ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ধানের দামে হিসাব মিলছে না কৃষকের

জেলা প্রতিনিধি | নেত্রকোনা | প্রকাশিত: ০৬:২৯ পিএম, ২৯ মে ২০২৩

চলতি বোরো মৌসুমে হাওরাঞ্চলসহ পুরো জেলায় বোরোর বাম্পার ফলন হলেও ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। তাদের অভিযোগ উৎপাদিত ফসলের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে উৎপাদন খরচ মেলাতে পারছেন না তারা। সার, ডিজেল, বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। সরকার ধানের কেজি ৩০ টাকা নির্ধারণ করলেও তাতে তাদের উৎপাদন খরচই উঠবে না। স্থানীয় হাট-বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

নেত্রোকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাউসী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ৯৫০-১০৫০ টাকা দরে মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে।

ওই এলাকার কৃষক মাসুম মিয়া বলেন, ‘গিরস্তি করে হিসাব মেলে না। একমণ ধান বেচেও এক কেজি গরুর মাংস নিতে পারবো না। বাড়িতে মেহমান এসেছে। কিভাবে কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। জিনিসপত্রে যে দাম! সারা বছর কিভাবে চলবো। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা কিভাবে করাবো। দু’চোখে অন্ধকার দেখি।’

jagonews24

একই উপজেলার দুধকোড়া গ্রামের কৃষক শফিক মিয়া ধান বিক্রি করতে এসেছেন স্থানীয় ফকিরের বাজারে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন আর গিরস্তি করে লাভ নাই। তেলের দাম বাড়তি, বিদ্যুতের দাম বাড়তি, জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। ফসল ফলাতে গেলে যে সার-ডিজেল লাগে তার দামও বাড়তি। উৎপাদন খরচের সঙ্গে ধান বিক্রি করে হিসাব মিলে না। এক মণ ধান ফলাতে প্রায় ১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ করতে হয়েছে। বাজারে বেচতে গেলে হয় ৯৫০ টাকা। সরকার দাম দিচ্ছে ১২০০ টাকা। কিন্তু আমরাতো গুদামে ধান বেচতে পারি না। অনেক ঝামেলা।’

খালিয়াজুরী সদরের পিরানহাটি গ্রামের কৃষক মহসিন মিয়া বলেন, ‘দাম কম হওয়া সত্ত্বেও অনেক কৃষক ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ সংসারের প্রতিদিনের খরচ যোগাতে অর্থের প্রয়োজন। অনেকেই ঋণ করে চাষাবাদ করেন। সময়মতো পাওনাদারের ঋণ পরিশোধ করতে কম দামে ধান বিক্রি করে দিতে হয়।’

জেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকার বলেন, ‘সরকারের ধান কেনার সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে মিল মালিকরা কম দামে ধান কিনে গুদাম কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করেন। এ কারণে কৃষকরা সরকার নির্ধারিত মূল্য পান না। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তারা ঋণের কারণে হাট-বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন।’

jagonews24

এছাড়া সরকার ৭ মে থেকে ফসল কেনা শুরু করেছে। জেলা শহরে ১৫ মে ধান ক্রয় শুরু হয়েছে। কোনো কোনো উপজেলায় আবার এখনো শুরুই হয়নি। ঋণের চাপে তার আগে যেসব কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, তারা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনেক কম দাম পাচ্ছেন। ফলে লোকসানে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। বেশিরভাগ কৃষক ফড়িয়াদের কাছে কম মূল্যে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর নেত্রকোনায় বোরো মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অতিরিক্ত ২৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। জেলায় বোরো ফসল থেকে সম্ভাব্য ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬৩ মেট্রিক টন।

শুধুমাত্র হাওরে ৪০ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। এসব জমি থেকে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৫ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৭৪৯ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

jagonews24

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরে ধান ১৭৩৫ মেট্রিক টন, চাল ২৮ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন, বারহাট্টায় ধান ১১৯৩ মেট্রিক টন, চাল ৫৬৭৬ মেট্রিক টন, পূর্বধলায় ধান ১৮৪৮ মেট্রিক টন, চাল ১৪ হাজার ৫৪৭ মেট্রিক টন, মোহনগঞ্জে ধান ১৩৩৮ মেট্রিক টন, চাল ৪৩৭৯ মেট্রিক টন, কেন্দুয়ায় ধান ১৬৬৬ মেট্রিক টন, চাল ৪২৮০ মেট্রিক টন, দুর্গাপুরে ধান ১৫২২ মেট্রিক টন, চাল ১৫৪ মেট্রিক টন, মদনে ধান ১৪৭৬ মেট্রিক টন, চাল ১০২ মেট্রিক টন, আটপাড়ায় ধান ৯৮৬ মেট্রিক টন, চাল ১০৭৭ মেট্রিক টন, কলমাকান্দায় ধান ১৭০৫ মেট্রিক টন, চাল ৪৯ মেট্রিক টন ও খালিয়াজুরীতে ধান ১৭০৮ মেট্রিক টন ও চাল ৭৭ মেট্রিক টন ক্রয় করা হবে। জেলায় মোট ১৫ হাজার ১৭৭ মেট্রিক টন ধান ও ৬১ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন চাল সরকার নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করা হবে।

জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোয়েতাছেমুর রহমান বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ৩০ টাকা কেজি দরে ১৫ হাজার ১৭৭ মেট্রিক টন ধান ও ৪৪ টাকা কেজি দরে ৬১ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়েছে। কোনো রকম হয়রানি ছাড়াই কৃষকরা যাতে সহজেই গুদামে ধান সরবরাহ করতে পারেন সেজন্য কাজ করা হচ্ছে।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, গত ১৫ মে থেকে জেলায় ধান ক্রয় শুরু হয়েছে। নির্ধারিত নিয়মে নিবন্ধন করে কৃষকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন।

এইচ এম কামাল/এফএ/এমএস