সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক সেবা: প্রচারণার অভাবে সাড়া নেই
জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে নওগাঁর সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করা হয়েছে ‘বৈকালিক চিকিৎসাসেবা’। এ সেবার মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে স্বল্প খরচে সেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন জেলার সীমান্তবর্তীর বাসিন্দারা। তবে এ সেবার কার্যক্রমটি সাড়া জাগানোর জন্য আরও প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন। সরকারি হাসপাতালে এ সেবা চালু হওয়ায় চিকিৎসা খরচ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে বলে মনে করছেন অনেকে।
জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে একটি জেলা হাসপাতাল ও চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। গত ৩০ মার্চ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে নওগাঁ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
সরকারি ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে চলে ৬টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিকেল অফিসাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন। চেম্বারে ডিউটিতে একজন অধ্যাপকের ফি ৫০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপকের ফি ৪০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপকের ফি ৩০০ টাকা এবং এমবিবিএস/বিডিএস ও সমমানের চিকিৎসকদের ফি ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা শহর থেকে সীমান্তবর্তী বরেন্দ্র ভূমি সাপাহার উপজেলার দুরুত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ উপজেলার মানুষ এখনো অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। ভালো সেবা হলে নওগাঁ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল অথবা রাজশাহী বা বগুড়ায় যেতে হবে। এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে হলে জেলা শহর বা জেলার বাইরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার বা বাইরের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা খরচ অনেকটাই বেশি। তবে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু হওয়ায় উপকার পাওয়া শুরু করেছে উপজেলাবাসী।
সরেজমিন মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বৈকালিক চিকিৎসাসেবার হালচাল দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছিলেন এ প্রতিবেদক। এদিন দায়িত্বে ছিলেন মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আলমগীর কবীর। বিকেল ৪টার দিকে রেহেনা বেগম নামে এক মহিলা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসছিলেন। এ সময় জরুরি বিভাগে সেবা নিতে আসা অনেকের সঙ্গেই কথা হয়। স্বল্প ফিতে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বৈকালিক চিকিৎসা দেন এ বিষয়ে অনেকেই জানেন না। তবে যারা বৈকালিক চিকিৎসা বিষয়ে জানেন তারা চিকিৎসা নিয়ে উপকৃত হয়েছেন।
উপজেলার ইলিমপুর গ্রামের গৃহবধূ রেহেনা বেগম বলেন, হাসপাতালের বৈকালিক চিকিৎসার বিষয়ে সামাজিক মাধ্যম ও লোকমুখে শুনেছি। বাইরে যদি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানো হয় অনেক সিরিয়াল দিতে হয় এবং ফি বেশি লাগে। বৈকালিক চিকিৎসায় স্বল্প ফিতে সহজেই নিরিবিলি পরিবেশে ডাক্তার দেখাতে পেরেছি। সেবা ভালো পেয়েছি, সুবিধা হয়েছে।
বৈকালিক চিকিৎসায় চিকিৎসকদের সহকারী আছিয়া বেগম। তিনি বলেন, রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। কোন দিন কোন ডাক্তার সেবা দেবেন অনেকেই ফোন করে জানতে চান। সে অনুযায়ী রোগীরা খোঁজখবর নিয়ে আসছেন।
উপজেলা সদরের গুডাউনপাড়া এলাকার আসাদুজ্জামান আসাদ জরুরি বিভাগে আসছিলেন। হাসপাতাল থেকে তার বাসার দুরুত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। তিনি বলেন, হাসপাতালে বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়ার কথা জানি। তবে হাসপাতালে স্বল্প ফিতে (টাকা নিয়ে) রোগী দেখা হয় এমন বিষয় আমার জানা নেই। যদি স্বল্প ফিতে রোগী দেখানো হয় সবার জন্যই সুবিধা হয়। মানুষ আর বাইরের ক্লিনিকে বা ডাক্তারের চেম্বারে বেশি ফি দিয়ে না দেখিয়ে হাসপাতালে দেখাবে।
হাসপাতালের প্রধান ফটকের পাশে সাদিয়া ফার্মেসির স্বত্তাধিকারী জালাল উদ্দিন বলেন, বৈকালিক সেবা চালু হয়ে মানুষের সুবিধা হয়েছে। স্বল্প টাকায় মানুষ এখন সেবা পাচ্ছে। যারা বোঝে তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। যারা এখনো বিষয়টি বুঝতে পারেনি তারা বাইরে চিকিৎসক দেখাচ্ছেন। এছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালে হয়। এটা নিয়ে বেশি বেশি প্রচার-প্রচারণা করা দরকার।
মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আলমগীর কবীর বলেন, বহির্বিভাগে রোগীর ভিড় হয়। যার কারণে রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলতে পারেন না। বৈকালিক চিকিৎসাসেবায় রোগীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আর সেবার মনমানসিকতা নিয়ে আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুহুল আমিন বলেন, হাসপাতালে বহির্বিভাগে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এছাড়া জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক সেবা চলে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের আরও কাছে পৌঁছে দিতে সাতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। জনবল সংকটের মধ্য দিয়ে আমরা সেবার কার্যক্রম চালিয় যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বৈকালিক চিকিৎসাসেবার বিষয়ে অনেকে অবগত না থাকায় শুরুতে রোগী কম আসতো। তবে বর্তমানে প্রচার-প্রচারণা থাকায় স্বল্প ফিতে এ সেবা নিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা স্বল্প খরচে হাসপাতালে দেওয়া হয়ে থাকে। বলা যায় নতুন ধারণা হিসেবে ক্রমবর্ধমান ভালো সেবা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদী।
এএএল/এমআরএম