সোনারগাঁ বনবিভাগ যেন মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১২টা বেজে ১৫ মিনিট। প্রবেশমুখে দেখা গেলো প্রধান ফটকের ছোট গেটটিও তালাবদ্ধ। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার এক নিরাপত্তাকর্মী বের হয়ে তালাটি খুলে দেন। ভেতরের প্রবেশ করে চারদিকে সুনসান নীরবতা। ওই নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া ভেতরে আর কারও সন্ধান পাওয়া গেলো না। সম্প্রতি একাধিকবার সরেজমিনে গিয়ে সোনারগাঁ উপজেলা বনবিভাগের কার্যালয়ে এমন চিত্র চোখে পড়ে।
জানা যায়, সোনারগাঁর মোঘরাপাড়া এলাকায় প্রায় দুই একর জায়গার ওপরে সামাজিক বনায়ন নার্সারি, বাগান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে এই বনবিভাগ প্রতিষ্ঠিত হলেও গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে অবকাঠামো। জনবল সংকটে দীর্ঘদিন ধরে মুখ থুবড়ে পড়েছে সেখানকার কার্যক্রম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাত্র চারজন নিয়ে চলছে সোনারগাঁ উপজেলা বনবিভাগের বর্তমান কার্যক্রম। এর মধ্যে একজন বন কর্মকর্তা, একজন বন বিভাগের নিরাপত্তার দায়িত্বে এবং বাকি দুজন মালি হিসেবে কর্মরত আছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় জায়গাটিতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। বনবিভাগের চারদিকে দেওয়াল থাকলেও কয়েকদিকে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাইরের লোকজন এসে সেখানে নানা অপকর্ম করার সুযোগ পাচ্ছে। স্থানটি নির্জন হওয়ায় বিকেলের পর থেকেই সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে।
এদিকে, বন বিভাগের কিছু অংশজুড়ে চারাগাছ রয়েছে। আর কর্মকর্তাদের থাকার জন্য নির্মাণ করা কোয়ার্টারগুলোর কিছু জানালা-দরজা চুরি হয়ে যাওয়ায় ভেতরে প্রবেশ করে অপরাধীরা নিরাপদে অপরাধ করার সুযোগ পাচ্ছে। এই বনবিভাগে ফলদ, বনজ ও ঔষধি বিভিন্ন গাছের চারা উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও এর কোনো সেবাই পাচ্ছে না সোনারগাঁবাসী। এছাড়া বনবিভাগের সামনে অসংখ্য অবৈধ দোকানপাট নির্মাণ হওয়ায় বোঝার কোনো উপায় নেই এখানে বনবিভাগের একটি কার্যালয় আছে।
হুমায়ুন কবির নামে সোনারগাঁয়ের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বিভিন্ন কাজে বনবিভাগে এসে কখনো কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় না। তাই এই বনবিভাগ আমাদের কোনো কাজে আসছে না। বরং এটি যেভাবে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এটি এখন আমাদের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আশরাফুল আলম নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সোনারগাঁয়ের মতো এত বড় একটি উপজেলায় মাত্র একজন বন কর্মকর্তা আছেন যা সত্যিই দুঃখজনক। তাই অতি দ্রুত বন বিভাগে জনবল বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
রফিকুল ইসলাম নামে এক বেসরকারি কলেজের শিক্ষক জানান, জনবল সংকটের সুযোগে অনেকেই নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলছেন। এছাড়া আগের মতো সোনারগাঁয়ে চারাগাছ লাগানোর বড় বড় কোনো উদ্যোগও চোখে পড়ে না। তাই বনবিভাগের দিকে সরকারের সুনজর কামনা করছি।
পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি মো. হোসাইন বলেন, সরকারের কাছে সোনারগাঁ বন বিভাগে জনবল বাড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি যে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এই বনবিভাগ করা হয়েছিল সেটির দিকেও যেন সরকার নজর দেয়। এছাড়া জনবল সংকটের ফলে বন বিভাগের চারাগাছগুলো বিক্রি করে সরকার লাভবান হচ্ছে না। এর বিপরীতে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া সোনারগাঁয়ের অনেক স্থানে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে তা নিয়ে বনবিভাগ গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। আর মাদকসেবীরা যেন এখানে কোনো অপরাধ করতে না পারে সেজন্য বনবিভাগের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
বনবিভাগের নিরাপত্তাকর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, কিছু অংশে সুরক্ষিত দেওয়াল ভেঙে যাওয়ায় মাদকসেবীরা এখানে প্রবেশ করতে পারে। আমি একা হওয়ায় তাদের ভয়ে কিছু বলতে পারি না। প্রায় সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাকে আতঙ্কে থাকতে হয়।
সোনারগাঁ উপজেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল মুমিন বলেন, নতুন করে সুরক্ষিত দেওয়াল নির্মাণ করা এবং জনবল বাড়ানোর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েছি। আশা করছি, খুব শিগগির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কার্যালয়ে না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো উপজেলায় আমার সেবা দিতে হয়। প্রায় সময় বিভিন্ন স্পটে আমার যেতে হয়। এর ফলে সবসময় বনবিভাগের কার্যালয়ে থাকা সম্ভব হয় না। তবে আমার সাধ্যমতো আমি সবাইকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।
এমআরআর/জেআইএম