক্তার ডাকি নাই। পরে গরুর মুখে ঘা হয়, পা ফুলে যায়। অবস্থা খারাপ হলে গ্রাম্য ডাক্তার ডাকি। ডাক্তার এসে দেখে বলে এ রোগের নাম ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ। গরু দুটির চিকিৎসায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ করেছি। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এরমধ্যে একটি গরু মারা গেছে। আমার মতো অনেকেই গবাদিপশুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ নিয়ে চরম আতঙ্কে আছেন।
শাহ বাজার এলাকার কৃষক মনছার আলী বলেন, আমাদের এলাকার প্রায় সবারই গরু রোগাক্রান্ত। আমরা গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। স্থানীয় পশু ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়েছি। তারপরেও আমার শেষ রক্ষা হয়নি। আমার গরুটি মারা গেছে। এখন পর্যন্ত এ রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কোন তৎপরতা দেখিনি।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষা ফেরুষা এলাকার খামারি নরেশ চন্দ্র রায় বলেন, আমার খামারে চারটি দুধের গাভীসহ মোট ছয়টি গরু আছে। গো-খাদ্যের দাম বাড়ার ফলে খামারের গরুগুলোকে পালন করতেই হিমসিম খাচ্ছি। তার উপর আবার ল্যাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। একটি গরু আক্রান্ত হয়েছে। খামারে এ রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে আমার পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
আরও পড়ুন: জলাবদ্ধতা দূর করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু
ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের কলোনি পাড়ার হাজেরা বেগম বলেন, গরুর গায়ে ফোস্কা দেখে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে এসে ডাক্তার জানান গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। শুধু আমি একা নই অনেকেই গরু নিয়ে হাসপাতালে এসেছে।
ফুলবাড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান কনক বলেন, উপজেলায় খামারিদের তুলনায় প্রান্তিক কৃষকদের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগ প্রতিরোধের কোন টিকা নেই। গরুর সঠিক পরিচর্যা ও বাসস্থান পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব। আমরা মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। আক্রান্ত গরুর সুচিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে দ্রুত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ফজলুল করিম ফারাজী/জেএস/এএসএম