সোনারগাঁ জাদুঘর
লেক নাকি চাষের জমি!
‘এইখানে এক নদী ছিল, জানলো নাতো কেউ’ জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী পথিক নবীর এই গান শোনেননি এমন মানুষ এদেশে কমই রয়েছেন। গানটি কাল্পনিক অর্থে গেয়ে থাকলেও কণ্ঠশিল্পীর কল্পনাই যেন সত্যি হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ জাদুঘর লেকে। পানির অভাবে শুকিয়ে সুবিশাল লেকটির মাটি এখন ফেটে চৌচির। দেখলে বুঝার উপায় নেই এখানে এক সময় বিশাল লেক ছিল।
তবে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের দাবি, প্রচণ্ড খরার কারণে এবং পানির স্তর নিচে চলে যাওয়ায় লেকের অবস্থা এমন হয়েছে।
সোনারগাঁ জাদুঘরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণই ছিল এই লেক। দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো দর্শনার্থী এই লেকের সৌন্দর্যে মোহিত হতেন। কিন্তু লেক শুকিয়ে যে পরিস্থিতি ধারণ করেছে তা দেখে হতাশ জাদুঘরে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।
রোববার (২১ মে) দুপুরে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে (সোনারগাঁ জাদুঘর) সরেজমিনে গিয়ে লেকের এই বেহাল দশা চোখে পড়ে। দেখা যায়, পানির অভাবে লেকটি চাষের জমিতে পরিণত হয়েছে। পর্যটকদের বেড়ানোর অসংখ্য নৌকা অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। অথচ কয়েক মাস আগেও এই লেকের পানিতে রঙ-বেরঙের এসব নৌকায় দর্শনার্থীরা টিকিট কেটে ঘুরতেন। আবার অনেকেই বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এই লেকে নৌ-বিহারের আয়োজন করতেন। পাশাপাশি অনেক শখের মাছ শিকারী এই লেকে মাছ ধরতেন। সবমিলিয়ে সোনারগাঁ জাদুঘরে আসা দর্শনার্থীরা লেকের মনোরম সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতেন।
সোনারগাঁ জাদুঘরে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক বিভিন্ন স্থান থেকে এখানকার পরিবেশ উপভোগ করতে আসেন। কিন্তু বর্তমানে লেকের এই দুর্দশার কারণে তারা এই নির্মল আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, ১৫০ বিঘা আয়তনের এই ফাউন্ডেশনে দুটি পুকুর ও একটি সুবিশাল লেক রয়েছে। এখানে আসা দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে পারেন সেজন্য লেকের চারপাশে অসংখ্য প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করা হয়। পাশাপাশি লেকটিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছচাষ করা হয়। তবে বর্তমানে লেকের দৈন্য অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অসংখ্য পর্যটক।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে সোনারগাঁ জাদুঘরে ঘুরতে এসেছেন জুবায়ের হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। কথা হলে তিনি জানান, সোনারগাঁ জাদুঘরের সৌন্দর্য্য অবলোকন করতেই পরিবার নিয়ে আমার এখানে ছুটে আসা। আমার ছোট ছেলে রাফিনের মাছ শিকার করার খুব শখ। কিন্তু লেকের অবস্থা দেখে আমরা সবাই হতাশ। ৪ মাস আগেও এখানে একবার আসা হয়েছিল। তখনও লেকে স্বচ্ছ পানি টলমল করছিল। আগে জানলে এখানে আসা হতো না।
একই ক্ষোভ প্রকাশ করে এক দম্পতি জানান, ভেবেছিলাম সারাদিন লেকে নৌকায় ঘুরে লেকের চারপাশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করবো। কিন্তু লেকের দুর্দশা আমাদের যেমন হতাশ করেছে ঠিক তেমনি জাদুঘরের সৌন্দর্য্যহানি করেছে। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত অতি দ্রুত লেকে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে লেকের সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনা।
বিল্লাল হোসেন নামে সোনারগাঁয়ের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, সোনারগাঁ জাদুঘর দেশের ঐতিহাসিক এক দর্শনীয় স্থান। কিন্তু জাদুঘরের লেকের এই বেহাল দশা সবাইকে হতাশ করছে। একসময় এই লেকটি পানিতে টুইটম্বুর থাকতো এবং লেকে নানা প্রজাতির মাছ ছিল। লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উচিত ছিল লেকটি রক্ষা করতে আগে থেকেই বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার। দ্রুত এ লেক খনন করে আবার এর প্রকৃত রূপ ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে এখানকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক রবিউল ইসলাম জানান, প্রচণ্ড খরার কারণে এবং পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় লেকের পানি শুকিয়ে গেছে। পাশাপাশি প্রতিবছর এই সময়টায় লেকের পানি কমই থাকে। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় লেকটি একেবারে শুকিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, লেকের পানির পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য মেঘনা নদীর সঙ্গে এটিকে সংযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু যে পথ দিয়ে এতদিন লেকে পানি আসতো ওই পথটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মেঘনা নদী থেকে এখন পর্যাপ্ত পানি লেকে আসতে পারছে না। তাই জাদুঘরের লেকে পানি জমানোর জন্য আমাদের আপাতত বৃষ্টির উপরই নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে।
তবে আমরা এই সমস্যাটি সমাধান করার জন্য কয়েকটি পরিকল্পনা নিয়েছি। আমরা লেকটি খনন করার জন্য এবং লেকে পানি জমানোর জন্য ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেয়ে গেলেই আমরা এ কাজ শুরু করে দেবো। আশা করছি, এইসব উদ্যোগের ফলে আবারো লেকের সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনতে পারবো।
এফএ/জিকেএস