চা দিবসের প্রধান অনুষ্ঠান শ্রীমঙ্গলে, শ্রমিকদের মাঝে উচ্ছ্বাস
তৃতীয়বারের মতো ৪ জুন পালিত হচ্ছে জাতীয় চা দিবস। তবে এবার দিবসটির প্রধান অনুষ্ঠান হবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ চা বোর্ড বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প’। দিবসটি পালন নিয়ে চা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চলছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯২টি চা বাগান রয়েছে। এখানে সবচেয়ে বেশি চা উৎপন্ন হয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলার শ্রীমঙ্গলে দিবসটির প্রধান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এলাকাজুড়ে ব্যানার-ফেস্টুনসহ সাজসজ্জার কাজ চলছে। অনুষ্ঠানের নির্ধারিত স্থান শ্রীমঙ্গল বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চায়ের কাপ সদৃশ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। তিন হাজার লোক বসার মতো প্যান্ডেল তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
কথা হয় শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিক নিরালা হাজরার সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, চা দিবস বলে একটা দিবস আছে আগে জানতাম না। এবার জেনেছি, মনে খুশি লাগছে। সুখ-দুঃখের কথা বলতে পারবো।
শ্রীমঙ্গল এম আর খান চা বাগানের শ্রমিক কৃষ্ণা চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, শ্রীমঙ্গলে চা দিবসের মিটিং হবে শুনে খুশি হয়েছি। আমাদের ডাকলে আমরা যাবো। আমাদের দাবির কথা তুলে ধরবো।
শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিক উজ্জ্বল হাজরা জাগো নিউজকে বলেন, অফিসে গিয়ে জানতে পারলাম রোববার চা দিবস পালন করা হবে। জেনে খুশি হয়েছি। শুনেছি সেখানে এক চা শ্রমিককে পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কারের সংখ্যা আরও বাড়ালে শ্রমিকরা উৎসাহিত হবে।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ-সম্পাদক শ্রমিক নেতা পরেশ কালেন্দি জাগো নিউজকে বলেন, ৫০ বছরে চা দিবস বলতে কিছুই ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪ জুন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দিনটিকে স্মরণ করে চা দিবস ঘোষণা করেছেন। মৌলভীবাজারে তৃতীয়বারের মতো চা দিবস পালিত হওয়ায় আমরা আনন্দিত।
বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন সিলেট শাখার চেয়ারম্যান ও শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার জি এম শিবলী জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তক্রমে শ্রীমঙ্গলে চা দিবস পালিত হচ্ছে। এ জেলায় সবচেয়ে বেশি চা বাগান রয়েছে। এখানে বেশি চা উৎপাদন হয়। শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো চা দিবস পালিত হবে এটা অত্যন্ত খুশির বিষয়। শ্রমিকরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। তারা কথা বলতে পারবে। তাদের মধ্যেও প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, মৌলভীবাজারে ৪৮ শতাংশ চা উৎপাদন হয়। চা শ্রমিকের সংখ্যাও এখানে অনেক বেশি। এ শিল্প একটি শ্রমকর্ম শিল্প। এর উৎপাদনের গুণগতমান নির্ভর করে শ্রমিকদের মাধ্যমে। চা সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আটজনকে পুরস্কৃত করা হবে। এবার সর্বোচ্চ পাতা চয়নকারী চট্টগ্রামের নেপচুন চা বাগানের এক নারী শ্রমিক। আর এই শ্রমিকদের অংশগ্রহণের জন্যই প্রধানমন্ত্রী স্থানীয়ভাবে দিবসটি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, চা শিল্পের রয়েছে গৌরবের ইতিহাস। সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় চা শিল্পের হারানো গৌরব আমরা ফিরে পাব। ২০২১ সালে ৯৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন কেজি রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছিল। এবছর ১০২ মিলিয়ন কেজি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তা অর্জন হবে। আমরা কেবিনেট থেকে মেগা প্ল্যান গ্রহণ করেছি, যা বাস্তবায়ন হলে ২০২৫ সালে চায়ের উৎপাদন হবে ২৪০ মিলিয়ন কেজি।
আব্দুল আজিজ/এমআরআর/জেআইএম