ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মেহেরপুরে নলকূপে মিলছে না পানি, দিশেহারা এলাকাবাসী

আসিফ ইকবাল | মেহেরপুর | প্রকাশিত: ১১:৩৬ এএম, ৩০ জুন ২০২৩

মেহেরপুরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর টিউবওয়েল ও সেচ পাম্পগুলোতে সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। পানি সংকটে দুর্বিষহ এলাকাবাসীর জীবন। পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ।

এছাড়া গভীর নলকূপের জন্য আবেদন করেও মিলছে না কোনো সমাধান। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত এসব এলাকার সাধারণ মানুষ। তবে নতুন করে বেশকিছু গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

jagonews24

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে ৯ হাজার ৯১৩টি নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে কাজ করছে না ২ হাজার ২৩৯টি। ২০২২ থেকে এখন পর্যন্ত ৪৮৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।

পানির তীব্র সংকটে পড়া গ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার জয়পুর। এখানকার বেশিরভাগ বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলে পানি নেই। প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে মসজিদে স্থাপিত গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করেন গ্রামের লোকজন। এটিই এখন তাদের একমাত্র ভরসা। সারাদিন লাইন দিয়ে চলে পানি সংগ্রহ। নিজেদের বাড়ির টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ভূগর্ভে পানির লেয়ার নেমে যাওয়ায় এখন আর পানি পাওয়া যায় না টিউবওয়েলে।

জয়পুর গ্রামের মসজিদে পানি নিতে আসা গৃহিনী আম্বিয়া খাতুন জানান, গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। কেউ কেউ এক থেকে দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে এসে পানি সংগ্রহ করেন।

jagonews24

একই গ্রামের আরেক গৃহিনী বুলবুলি খাতুন বলেন, বাড়িতে যে টিউবওয়েল বসানো আছে তাতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গ্রামের মসজিদ থেকে পানি নিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। মসজিদের পানির জন্য লাইন নিতে হয় অনেক সময়। আবার লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ না থাকলে মসজিদেও পানি থাকছে না। কয়েকমাস ধরেই এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

শুধু জয়পুর নয়, জেলার আনন্দবাস, আমদহ, তারানগর, বাগোয়ান, রাজাপুর, শালিকা, বিশ্বনাথপুরসহ অনেক গ্রামেই নলকূপগুলো পড়ে রয়েছে অকেজো অবস্থায়। সমস্যা সমাধানে কেউ কেউ ৫০০ থেকে ৫৫০ ফুট নিচে নলকূপ স্থাপন করেও পাচ্ছেন না সুরাহা। আগে যেখানে ১০০ ফুটেই পাওয়া যেত পর্যাপ্ত পানি। দিন যত যাচ্ছে সংকট তত তীব্র হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

তারানগর গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, আগে টিউবওয়েলে ১০০ ফুটের নিচে পাইপ বসালেও ভরপুর পানি উঠত। কিন্তু এখন টিউবওয়েলটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে গভীর নলকূপের জন্য আবেদন করেছি। কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

সদর উপজেলার শালিকা গ্রামের তুহিন আলী বলেন, ছয় ফুট নিচে মাটি খুঁড়ে পাম্প বসিয়েছি। এতে মোটামুটি পানি উঠছে। তবে এমন আবহাওয়া বিরাজ করলে আর হয়তো পানি পাবো না।

বাগোয়ান গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম বলেন, পানির সংকটের কারণে আমরা কোনো কাজই ঠিকমতো করতে পারছি না। খাবার পানির সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে।

শুধু পাড়া-মহল্লায় নয়, মাঠে মাঠে কৃষকরাও ভুগছেন একই সমস্যায়। অধিকাংশ জমিতে ইঞ্জিনচালিত সেচপাম্পগুলোতে উঠছে না পর্যাপ্ত পানি। অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহারে বাড়ছে খরচ। এতে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা।

আনন্দবাস গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, মাঠের অর্ধেক সেচপাম্পে ঠিকমতো পানি উঠছে না। আগে এক বিঘা জমি সেচ দিতে এক ঘণ্টা সময় লাগলে এখন সময় লাগছে দ্বিগুণ। এছাড়া অনেক ইঞ্জিনে এখন আর পানি উঠছে না। বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের পাম্পগুলোতে পানি উঠলেও সেখানে খরচ বেশি।

jagonews24

আরেক কৃষক সোহানুর রহমান বলেন, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত মেশিনে আগে এক লিটার ডিজেলে যে পরিমাণ জমি সেচ দেওয়া যেত এখন তার অর্ধেক দেওয়া যাচ্ছে। এতে সময় ও খরচ পড়ছে প্রায় দ্বিগুণ।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, বৈশ্বিক আবহাওয়ার ফলে মাঠের ইঞ্জিনচালিত পাম্পগুলোতে এখন পানি কম হচ্ছে। আমরা সেচের পানির অভাব দূর করতে সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে জমিতে পানি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষিপণ্য উৎপাদনে এখন কোনো সমস্যা না হলেও ভবিষ্যতের জন্য পানি সংকট একটি বড় হুমকি হতে পারে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন বলেন, পরিবেশগত নানা কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কাছে অনেক গভীর নলকূপের আবেদন জমা রয়েছে। বরাদ্দ কম হওয়ায় আমরা এখন আর ব্যক্তিপর্যায়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করছি না। প্রতিটি মহল্লায় একটি করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে যেখান থেকে আশপাশের পরিবারগুলো পানি সংগ্রহ করবে। নতুন করে আরও ৫০০টি গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এমআরআর/জিকেএস