খুলনার বাজারে ইলিশের আকাল
প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে সাগর ও সুন্দরবনে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা চলছে। ফলে ইলিশসহ কোনো ধরনের মাছ ধরতে পারছেন না জেলেরা। তবে রূপসা ও কাজিবাছা নদীতে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ফলে খুলনার বাজারে ইলিশ মাছের আকাল দেখা দিয়েছে।
জেলেরা মাঝে মধ্যে চুরি করে যে মাছ ধরছে তার দাম আকাশ ছোঁয়া। এক কেজি ওজনের মাছ কিনতে হলে গুনতে হবে আড়াই হাজার টাকা। অনেক সময় তাও মিলছে না। শুধু ইলিশ নয়, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং খুলনায় উৎপাদিত মাছ সরাসরি পদ্মাসেতু হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাওয়ায় অন্য মাছেরও আকাল চলছে খুলনার বাজারগুলোতে।
মৌসুমের সময় নগরীর টুটপাড়া জোড়াকল বাজারে সবচেয়ে বেশি ইলিশ বিক্রি করেন ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আড়তগুলো এমনিতেই মাছ পাওয়া দুষ্কর। মাঝে মধ্যে দু-চারটি ইলিশের দেখা মিললে সেগুলো নিতে প্রতিযোগিতা লেগে যায়। মৌসুমের সময় যে মাছ ৪০০-৬০০ টাকা কেজিতে পাওয়া যায় এখন সেই মাছ পাইকারি ২০০০-২২০০ টাকা। এত দাম দিয়ে মাছ কিনে খুচরা বাজারে দু-তিন দিন ধরে বিক্রি করতে হয়। ২৫০০ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না।
একই বাজারের আরেক মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ বলেন, এখন ইলিশ মাছ পাওয়া আর আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া সমান। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। জেলেরা চুরি করে মাছ ধরতে যায়। প্রতিনিয়ত তারা ধরা পড়ছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে যদি দু-একটি ইলিশ আনলে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা সেগুলো কিনতে পারে না।
আব্দুল্লাহ আরও বলেন, একদিকে নেই বৃষ্টি, এরওপর যে মাছ এ অঞ্চলে উৎপাদন হয় তা অধিক লাভের আশায় ঘের মালিকরা পাঠিয়ে দিচ্ছেন ঢাকায়। এখন তারা আর স্থানীয় বাজারে মাছ বিক্রি করতে চান না। ফলে খুলনার বাজারগুলোতে শুরু হয়েছে মাছের আকাল।
নগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারের ব্যবসায়ী হিরণ বলেন, যখন মৌসুম আসে তখন প্রতিদিন কয়েক মণ ইলিশ মাছ বিক্রি করি। কিন্তু এখন আমার দোকানে দু-তিন কেজি মাছও বিক্রি হয় না।
কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫০০ গ্রাম ওজনের মাছ কেউ ১৮০০-১৯০০ টাকা কেজি কিনতে চান না। কিন্তু আমরা তো বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে পারি না।
ময়লাপোতা সংলগ্ন ইকবাল নগর এলাকার বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদের পর বাজারে কয়েকদিন মাছের দাম কম থাকে। ইলিশ মাছও কম দামে বিক্রি হয়। কিন্তু এবার যেন সব মাছে আকাল লেগেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ, সুন্দরবনেও মাছ ধরা বন্ধ। তাহলে বাজারে মাছ আসবে কোথা থেকে। আশপাশের ঘের ও নদী থেকে যা আসে তাই বিক্রি করতে হয়।
নগরীর রূপসা মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী মেসার্স মদিনা ফিস ট্রেডার্সের মালিক মো. আবু মুছা বলেন, আজ আধা কেজি ওজনের ইলিশ পাইকারি ১৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ৬০০-৭০০ গ্রামের এক কেজি ইলিশ ২০০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রামের মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০০-২২০০ টাকা। ১ কেজি ১০০-২০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ ২৩০০-২৫০০ টাকায়।
রূপসা সাদামাছ আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্য আমিন মোল্লা বোয়িং জাগো নিউজকে বলেন, ২০ মে-২৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ। আরও ১৮-১৯ দিন পর জেলেরা যাবে মাছ ধরতে। তাদের ফিরে আসতে আরও ১০-১৫ দিন লাগবে। ফলে মাসের আগে আর ইলিশের দেখা পাওয়া যাবে না। এছাড়া সুন্দরবনে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছ ধরা নিষেধ।
এসজে/এমএস