ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘পাখি ভাই’ তারা মিয়া

নাসিম উদ্দিন | প্রকাশিত: ০৯:৪৪ এএম, ২৯ জুন ২০২৩

শখের বসে পাখি পালন করে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন জামালপুরের নোমান রেজা সুলতানি ওরফে তারা মিয়া (৩৫)। তার খামারে এখন ৫০-৬০ প্রজাতির সাত হাজারেরও বেশি পাখি ও কবুতর রয়েছে। প্রকারভেদ এক একটা পাখি ৫০০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। এতে মাসে আয় করছেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা। এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন ‘পাখি ভাই’ হিসেবে।

সদর উপজেলার দিগপাইত উপশহরের তিতপল্লা ইউনিয়নের সুলতান নগর গ্রামে কাঁচাপাকা রাস্তায় ঢুকে যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দেবেন পাখি ভাইয়ের বাড়ি। তিনি ওই এলাকার মৃত আবু রায়হান সুলতানির ছেলে।

আরও পড়ুন: বৃষ্টির পানি পান করে যে পাখি

একসময় ইরাকে থাকতেন তারা মিয়া। ইরাকের কুর্দিস্তানে অবস্থান করা অবস্থায় শখের বসে স্ত্রী সালমা বেগম ঘরের বারান্দায় তিন জোড়া কবুতর ও এক জোড়া পাখি পালন শুরু করেন। ধীরে ধীরে লাভের মুখ দেখতে থাকায় স্বামীকে দেশে চলে আসতে বলেন। পরে ৭-৮ বছরের প্রবাস জীবন শেষ করে স্ত্রী সালমা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালন শুরু করেন তারা মিয়া। ২০-৩০ হাজার টাকা মূলধন খাটিয়ে যুক্ত করেন আরও কিছু পাখি। সেই থেকে শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের।

এখন প্রায় ৪০ শতক জমির ওপরে পাঁচটি শেডে পাখি ও কবুতর পালন করছেন এ দম্পতি। খামারে ৫০ থেকে ৬০ প্রজাতির সাত হাজারেরও বেশি পাখি ও কবুতর রয়েছে। এর মধ্যে লুটিনো, কগাটেল, এক্সিবেশন বাজরিগার, জাপানিজ বাজরিগার, লুটিনো বাজরিগার, ক্লাসিক্যাল বাজরিগার, লাভ বার্ড, কাকাতুয়া, ময়না, জাইন কোনোর, জাবা, ডায়মন্ড ঘুঘুসহ পাখি উল্লেখযোগ্য। প্রকারভেদে প্রতি জোড়া পাখি বিক্রি করছেন ৫০০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়।

কবুতরের মধ্যে রয়েছে ব্ল্যাক বোম্বাই, কালো মুক্ষি, হোয়াইট বোম্বাই, জাহিন হোমার, বিউটি হোমার, গিয়া আউল, সাদা আউল, ড্যানিশ কিং, লাহোরি, সিলভার সিরাজী, লক্ষা ইত্যাদি। জাতভেদে প্রতি জোড়া কবুতর ১ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তারা মিয়া।

প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা মিয়া গড়ে তুলেছেন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। নাম দিয়েছেন ‘সুলতানি বার্ডস অ্যান্ড পিজন লফ্ট’। বেশিরভাগ পাখি বিক্রি হচ্ছে অনলাইনেই। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা এবং দর্শনার্থীরা আসেন তার বাড়িতে। অনেকে দেখতে এসে শখের বসে কিনে নিয়ে যান পাখি।

দেশের পাশাপাশি বিদেশেও বিক্রি হচ্ছে এসব পাখি। এর মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের হায়দ্রাবাদ প্রদেশে তার পাখির বড় একটি মার্কেট রয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে তারা মিয়ার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩০-৫০ লাখ টাকা। খামারে প্রতিদিন খাবার বাবদ খরচ হয় ২-৫ হাজার টাকা। এখন খামার থেকে প্রতি মাসে আয় করছেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা। তারা মিয়াকে অনুসরণ করে ওই এলাকার স্কুল ও কলেজপড়ুয়া এবং বেকার যুবকরা পাখির খামারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

আক্ষেপ নিয়ে তারা মিয়া বলেন, তিলে তিলে তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে খামারটি গড়ে তুলেছেন। অথচ জেলা-উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোনো সাহায্য- সহযোগিতা তারা পান না। প্রথমদিকে জাহাঙ্গীর নামের একজন তাদের খামার পরিদর্শনে এসেছিলেন। তারপর আর কোনোদিন কারও দেখা পাননি। ভ্যাক্সিনেশন থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ তিনি নিজেই করে থাকেন।

দিগপাইত উপশহর থেকে আলমগীর হোসেন বাচ্চু এবং ফারুক আহমেদ নামের দুজন এসেছিলেন কবুতর কিনতে। তাদের বাড়িতেও খামার রয়েছে। সেখানে তাদের প্রায় ১০ প্রজাতির কবুতর রয়েছে। মাঝে মধ্যে তারা এ এলাকায় ঘুরতে আসেন।

আলমগীর হোসেন ও ফারুক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, এক বছর আগে তারা মিয়ার কাছ থেকে কবুতর নিয়ে তারা খামার শুরু করেন। এখন তারা বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন। তবে খাবারের দাম বেশি হওয়ায় ইদানীং লোকসান হচ্ছে। আগে এক বস্তা খাবার ১৫০০-১৬০০ টাকায় কিনতেন। এখন সেই খাবার ২৫০০-৩০০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন: পরিযায়ী পাখি দেখতে যাবেন যেখানে

তারা মিয়ার কবুতর ও পাখির খামার দেখে এলাকার যুব সমাজকে যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের মাধ্যমে গৃহপালিত পশুপাখির ওপর প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন তিতপল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, তারা মিয়া একজন সফল উদ্যোক্তা। শুধু পাখি পালন করেই যে সফল হওয়া যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ তিনি। তাই এলাকার যুব সমাজকে তার এ কাজ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজে কিছু করার আহ্বান জানান ইউপি চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে জামালপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও) ডা. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, শুরু থেকেই তারা মিয়ার খামারে তারা যোগাযোগ রাখছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে সময়মতো পাখিদের ভ্যাকসিন প্রদানসহ সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র একজন কর্মকর্তা ওই খামারে গিয়েছিলেন। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সদর উপজেলাকে জিজ্ঞেস করেন। তিনি যতটুকু জানেন তারা মিয়ার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।

কিছুক্ষণ পর এ প্রতিবেদককে কল করে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উনি (তারা মিয়া) যে সেবা পাননি সেটাতো আমাকে কখনো জানানো হয়নি। যেহেতু তিনি সেবা পাননি, তাই আমরা তার খামার ভিজিট করবো।’

এসআর/আরএইচ/এএসএম