সিসিক নির্বাচন
প্রচারণার শেষ দিনে হিসাবে ব্যস্ত প্রার্থীরা
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। সোমবার (১৯ জুন) মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে এসে দিনরাত এক করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান দুই মেয়র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শেষ নির্বাচনী জনসভা করছেন। আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জনসভা করবেন নগরের রেজিস্টারি মাঠে। আর জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল করবেন নগরের কোর্ট পয়েন্টে।
ভোট নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র এক দিন বাকি। ভোট নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের নানা সমীকরণ। জয়ের জন্য আলাদা আলাদা কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল।
তারা ভোটারদের মন জয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক বা ফ্যাক্টর কারা হবেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সম্প্রসারিত সিটি করপোরেশনের নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে ভোটাররাই এবার গড়ে দেবেন ভোটের প্রার্থক্য। কারণ এই ১৫ ওয়ার্ডের ভোটাররা এবারই প্রথম ভোট দেবেন সিটি নির্বাচনে।
এছাড়া সিসিকের প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটারই তরুণ। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোটারের বড় একটা অংশ এই তরুণদের যিনি নিজের দিকে টানতে পারবেন তিনিই হবেন সিলেটের নগরপিতা।
এছাড়া নিজেদের মধ্যে বিরোধিতা সৃষ্টি হলেও ভোটের ফল পাল্টে যেতে পারে। সুতরাং সেই বিষয়টিও মাথায় রাখছেন প্রার্থীরা।
এরইমধ্যে জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন উপলক্ষে সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবেন ৫২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। মাঠে থাকবে ১০ প্লাটুন বিজিবি। ২ হাজার ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি র্যাবের একাধিক স্ট্রাইকিং ফোর্স ও সাদা পোশাকে র্যাব-পুলিশের গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
সিসিকের ৪২টি ওয়ার্ডে ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সহযোগিতা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত দায়িত্ব পালন করবেন।
এরইমধ্যে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা মাঠে টহল দিচ্ছে। যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে কেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান করবেন তারা।
জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ইমরুল হাসান জাগো নিউজকে জানান, ভোট গ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগেই বন্ধ হবে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা। ১৯ জুন মধ্যরাত ১২টার পর থেকে সিসিকের ৪২টি ওয়ার্ডে জেলা প্রশাসনের ৪২টি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের টিম নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে, নির্বাচনী পরিবেশ রক্ষায় এবং বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কাজ করবে।
এছাড়া এর বাইরেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ১০টি টিম কাজ করবে। যাদের মধ্যে ওয়ার্ড ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দলের সঙ্গে এক প্লাটুন বিজিবি থাকবে। ১৯ তারিখের পরের তিন দিন ২০, ২১ ও ২২ জুন তারা মাঠে থাকবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জাগো নিউজকে জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন। মাঠে থাকবেন ৫২ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও তাদের সহযোগিতায় ১০ প্লাটুন বিজিবি নিয়োজিত থাকবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ জাগো নিউজকে বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে ১৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া সিসিকের ১৮টি ওয়ার্ডের সবগুলো কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৫৮টি কেন্দ্র সাধারণ (ঝুঁকিমুক্ত) বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ করতে ভোটের দিন এসএমপির পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভোটের দিন শুধু পুলিশই থাকবে ২ হাজার ৬ শতাধিক। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশের সহায়তায় র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে।
ভোটের মূল নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ থাকবে জানিয়ে এসএমপি কমিশনার বলেন, অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রগুলোর প্রতিটিতে দুইজন কর্মকর্তা ও চারজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে একজন কর্মকর্তা ও চারজন কনস্টেবল ও সাধারণ কেন্দ্রগুলোর প্রতিটিতে একজন কর্মকর্তা ও তিনজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, নগরে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ১ হাজার ৩৬৪টি।
মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। দীর্ঘ একমাস প্রচারণা শেষে দুজনই ভোটের হিসাব মেলাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাপা প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল দুজনই বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদি।
নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, লাঙ্গলের পক্ষে নগরে ব্যাপক গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। ভোটাররা লাঙ্গলে ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে প্রশাসনকে ব্যবহার করছে তাতে কতটুকু ভালো পরিবেশ থাকে তা দেখার বিষয়।
অপরদিকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ এবার ঐক্যবদ্ধ। স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। নৌকা উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির প্রতীক।
২০০২ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পঞ্চম বারের মতো হচ্ছে সিসিক নির্বাচন। সিলেটের সব ওয়ার্ডে এবারই প্রথম হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ। ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন থাকলেও বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে সিসিকে এখন মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৪২টি। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ ভোটার রয়েছেন ৬ জন।
সিসিক নির্বাচনে মোট কেন্দ্র ১৯০টি যেখানে স্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে ১ হাজার ৩৬৭টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে ৯৫টি।
এফএ/এমএস