সিলেট সিটি নির্বাচন
শেষ মুহূর্তে অনলাইন প্রচারণায় সরব প্রার্থীরা
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে ভোটযুদ্ধ বুধবার (২১ জুন)। এরই মধ্যে সোমবার মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা-প্রচারণা শেষ হয়েছে। প্রার্থী-সমর্থকরা মেলাচ্ছেন ভোটের হিসাব। নেই কান ফাটা মাইকের শব্দ। তবে মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থী-সমর্থকরা এখন সরব ব্যতিক্রমী এক প্রচারণায়। তারা অনলাইনে চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্টার ও প্রার্থীর ছবি পোস্ট করে চাওয়া হচ্ছে ভোট। ভিডিও বার্তাসহ নানা উপায়ে চলছে প্রচারণা। এ পোস্টে অনুসারীরা লাইক কমেন্ট করছেন। অনেকে আবার ওই পোস্টটি শেয়ার করে ভাইরাল করছেন। ফেসবুকের পাশাপাশি ইউটিউব-টুইটারেও চলছে প্রার্থী সমর্থকদের প্রচারণা।
এবারের সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আটজন। আর কাউন্সিলর পদে ৩৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যাদের মধ্যে ২৭৩ জন সাধারণ ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (নারী কাউন্সিলর) ৮৭ জন প্রার্থী আছেন। এ ৩৬৮ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটের আগের দিনও অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আট মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা) ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল) অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া অনেক কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও তাদের সমর্থকরাও অনলাইনে সরব উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নিজস্ব ফেসবুক আইডি ও ‘আমরার সিলেট’ নামে একটি পেজ থেকে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। পেজটিতে দেখা গেছে, ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সিলেটের নানা ইতিহাস ঐতিহ্য প্রকাশের মাধ্যমে ভোট চাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচনী গণসংযোগ ও সিলেট নিয়ে তার পরিকল্পনারও বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
আনোয়ারুজ্জামানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজ থেকে নির্বাচনী প্রচার চালানো হচ্ছে। সেখানে পুলিশি বাধা ও সরকার দলের প্রার্থী বিরুদ্ধে নানা অভিযোগসহ গণসংযোগের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীরাও আনুষ্ঠানিক প্রচারের শেষে অনলাইনকে প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ব্যতিক্রমী প্রচারণা শুরু থেকে চালাচ্ছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আব্দুল করিম চৌধুরী কিম।
সব প্রার্থী পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার ব্যবহার করে প্রচারণা চালালেও তিনি পরিবেশ বিধ্বংসী এ প্রচারণা থেকে বিরত ছিলেন। সবাই দল বেঁধে ৪০-৫০ জন কর্মসমর্থককে সঙ্গে নিয়ে ভোটারদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে প্রচারণা চালালেও এ ক্ষেত্রেও কিম ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি একজন অথবা দুজন সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন।
পাশাপাশি ফেসবুকে তার প্রচার-প্রচারণা ছিল লক্ষ্মণীয়। তার পক্ষে ভোট চেয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও অভিনেতা আব্দুন নূর তুষার, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্পাদক ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাওলানা এমদাদুল হক।
তাদের এ পৃথক ভিডিওবার্তা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী কিম তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে আপ দিচ্ছেন। হাজারো মানুষ সেই ভিডিওবার্তাগুলো দেখছেন আবার কেউ কেউ তার পক্ষে ভোট চেয়ে কমেন্ট করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন নির্বাচনী প্রচারের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। প্রায় সব মানুষই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তাই অনলাইনে নির্বাচনী প্রচারও অনেক বেশি কার্যকর। এ কারণে এর ব্যবহারও বাড়ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, গতানুগতিক প্রচারণা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। ভবিষ্যতে পরিবেশ-প্রতিবেশ বিনষ্টকারী ব্যাণার-পোস্টার সাটানো বন্ধ করে দিয়ে প্রচারণায় প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো এবং যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে যেভাবে লিফলেট ভোটারদের বাসা বাড়িতে প্রার্থীরা পাঠিয়ে দেন। সেখানে এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারে প্রার্থীদের নানা পরিকল্পনার কথা থাকে। এটাই তো হওয়া উচিত।
মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে মাঠে ২ হাজার ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। এছাড়া ৫২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত, ১০ ব্যাটেলিয়ান বিজিবি, ১৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ছয়টি রিজার্ভ ফোর্স এবং প্রত্যেক জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ফোর্স থাকবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনে আগে ২৭ ওয়ার্ড থাকলেও বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ড নেয়ে এখন মোট ৪২টি ওয়ার্ড। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া ভোটর আছেন ছয়জন।
২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সিলেটের সব ওয়ার্ডে এবারই প্রথম হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ।
এসএএমডি/এসজে/এমএস