যেভাবে দিন কাটছে হায়েনার কামড়ে হাত হারানো শিশু সাঈদের
হায়েনার কামড়ে হাত হারানো শিশু সাঈদ আহম্মেদ আগে ডান হাতে খাবার খেত, বই খুলে পড়ার নামে জীবজন্তুর ছবি দেখত। দুই হাতে মোবাইলে কখনো গেম খেলতো। তবে তার সবই এখন স্মৃতি।
এখনো শিশুটি মনের ভুলে এসব করতে চায়। মোবাইলফোনে নিজের পুরোনো ভিডিও-ছবি দেখে আর ব্যান্ডেজ করা ডান হাতের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আশপাশের অন্য শিশুদের খেলতে দেখে তাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। শিশুটিকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে আশপাশের লোকজন। তবে বেশি লোকজন দেখলে ভয় পাচ্ছে শিশু সাইদ।
শুক্রবার (২৩ জুন) বিকেলে গাজীপুর মহানগরীর মোগরখাল এলাকার শিশুটির নানার বাসায় গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।
গত ৮ জুন মা-খালা ও নানা-নানির সঙ্গে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় যায় দুই বছরের শিশু সাঈদ। একপর্যায়ে খাঁচার কাছে গিয়ে ডান হাত ভেতরে ঢুকালে শিশুটির হাত কামড়ে নেয় হিংস্র হায়েনা।
শুক্রবার বিকেলে শিশুটির নানার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, কখনো কলম নিয়ে বাম হাতে আঁকাআঁকি করছে। মোবাইলফোনে নিজের পুরোনো ভিডিও দেখছে। আবার ক্ষণে ক্ষণে ব্যান্ডেজে মোড়ানো কনুইয়ের নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন ডান হাতের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে। শিশুটিকে প্রায় সারাক্ষণ আগলে রাখছেন মা শিউলী বেগম (২৩) ও মামা মিনহাজ ইসলাম।
শিউলী বেগম জানান, ১১ দিন চিকিৎসা শেষে গত সোমবার বিকেলে ছেলেকে ছাড়পত্র দেয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ছাড়া পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এসে ওঠেন সাঈদের নানা শরীফুল ইসলামের মোগরখাল এলাকার ভাড়া বাসায়। এখানে আসার পর ছেলের মানসিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে একসঙ্গে বেশি মানুষ দেখলে এখনো ভয় পাচ্ছে শিশুটি।
তিনি জানান, তার স্বামী সুমন মিয়ার জন্ম রংপুরের পীরগঞ্জে। নিজেদের জমি বা বাড়িঘর নেই। সাঈদের বাবা সুমন গাজীপুরের কোনাবাড়ি থানার জিরানী এলাকার একটি কারখানায় চাকরি করেন। সেখানেই তারা ভাড়া থাকেন। আগে তিনিও চাকরি করতেন। ছেলের কথা ভেবে ৯ মাস আগে চাকরি ছেড়ে দেন। চিড়িয়াখানায় গিয়ে ছেলেকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হতে হবে কল্পনাতেও ছিল না।
শিশু সাইদের মামা মিনহাজ ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার পর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা বাবদ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিল। তারা সাঈদের বাবাকে চিড়িয়াখানায় চাকরি দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিল। কী চাকরি, বেতন কত, কবে চাকরি দেবে কিছুই বলেনি। বাবাকে চাকরি দিলেও সাঈদের ভবিষ্যৎ তো অন্ধকার। আমরা সাঈদের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
শিশুটির বাবা সুমন মিয়া জানান, দুর্ঘটনার পর সাঈদের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এখন কেউ কোনো খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। তিনি ছেলের ভবিষ্যতের জন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
স্থানীয়রা জানান, একসময় হয়ত শিশুটির হাতের ক্ষত সেরে উঠবে। কিন্তু জীবনের বাকি সময় তাকে এক হাত ছাড়াই চলতে হবে। শিশুটির সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা উচিত।
গত ৮ জুন মা-খালা ও নানা-নানির সঙ্গে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় যায় দুই বছরের শিশু সাঈদ আহম্মেদ। একপর্যায়ে হায়েনার খাঁচায় গেলে শিশুটির হাত কামড়ে ধরলে হিংস্র প্রাণীটি। এসময় শিশুটিকে ছাড়িয়ে নিতে স্বজনরা আপ্রাণ চেষ্টা করলে তার কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়।
মো. আমিনুল ইসলাম/এমআরআর/এএসএম