লালমাই পাহাড়ে চায়ের অপার সম্ভাবনা
সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের পর এবার কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে চা চাষ। লালমাই পাহাড়ে লাল মাটিতে চা উৎপাদনে অপার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের বড় ধর্মপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে ‘মজুমদার চা বাগান’ নামে এই বাগানটি। তবে প্রয়োজন অনুসারে এই এলাকায় বৃষ্টি কম হওয়াকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে গভীর নলকূপের মাধ্যমে বাগানে পানির সরবরাহ করছেন শ্রমিকরা। চা বাগান দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন ছুটে আসছেন নানা বয়সের মানুষ।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে তারিকুল ইসলাম মজুমদার শ্রীমঙ্গল থেকে প্রথমে তিন হাজার চারা এনে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করেন। পরবর্তীতে তিনি আরও তিন হাজার চারা রোপণ করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি মোট ১১ হাজার চারা লাগিয়েছেন। বর্তমানে ‘মজুমদার চা বাগান’ পরিচর্যায় ৭ জন কর্মচারী রয়েছেন। তারা মাসে দু’বার এই বাগান থেকে চা সংগ্রহ করেন। এতে প্রতি মাসে এক হাজার কেজি চা পাতা সংগ্রহ হচ্ছে। তবে কারখানা না থাকায় এই পাতা এখনই বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে না। তপ্ত রোদে শুকিয়ে বস্তাবন্দি করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে পাতা।
মজুমদার চা বাগান দেখতে আসা রাসেল মাহমুদ নামে এক যুবক জাগো নিউজকে বলেন, চা বাগানের দৃশ্য দেখতে আমাদের সিলেট কিংবা শ্রীমঙ্গল যেতে হতো। এখন থেকে কুমিল্লাসহ দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের মানুষ কুমিল্লাতেই চা বাগান দেখতে পারবে। রসমালইয়ের কুমিল্লা এখন থেকে চায়ের জেলা হিসেবেও পরিচিতি পাবে। এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।
বাগানের মালিক তারিকুল ইসলাম মজুমদার জাগো নিউজকে জানান, দীর্ঘদিনের শখ ছিল একটি চা বাগানের। শখ পূরণে একসময় শ্রীমঙ্গলে গিয়েছেন চা বাগান কেনার জন্য। কিন্তু তাতেও পূরণ হয়নি তার স্বপ্ন। পরবর্তীতে তার বন্ধু শ্রীমঙ্গলের খাসিয়া সম্প্রদায়ের রাজা জি ডি সানের সহায়তায় লালমাই পাহাড়ে চা বাগানের যাত্রা শুরু করেন। শুরুতেই তিনি বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন। রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা একাধিকবার চারা উঠিয়ে ফেলে দিয়েছে। এছাড়া আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে চা বাগানে। তারপরও তিনি থেমে যাননি। অবিচল ছিলেন স্বপ্ন পূরণে।
তিনি জানান, বর্তমানে প্রায় দুই একর বাগানে ছোট-বড় ১১শো চারা রয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে ২০ একর জায়গায় চা চাষ করার। সে হিসাবে জমি প্রস্তুত করা হচ্ছে। নির্মাণ করা হচ্ছে পরিচর্যাকারীদের জন্য থাকার ঘরও।
তিনি আরও জানান, লালমাই পাহাড়ের লাল মাটিতে চা উৎপাদনে অপার সম্ভাবনা দেখছি। আশা করছি আল্লাহর রহমতে সফলতা পাবো। তবে এই ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা। তিনি মনে করেন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা নার্সারি থেকে অর্থের বিনিময়ে তাকে বিচি টু চা গাছ প্রদান করা হলে ভালো ফলন পাবেন। বর্তমানে তিনি শ্রীমঙ্গল থেকে প্রতি চারা ৪৫ টাকা দামে সংগ্রহ করছেন। এতে কিছু চারা খারাপ পড়ে। প্রথমে এটি বোঝা না গেলেও গাছ বড় হওয়ার পর তা বোঝা যায়।
চা বাগানের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক রাজু শিং জাগো নিউজকে বলেন, শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা বাগানে দীর্ঘদিন কাজ করায় আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বর্তমানে আমি ও আমার স্ত্রী দিপালী সিংসহ মোট ৭ জন এই বাগানে কাজ করছি। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে বাগানের পাতা সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি মাসে এক হাজার কেজি পাতা সংগ্রহ করা হয়। এটি খুব উন্নতমানের চা। বর্তমানে আরও নতুন চারা লাগানোর জন্য বীজতলা উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। লালমাই পাহাড়ে একদিন সিলেটের মতোই চা বাগান ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই প্রত্যাশা রাজু সিংয়ের।
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, লালমাই পাহাড়ের মাটি চা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এখানে ভালো মানের গ্রিন টি উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। চা বাগান কৃষি বিভাগের আওতায় পড়ে না। এটা চা বোর্ডের কাজ। তারপরও আমাদের পক্ষ থেকে যত ধরনের সহায়তা দরকার তারিকুল সাহেবকে আমরা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখানে বৃষ্টির পরিমাণ কম। বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে তিনি আরও ভালো করতে পারবেন। তবে এখন কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে তিনি বাগানে পানি দিচ্ছেন।
এফএ/এমএস