ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

এক সেতুর জন্য ৩০ হাজার মানুষের ২০ বছর অপেক্ষা

জাহিদ পাটোয়ারী | প্রকাশিত: ০৫:৫০ পিএম, ২৯ জুন ২০২৩

কুমিল্লার লালমাইতে ১০ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ রোগীদের নিয়ে স্বজনদের পড়তে হয় বিপাকে। এ সাঁকোতে প্রায় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে স্থানটিতে ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানানো হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের আলীশহর গ্রাম ও বাকই উত্তর ইউনিয়নের পড়াভাবকপাড়া গ্রামের সংযোগস্থল ডাকাতিয়া নদীর ওপরে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে রয়েছে বাঁশের এ সাঁকোটি। ব্রিজ নির্মিত হলে পাল্টে যাবে ভাবকপাড়া, পড়াভাবকপাড়া, শিকারিড়া, কচরাইশ, নূরপুর, শেরপুর, আলীশহর, রসুলপুর, জামাননগর ও আলোকদিয়া গ্রামের মানুষের জীবনমান।

jagonews24

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে বাঁশ সংগ্রহ করে ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকো। নির্মাণের পর থেকে প্রতিবছরই গ্রামবাসী বাঁশ সংগ্রহ করে নিজেরাই মেরামত করেন সাঁকোটি। বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন স্কুল-মাদরাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন বয়সের শত শত মানুষকে পারাপার হতে হয়। এতে প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

এছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারী, রোগী ও কৃষিপণ্য আনা নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। স্থানীয়দের দাবি, নির্বাচন আসলে জনপ্রতিনিধিরা শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। নির্বাচন শেষ হলে তাদের আর দেখা পাওয়া যায় না। বছরের পর বছর শুধু আশ্বাস দিয়ে গেলেও সেতু নির্মাণে কোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেননি কেউ। তাই সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ডাকাতিয়ার ওপর বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

৮০ বছরের বৃদ্ধ মো. নূর মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ২০-২৫ বছর ধরে বাঁশের সাঁকো দিয়ে আমরা চলাচল করছি। কতো দুর্ঘটনা ঘটে চোখের সামনে। ছোট-খাট হলেও সরকার একটা ব্রিজ নির্মাণ করে দিলে আমাদের কষ্ট কমে যেত। সহজেই হাট-বাজারে তরি-তরকারি নিয়ে বিক্রি করা যেত। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদেরও সুবিধা হতো।

jagonews24

পড়াভাবকপাড়া গ্রামের মো. রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ডাকাতিয়া নদীর দুইপাশেই স্কুল, মাদরাসা ও কলেজসহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী ও গ্রামের মুরব্বিদের কথা চিন্তা করে গ্রাম থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে নিজেদের উদ্যোগে সাঁকো তৈরি করা হয়। যা দিয়ে বর্তমানে চলাচল করা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া স্টিল হোক আর পাকা হোক একটি ব্রিজ নির্মাণ করা সময়ের দাবি।

ভাবকপাড়া গ্রামের কলেজশিক্ষক শাহাজাদা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ব্রিজ না থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট করে সাঁকো পার হতে হয়। বিশেষ করে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। শিশু শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে হলেও সরকারের উচিত একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দেওয়া।

আলীশহর গ্রামের মনতাজ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ৫-৬ গ্রামের মানুষের আসা যাওয়ার একমাত্র পথ এই সাঁকো। আমরা বহু কষ্টে আছি। নির্বাচন আসলে জনপ্রতিনিধিরা আমাদের কাছে ধরনা দেয় ব্রিজ করে দেবে বলে। তবে ২০-২৫ বছরে নির্বাচনের পর কাউকে দেখিনি অন্তত একটি বাঁশ দিয়ে আমাদের সহায়তা করতে। সরকারি অনুদানে যদি এখানে একটি ব্রিজ হয় আমাদের প্রত্যেকের জন্য উপকার হয়। আশা করি, সংশ্লিষ্টরা বিষয়টির প্রতি নজর দেবেন।

jagonews24

জামাননগর গ্রামের ব্যবসায়ী মো. মাসুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ভাবকপাড়া, পড়াভাবকপাড়া, শিকারিড়া ও রসুলপুরসহ কয়েকটি গ্রামের যদি কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয় তবে অনেকদূর ঘুরে কুমিল্লায় ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। ততক্ষণে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। এছাড়া স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রায় সাঁকো ভেঙে নদীতে পড়ে দুর্ঘটনায় শিকার হয়। গ্রামবাসী সবার পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একটাই আবেদন বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে যেন একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

বাকই উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমার ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে অবস্থিত নড়বড়ে সাঁকোটি। এরইমধ্যে আমি সরেজমিন সাঁকোটি পরিদর্শন করেছি। এর ওপর দিয়ে পাড়াভাবকপাড়া, শিকারিড়া, কচরাইশ, নূরপুর, শেরপুরসহ অন্তত ৮-১০টি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। সেতুর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ও উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামকে অবগত করেছি। আশা করছি, মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে লালমাই উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সাঁকোটি পরিদর্শন করে দেখেছি। এর ওপর দিয়ে বহু মানুষের চলাচল। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। জুনের পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।

এমআরআর/জিকেএস